‘হা-শো’র কমেডিয়ান হৃদয়ের গল্প
গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত || রাইজিংবিডি.কম
শৈশবে খুবই দুষ্টু প্রকৃতির ছিল হৃদয়। কথায় আছে, ছোটবেলায় যারা দুষ্টু থাকে, তারা বড় হয়ে ভদ্র হয়ে যায়। তবে, এই কথার পুরো উল্টো ঘটেছে হৃদয়ের সঙ্গে। মানুষের সঙ্গে দুষ্টুমি করে হাসানোর দায়িত্ব নিয়েছে হৃদয়।
বর্তমানে সে সিদ্ধেশ্বরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়াশোনা করছে। বাংলাদেশে একমাত্র কমেডিয়ান শো ‘হা-শো’র সিজন ফাইভে পঞ্চম স্থান অধিকার করে মোহাম্মদ হৃদয়। তাকে নিয়ে লিখেছে গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত।
প্রাইমারি স্কুলে নামের পাশে ভালো ছাত্রের উপাধি ছিল, আস্তে আস্তে সেই উপাধি সরতে থাকে। দুষ্টুমির জন্য স্যারদের কাছ থেকে প্রায় সময়ই বেতের বাড়ি খাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে হৃদয়ের। নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন স্যারদের উৎসাহতে এই দুষ্টুমিটাই স্টেজে উঠে করা শুরু করলো হৃদয়। স্কুলে থাকাকালীন থেকেই বাংলাভিশনে প্রতি বুধ ও শুক্রবারে নিয়মিত মানুষকে হাসানোর জন্য শো করতো সে। এছাড়াও বিটিভি, বৈশাখী টিভিতেও কাজ করা হয়েছে নানা অনুষ্ঠানে।
পড়ালেখার পাশাপাশি ভিন্ন কিছু করার চিন্তা আসেনি তার। তবে, এ চিন্তা যিনি আনিয়েছেন, তিনি হচ্ছেন আবু হেনা রনি হৃদয়ের কাছের বড় ভাই।
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় শ্রীপুর থানার ওসি সাহেবের মাধ্যমে পরিচয় হয় এই অসম্ভব বড় মনের মানুষটার সঙ্গে জানালো হৃদয়। প্রথমে শুধু দেখা করা আর ছবি তোলার উদ্দেশ্যে গিয়েছিল তার সামনে হৃদয়। প্রথম দেখাতেই তিনি বলেছিলেন, তুমি কি আমাদের মতো করে জোকস বলতে পারবে? এই প্রশ্ন শুনে দুষ্টু হৃদয় এক কথায় উত্তর দেয় আমি পারবো।
শুরুটা হয় মাগুরাতে মার্সেল কোম্পানির একটা শো রুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। মাগুরার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে প্রায় পঞ্চাশ হাজার দর্শকের সামনে আবু হেনা রনি মাইক্রোফোন তুলে দেন হৃদয়ের হাতে। সেদিন থেকে যাত্রা শুরু, আজও সেই মাইক্রোফোনটাকেই আঁকড়ে ধরে সবাইকে হাসিয়ে যাচ্ছে কমেডিয়ান হৃদয়।
বাংলাদেশে একমাত্র কমেডিয়ান ভিত্তিক অনুষ্ঠান হা শো। হা শো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার নানা অভিজ্ঞতা রয়েছে হৃদয়ের, শোনা যাক তার মুখ থেকেই।
তিনি বলেন, আমি ২০১৫ সালে ‘হা-শো’ সিজন থ্রির অডিশন দিয়েছিলাম খুলনাতে। আমার মন বলেছিল আমি যথেষ্ট ভালো করেছি, কিন্তু আমি চান্স পাইনি। তারপর ২০১৭ সালে ‘হা-শো’ সিজন ফোরের অডিশন দিয়েছিলাম খুলনাতেই, সেখানেও আমার মন বলেছিল আমি যথেষ্ট ভালো করেছি, কিন্তু চান্স পাইনি। আমি কিন্তু ভেঙে পড়িনি।
এইবার ২০১৯ সালে এসে আমি আবার ‘হা-শো’ সিজন ফাইভের অডিশন দিয়েছিলাম খুলনাতেই, কিন্তু এবারও ‘চান্স পাইনি’, ওয়েটিংয়ে ছিলাম। সেখান থেকে ডাক পেলাম ৪০ জনের ৪০ নম্বর ব্যক্তি হিসেবে। পরিশেষে হা-শো’তে সিজন ফাইভে আমি পঞ্চম স্থান অধিকার করি, বলেন তিনি।
২০১৭ সালে ইউটিউবিং শুরু করে হৃদয়। বর্তমানে নিজের ইউটিউব চ্যানেল প্রায় তিন লাখ মানুষের পরিবার। প্রথমে ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট বানানোর পরিকল্পনা করে হৃদয়, যেখানে অন্য কারো কোনো কারেকশন, কোনো মতামত কিচ্ছু থাকবে না। নিজের মতো করে ভিডিও বানাবে, যেটা মানুষ দেখবে, মজা পাবে আবার সচেতনও হবে। হুট করেই ইউটিউবে আশা হয়নি হৃদয়ের। প্রথম পাঁচটা ভিডিও একদম আগে প্ল্যান করেই, তারপর ইউটিউবের জন্য ভিডিও বানানো শুরু করে। বর্তমানে ইউটিউবে পুরোদমে কাজ শুরু করছে হৃদয়। এখন দেশি-বিদেশি কয়েকটা কোম্পানির সঙ্গে কাজ করছে হৃদয়।
মানুষকে হাসানোর দায়িত্ব সারাজীবনের জন্য কেন নিলো, এই প্রশ্ন করার পর জবাবে হৃদয় বলেন, সেই দিন পর্যন্ত মানুষকে হাসাবো, যেই দিন পর্যন্ত আমার কথা অন্তত একজন হলেও শুনবে।
ঢাকা/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন