ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা

নাজমুল হুদা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০২, ৮ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা

ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড বলা হলেও নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের শিক্ষা যৌক্তিকভাবে একটি জাতির মেরুদণ্ড হতে পারে না। তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এমনিতেই শিক্ষা থেকে উদাসীন শিশু-কিশোর ও তরুণরা। করোনার এই সময়টা উদাসীন হওয়ার গতিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। চলমান মহামারি প্রিয়জনদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাত্রা টেনে দিলেও অনলাইন যোগাযোগের দুয়ারকে প্রশস্ত করেছে।

এই সময়টাতে মানুষ বাধ্য হয়েই অনলাইনের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীল হচ্ছে। ঘর থেকে বের হতে না পারায় অলাইনের প্রতি ঝুঁকছেন ছোট-বড় সবাই। দুর্বা ঘাসের মাঠে খেলার অকৃত্রিম আনন্দ উপভোগ করতে না পারলেও মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারে ভিডিও গেমস খেলে কৃত্রিম আনন্দ উপভোগ করছে শিশু-কিশোর ও তরুণরা। 

টিকটক-লাইকির মতো অ্যাপসে কয়েক সেকেন্ডের তাল-বেতাল ভিডিও করে সস্তা জনপ্রিয়তা হওয়ার নেশায় পড়ছে তারা। পাবজির মতো ভিডিও গেমসে আসক্ত হয়ে তারা রাতের পর রাত জেগে থাকছে। এতে তাদের মধ্যে একদিকে যেমন শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে, তেমনি ঘটছে মানসিক বিকৃতিও।

যারা বিভিন্ন গেমস কিংবা সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে যেসব অ্যাপসে সারাদিন পরে থাকে, তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যরাই ভালো সময় পার করতে পারে না। তারা অল্পতেই রেগে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়। অনেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো করে কথা পর্যন্ত বলে না। তাদের মধ্যে ভয়, উদ্বেগ, হতাশা ও অবসাদ কাজ করে। মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে অতিরিক্ত আসক্ত হয়ে অনেকে রাত জাগছে। দিনে ঘুমাচ্ছে। এতে চোখের সমস্যাও হচ্ছে।

এক জায়গায় বসে গেমস খেলায় শারীরিক নড়াচড়াও কম হয়। এতে হজমে সমস্যা হয়, ওজন বাড়ে। তাদের আচরণে বিরক্ত হয়ে অভিভাবকরা বকা দিলে শিশু-কিশোররা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। ফলে অভিভাবক ও শিশু-কিশোরদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। 

করোনার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা এই সময়টাকে বই পড়ে কাটাচ্ছেন না। বাইরে খোলা মাঠে খেলাধুলা করেও কাটাতে পারছেন না। তাই তারা সময়টা ব্যয় করছেন অনলাইনে। এসব ব্যাপারে পরিবারের অভিভাবকরাও বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছে অনলাইলন গেম পাবজি। সবার হাতে মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেট। ডিভাইসের সহজলভ্যতা এবং ইন্টারনেটের কারণেই এই গেমটির এত জনপ্রিয়তা। অত্যধিক মাত্রায় হিংস্রতা থাকায় ১৩ বছরের কম বয়সীদের জন্য এই গেমটি নিষিদ্ধ। অতিরিক্ত হিংস্রতা শিশু-কিশোরদের মধ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। পরবর্তী সময়ে শিশুদেরও হিংস্র করে তুলতে পারে এই গেম।

পাবজির মতো অসংখ্য ভিডিও গেমস রয়েছে বাংলাদেশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণায় জানা যায়, অতিরিক্ত ভিডিও গেমসে আসক্তি এক ধরনের মানসিক রোগ। ভিডিও গেমস একজন খেলোয়াড়ের ডিপ্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও শারীরিক-মানসিক রোগের সঙ্গে এসব গেমসের অতিরিক্ত আসক্তি কিংবা লাইকি-টিকটকের মতো অ্যাপসের নেতিবাচক ব্যবহার শিশু-কিশোরের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

এই কারণে সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সমাজিক আচার ব্যবহার থেকেও দূরে সরে যেতে পারে তারা। যার প্রতিফলন আমরা টিকটকের অপু কিংবা মেহেদীর মতো অনেক কিশোর-তরুণের মধ্যে দেখেছি। এক্ষেত্রে কিশোরী-তরুণীরাও পিছিয়ে নেই। অশালীন অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তারাও সস্তা জনপ্রিয়তার নেশায় মেতেছে। তাদের মধ্যেও সামাজিক মূল্যবোধ থাকছে না। দেশের আচার-ব্যবহার কিংবা সংস্কৃতি কোনো কিছুই তারা পরোয়া করে না। বেপরোয়া এসব তারুণ্যের ভবিষ্যৎ কেমন? তাদের থেকে সমাজ কি আশা করবে?

করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না যেতে পারায় এসব শিশু-কিশোর-তরুণদের পড়ালেখার চাপ নেই। ঘরে বন্দি থাকতে হচ্ছে। তাই তারা অনলাইন বিনোদনের দিকে ঝুঁকছে। তবে এসবে অতিরিক্ত আসক্ত না হওয়ার জন্য অভিভাবকদের যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে। সন্তানরা অনলাইনের সময়টা কীভাবে ব্যবহার করছে তার নজরদারি রাখতে হবে। সময় দিতে হবে তাদের। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও বিভিন্ন বই পড়ানোর অভ্যাস তৈরি করতে হবে।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহফুজ/মাহি 

রাইজিংবিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়