ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শেষ বিকেলের মেয়ে: আবেগ, ভালোবাসা ও বাস্তবতার উপাখ্যান 

সৈয়দা মায়মুনা রাবেয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:০৬, ১০ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
শেষ বিকেলের মেয়ে: আবেগ, ভালোবাসা ও বাস্তবতার উপাখ্যান 

জহির রায়হান রচিত প্রথম উপন্যাস ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’। নাম দেখে মনে হয়েছিল বইটি হয়তো কোনো নারী চরিত্রের প্রেম কাহিনী বা এমন কিছু নিয়ে। কিন্তু পড়া শেষ করার পর ধারণাটি সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। আবেগ, ভালোবাসা, বাস্তবতা আর রোমান্টিকতায় পরিপূর্ণ এ প্রেমের উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন কাসেদ নামের এক যুবক। 

তিনি পেশায় একজন কেরানি। বাসায় আছেন এক বৃদ্ধা মা আর নাহার নামের দুঃসম্পর্কের এক বোন। নাহারের মা মারা যাওয়ার পর এ বাসায় সে মানুষ হয়েছে। ছিপছিপে দেহ, মিষ্টি চেহারা ও স্বল্পভাষী নাহার পুরো বাসা সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখে।

উপন্যাসটির শুরু হয়েছে এক বৃষ্টিমুখর দিনে কাসেদের অফিস থেকে বাসায় ফেরা দিয়ে। বাসায় এসে খবর পায় জাহানারা তাদের বাসায় অনেকক্ষণ বসে থেকে চলে গেছে। কাসেদ জাহানারাকে ভালোবাসে ও বিয়ে করতে চায়। জাহানারার বাবা একজন উকিল। মেয়েটিও শিক্ষিত ও আধুনিক। জাহানারাও কাসেদকে ভালোবাসে বলে মনে হয় কিন্তু কেউ তা প্রকাশ করে না।

জাহানারার জন্মদিনের দাওয়াত খেতে গিয়ে পরিচয় হয় জাহানারার কাজিন শিউলির সঙ্গে। সেসময় থেকে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। এটাকে প্রেম বললেও ভুল বলা হয় না। এভাবেই চলতে থাকে ত্রিভুজ প্রেম বা বন্ধুত্বের গল্প। কিন্তু গল্পটা আর ত্রিভুজে সীমাবদ্ধ থাকে না।

এরইমধ্যে হাজির হয় কাসেদের খালাতো বোন সালমা। সে ছোটবেলা থেকেই মনে-প্রাণে কাসেদকে ভালোবাসলেও কাসেদের অবহেলায় আর ঘর বাঁধা হয়নি। অন্যত্র বিয়ে হয় তার। এক কন্যা সন্তানের মা হয় সালমা। অনেক দিন পর সালমা এসে তাকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে বলে। এক্ষেত্রে দোটানার কারণে কাসেদ জাহানারার কথা ভেবে সালমাকে ফিরিয়ে দেয়।

এদিকে শিউলি আর কাসেদের বন্ধুত্বের সম্পর্কের জের ধরে জাহানারা ও কাসেদের সম্পর্কে ভাটা পড়ে। সবসময় যাকে ভালোবেসে এসেছে তার দুয়ার থেকে ব্যর্থ হয়ে শিউলিকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে- সব পুরুষ একরকম- একথা বলে মৃদু অপমান করে কাসেদকে ফিরিয়ে দেয়। ঘরে ফিরে দেখে কাসেদের মা গুরুতর অসুস্থ। নাহারের বিয়ে ঠিক করেও তিনি দেখে যেতে পারেন না। মৃত্যু হয় মায়ের।

উপন্যাস পড়তে গিয়ে এই মুহূর্তটিতে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি। কাসেদ কিংবা নাহারের জন্য নয়। কষ্টটা একজন মায়ের জন্য। পৃথিবীর সব মা যদি হাজার বছর বেঁচে থাকতেন!

এরপর নাহারকে বিয়ে দেয়ার জন্য কাসেদের খালু নাহারকে তার কাছে নিয়ে গেলে কাসেদের পৃথিবীটা শূন্য হয়ে যায়। শেষ বিকেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে যখন সে নানা কথা ভাবছে, তখন দরজায় শব্দ হয়। কে? একটি মেয়ে এসেছে। শেষ বিকেলের মেয়ে! সারাজীবনের জন্য কাসেদের নিকট এসেছে সে। কে এই মেয়েটি? সব ভুল বুঝতে পেরে জাহানারা? বন্ধুত্বের এক ফাঁকে ভালোবেসেছিল যে শিউলি, সে? স্বামী সংসার রেখে সালমা? নাকি অন্য কোনো মেয়ে এসেছিল শেষ বিকেলের মেয়ে হয়ে?

জানতে হলে উপন্যাসটি আপনাকে পড়তে হবে শেষ পর্যন্ত। পুরো উপন্যাসে নায়কের মানসিক দোদুল্যমান ভাবটা খুব বাস্তবিক। সবশেষে উপাখ্যানের যে পরিণতি তা পাঠক মনকে পুলকিত করবেই।

 

চবি/মাহফুজ/মাহি

রাইজিংবিডি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়