ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

শুধু তোমার পথপানে চেয়ে রই...

মেহেরুজ্জামান সেফু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫০, ৭ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ০১:২২, ৮ নভেম্বর ২০২০
শুধু তোমার পথপানে চেয়ে রই...

“এই শূন্য ঘরে, এই নির্বসনে কতোকাল, আর কতোকাল! আজ দুঃখ ছুঁয়েছে ঘরবাড়ি, উদ্যানে উঠেছে ক্যাকটাস্ত কেউ নেই, কড়া নাড়ার মতো কেউ নেই, শুধু শূন্যতার এই দীর্ঘশ্বাস, এই দীর্ঘ পদধ্বনি।”

মহাদেব সাহার এ কথাটি আজকাল যেন একটু বেশিই মনে পড়ছে। পরিবারের সঙ্গে থাকলেও একটা শূন্যতা কাজ করছে নিজের মধ্যে। অনেকটা দিন হয়ে গেলো প্রিয় ক্যাম্পাসের সঙ্গে দেখা হয় না। ক্যাম্পাসের বিল্ডিং, মাঠ, বারান্দা, এমনকি সিড়িতে পর্যন্ত কত স্মৃতি লুকিয়ে আছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক জীবন পার করে একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে কে না চায়! কেউ পেয়েছেন তাদের কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়, আবার কেউবা পায়নি। এই পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে আমি পেয়েছি প্রিয় ঐতিহ্যবাহী তিতুমীর কলেজকে, আর একে ভালোবেসেই লিখেছিলাম একটি কবিতা।

‘‘এসেছি আজ আনন্দময় হাস্যোজ্জ্বল মুখে,
পদচারণা মোদের নব উদ্যমে।
নতুন ঠিকানায়, আলোর সন্ধানে,
এসেছি আজ এই কলেজ প্রাঙ্গণে।
হয়েছি বরণ নবীন হিসেবে।
সিক্ত আজ মোরা,
শেষ না হওয়ার,
স্নেহ আর ভালোবাসায়।
এ এক অন্য রকম পাওয়া।
শ্রদ্ধা,সম্মান আর ভালোবাসায়,
আগলে রাখবো হৃদয় মাঝে,
তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়। ’’

নতুন শিক্ষার্থী হিসেবে প্রথম দিনেই পেয়েছিলাম দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওঠে আসা অসংখ্য বন্ধু। সময় গড়াতেই তাদের নিয়ে শুরু হয় ক্লাস করা, আড্ডা দেওয়া, গান গাওয়া, লাইব্রেরিতে বসে বই পড়া, ক্যাম্পাসের মাঠে ও পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে দল বেঁধে ঘোরাঘুরি আর ক্যাম্পাসের সামনের দোকানগুলোতে গিয়ে এক সঙ্গে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া। এভাবেই হাসি-আনন্দে প্রিয় ক্যাম্পাসকে সঙ্গী করে দিব্যি কাটিয়ে দিলাম দুটি বছর। আস্তে আস্তে যেন ক্যাম্পাসটাই হয়ে গেলো আমার দ্বিতীয় গৃহ।

হঠাৎ এক অদৃশ্য শক্তির ভয়াল থাবা। যার প্রাদুর্ভাবে এখন আর প্রতিদিনকার মতো দুরন্তপনায় ছুটে বেড়ানো হয় না প্রিয় ক্যাম্পাসের কোলজুড়ে। তার কোলে দাঁড়িয়ে দেখা হয় না প্রভাতের সূর্যদয়ের দৃশ্য। নেওয়া হয় না শিউলি ফুলের সুবাস। লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়া হয় না বই। প্রতিদিন নিয়ম মেনে তার কোলে দাঁড়িয়ে গাওয়া হয় জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ শোনা হয় না অডিটোরিয়াম থেকে ভেসে আসা শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের কবিতার সুর, নাট্য দলের নাট্য সংলাপের সুর, বিতর্ক মঞ্চের বিতার্কিকদের ঝাঁঝাল বক্তব্য।

ক্যাম্পাসের আকাশে বাতাসে ছাত্রনেতাদের বজ্র কণ্ঠে উচ্চারিত হয় না ‘জয় বাংলা’ সুর। স্কাউট, ক্যাডেটদের পায়ের তীব্র শব্দে জানান দেওয়া উদ্যম, তেজ আর মহত্ত্ব। সঙ্গে ক্লাস থেকে শুরু করে মাঠ, দালান থেকে শুরু করে দুর্বা ঘাস, নিয়ম থেকে অনিয়ম তুলে ধরাই ছিল সাংবাদিক সমিতির কাজ, যা এখন অনিয়মিত।

নিশ্চল ক্যাম্পাসে চিরচেনা সেই তথ্য কেন্দ্রে গিয়ে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে না কেউ, বাদাম বিক্রির জায়গাটা আজ শূন্য, ঝালমুড়ি আর ফুচকা বিক্রেতা এখন অন্যত্র। বাঙালি মেয়েদের সৌন্দর্য বর্ধনের অন্যতম লাল নীল রেশমি চুরি বিক্রি করছেন না সুবরা খালা। কিশোর ছেলেমেয়েগুলো গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা নিয়ে দু’মুটো আহারের আশায় বিক্রির জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে না পুরো ক্যাম্পাস। করোনার প্রভাবে এসবের সব কিছুই আজ স্থবির।

শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া, ক্লাস, আর বিভিন্ন ক্লাবগুলোর কাজ থমকে গেলেও মাঠের ঘাসগুলোও হয়তো বড় হয়ে গেছে খুব, তিতুমীরের কৃষ্ণচূড়া গাছে ঠিকই ফুটছে ফুল, আকাশমনি গাছ আকাশ ছুঁয়েই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে, হয়তো নিস্তব্ধ হয়নি পাখি ডাকার শব্দ।

প্রিয় ক্যাম্পাসের সঙ্গে আমার ভালোবাসা ছিল সুগভীর। আর কেউ না পারলেও প্রকৃতি যেন ঠিকই সে ভালোবাসায় বিরতি নিতে আমাদের বাধ্য করলো।

এ বিরতি কত দিনের সেটা এখনো অজানা। জীবনের মধ্য সময়টাতে এসে এর সঙ্গে জড়িয়েছিলাম আবার একে ছেড়েও চলে যেতে হবে, সেটাও জানতাম। তাই চেয়েছি এর সঙ্গে যেটুকু সময় থাকার নিয়ম রয়েছে, সে সময় টুকু এর সঙ্গেই কাটাবো। কিন্তু হঠাৎই এমন এক অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের কাটানো নির্ধারিত সুন্দর সময়গুলো থেকে প্রায় ৮টি মাস।

আবার কবে ফিরে পাবো সেই ভালোবাসা, ফিরে পাবো সেই প্রাণবন্ত হাস্যোজ্জ্বল জীবন। আবার কবে তোমায় দেখবো। এ অপেক্ষার অবসান যেন খুব দ্রুতই ঘটে, আবারো খুব কাছে থেকে ভালোবাসতে চাই তোমায়। ভালোবাসি তোমায়, আমার প্রিয় তিতুমীর শিক্ষালয়।

লেখক: শিক্ষার্থী, তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়