ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

কিছু অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে

তাহরিমা মাহজাবিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৩, ১১ নভেম্বর ২০২০  
কিছু অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে

ছোট থেকেই আমরা লম্বা ছুটি পেলেও আব্বুর ছুটি ছিল খুবই কম। ঈদের সময় যেখানে অন্যরা এক সপ্তাহের বেশি সময় ছুটি পান, সরকারি চাকরীজীবীদের ছুটি সেখানে মাত্র তিনদিন। ছোটবেলা বছরে দুইটা ঈদের সময়ই শুধু গ্রামে যাওয়ার সুযোগ হতো। 

আমাদের ছুটি থাকলেও আব্বুর অফিসের কারণে তাড়াতাড়ি চলে আসতে হতো শহরের বাসায়। তাই ইচ্ছামতো বেড়ানোর সুযোগ হতো না। মাঝে মাঝে ভাবতাম, যদি এমন হতো আমাদের স্কুল-কলেজের মতো আব্বুর অফিসও লম্বা সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যেত! তাহলে পরিবারের সবাই মিলে অনেক জায়গায় বেড়াতে পারতাম।

করোনার কারণে অবশেষে সেই লম্বা ছুটির দেখা মিলল। কিন্তু হায়, এ কেমন ছুটি! এ তো আনন্দের ছুটি না, এ ছুটি আতঙ্কের। তাই বেড়াতে যাওয়া তো অনেক দূরে, রোজার ঈদে গ্রামেও যাওয়া হলো না। ঘরেই থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন। তারপরও মন্দ কাটেনি সময়টা। এর আগে কখনোই আব্বুকে এত লম্বা সময়ের জন্য কাছে পাইনি আমরা। সবাই মিলে একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করা, আড্ডা দেওয়া, টিভি দেখা, রাতে লুডু খেলা আর ভিডিও কলে আত্মীস্বজনদের সঙ্গে দেখা করা, সব মিলিয়েই কাটল আমাদের সেই কাঙ্ক্ষিত ‘লম্বা ছুটি’।

পড়াশোনার কারণে আমি ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় থাকতাম। প্রথমদিকে ১৩ দিনের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ দেওয়া হয়েছিল। তাই ভাবলাম ১৩টা দিন দেখ দেখ করেই কেটে যাবে। কষ্ট করে বই খাতা নিয়ে যাওয়ার কি দরকার! তাছাড়া বাসায় গিয়ে যে খুব পড়াশোনা করব এমন তো না। তাই সব বই ঢাকায় রেখে আমি ময়মনসিংহ চলে আসলাম আমাদের বাসায়। একটা বইও কেন আনলাম না, এজন্য অবশ্য একটু বকাও শুনতে হয়েছে। এ নিয়ে আমারও একটু আফসোস হচ্ছিল। কেননা দিনকে দিন ছুটি বাড়তেই থাকল। 

তারপর ভাবলাম একাডেমিক পড়াশোনা তো অনেক করলাম, এবার অন্যকিছু করি। বেশ কিছু বই পড়লাম প্রথমে। পরবর্তী সময়ে ভাবলাম সাহিত্যের কিছু ভালো ভালো বই পড়ব। যেই ভাবনা সেই কাজ। ফোনে অনেকগুলো পিডিএফ ডাউনলোড করলাম। সাতকাহন, শেষের কবিতা, দ্য আলকেমিস্ট, জোছনা ও জননীর গল্প, একাত্তরের দিনগুলি, শেষ বিকালের মেয়ের মতো প্রায় ৩০টি বই পড়েছি। 

ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকে টুকটাক লেখালেখি করতাম। কিন্তু সেগুলো ছিল শুধু ডায়েরির পাতায়ই সীমাবদ্ধ। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতাম একদিন পত্রিকায় নিজের লেখা ছাপা হবে৷ এ বছর মার্চে ক্যাম্পাসে লেখালেখির উপর একটি কর্মশালার আয়োজন হয়েছিল। সেখানে অংশগ্রহণ করে অনেক কিছু শিখেছি। লকডাউনে বসে বিভিন্ন পত্রিকায় মেইল করতে থাকলাম নিজের লেখা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর প্রথম কোনো পত্রিকায় আমার লেখা ছাপা হলো। আমার অনেক দিনের অপূর্ণ ইচ্ছা পূর্ণ হলো। পত্রিকার পাতায় ছাপার অক্ষরে নিজের নাম, লেখা দেখার অনুভূতি সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এছাড়াও অনেক দিনের চেষ্টার পর সুডোকু মিলানো শিখেছি এখন।

অনলাইনে আমাদের মোটামুটি ক্লাস হয় এখন। তাছাড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অসংখ্য কোর্স বিনামূল্যে করার সুযোগ করে দিয়েছে। কোর্সেরা অ্যাপসের মাধ্যমে আমিও কিছু কোর্স সম্পন্ন করার সুযোগ পেয়েছি। সেইসঙ্গে পেয়েছি আন্তর্জাতিক সনদ। ছোট বোনদের পড়াতে গিয়ে নিজেও অনেক কিছু শিখেছি, আম্মুর সুবাধে টুকটাক রান্নাও শেখা হয়েছে। অনেক অপূর্ণ ইচ্ছাই পূর্ণ হয়েছে। 

এই সময়ে এসে অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পেরেছি। বুঝতে পেরেছি মানুষের দুঃখ-কষ্ট। এই মহামারির কারণে প্রতিদিন সারাবিশ্বে এত এত মানুষ মারা যাচ্ছে, কত মানুষের কত রকম ক্ষতি হচ্ছে, কেউ কেউ চাকরি হারাচ্ছে ইত্যাদি। তবে, একদিন এইসব অন্ধকার কেটে যাবে। এই দেশ, এই পৃথিবী আবার স্বাভাবিক হবে। আমরা সবাই সেই অনাগত দিনের অপেক্ষায় আছি…।

লেখক: শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়