ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

জেলে শিশুদের পাশে ‘হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন’ 

রেজাউল ইসলাম রেজা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:২৭, ২৯ নভেম্বর ২০২০  
জেলে শিশুদের পাশে ‘হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন’ 

দক্ষিণাঞ্চলের বলেশ্বর নদী তীরবর্তী জেলেদের সন্তানদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন। নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশ ও তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করতে বিভিন্ন সুযোগ সৃষ্টি করাসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা, বৈষম্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার আওতায় নিয়ে আসতে চেষ্টা করে যাচ্ছে সংগঠনটি। 

এছাড়াও বাল্যবিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধে সচেতনতামূলক প্রচারণা, বিনামূল্যে রক্তদানসহ বিভিন্ন সামাজিক কাজেও রয়েছে হাতে খড়ি ফাউন্ডেশনের বিচরণ। 

২০১৮ সালের ১৭ মার্চ হাতে খড়ি ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। এর পর থেকে গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলেপল্লী শিশুদের জীবন মান উন্নয়নে কাজ করছে তারা। জেলে শিশুদের জীবনমান উন্নয়ন, বিদ্যালয়মুখীকরণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা। জেলে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ অনাগ্রসর শিশুদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করা, বাল্য বিবাহ রোধ ও সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করণে হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন বদ্ধপরিকর। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে কিছু প্রজেক্টের অধীনে কাজ করছে তারা। এগুলো হচ্ছে-

প্রজেক্ট আলো

বলেশ্বর তীরবর্তী এলাকার গ্রামগুলোতে জেলে শিশুদের ২-৩ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। পর্যাপ্ত বিদ্যালয়ের অভাব, যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশাসহ অন্যান্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধার অভাবের কারণে বলেশ্বর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৮০ ভাগ জেলে শিশুই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। পাশাপাশি প্রায় ৯০ ভাগ শিশু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে শিশুশ্রমের সঙ্গে জড়িত। বাল্যবিবাহ ওখানকার স্বাভাবিক ঘটনা। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে এগিয়ে এসেছে হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন।

প্রজেক্ট ডিজিটাল ভিলেজ 

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমান যুগে প্রায় সব সম্প্রদায়ের শিশুরাই আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়েছে। কিন্তু সেদিক থেকে জেলে সম্প্ৰদায়ের শিশুরা অনেকটাই পিছিয়ে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত। সেদিক বিবেচনা করে যথাসম্ভব তথ্য প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসার জন্য ডিজিটাল ভিলেজ নামে একটি প্রজেক্ট চালু করা হয়। যার মাধ্যমে জেলে শিশুরা কম্পিউটার চালানো, গেইমিং, ব্রাউজিংয়ের সুবিধা পাচ্ছে।

প্রজেক্ট স্বপ্নপূরণ 

বর্ষাকালে জেলে শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়া অনেকটাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক জেলে পরিবার আছে, যারা চাইলেও তাদের বাচ্চাদের ছাতা কিনে দিতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে শিশুরা যাতে বিদ্যালয়ে যেতে পারে, সেজন্য ‘স্বপ্নপূরণ’ নামে একটি প্রজেক্ট চালু করা হয়। এর মাধ্যমে শিশুদের মাঝে রঙিন ছাতা বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন সময়ে এ যাবত প্রায় দেড় শতাধিক শিশুকে রঙ্গিন ছাতা বিতরণ করা হয়েছে।

প্রজেক্ট হাসি 

যার মাধ্যমে হাতে খড়ি সংগঠন শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ যেমন খাতা, কমল ব্যাগ ইত্যাদি দিয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত প্রায় এক শতাধিক শিশুকে শিক্ষা উপকরণ দিয়েছে তারা।

প্রজেক্ট শিক্ষাবার্তা 

জেলে পরিবারগুলোর মাঝে সচেতনার খুবই অভাব রয়েছে। শিশুদের বিদ্যালয়ে না পাঠিয়ে তাদের বাবা-মা, নানা ধরনের কাজে লাগিয়ে দেয়। ফলে শিশুরা হয় অর্থ উপার্জনের উৎস। এই ধারণা থেকে বের হওয়ার জন্য, হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন চালু করে প্রজেক্ট ‘শিক্ষাবার্তা’। যেখানে সংগঠনের সদস্যবৃন্দ জেলে পরিবারদের সচেতন করা ও শিশুদের বিদ্যালয়মুখী করার কাজ করে।

প্রজেক্ট উৎসব

এ দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসব পালন করে থাকে। জেলে সম্প্রদায়ের শিশুরা এদিক থেকেও পিছিয়ে। আর্থিক সংকটের কারণে উৎসবের দিনগুলোয় তারা আনন্দ থেকে হয় বঞ্চিত। ‘উৎসব’ প্রজেক্টের মাধ্যমে জেলে শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন উৎসব পালনসহ, তাদের মাঝে উপহারসামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। এ যাবত প্রায় ২০০ জন শিশুকে ঈদসামগ্রী তুলে দিয়েছে তারা।

প্রজেক্ট হাতে খড়ি ফ্রাইডে স্কুল 

জেলে পরিবারের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনামূল্যে পড়ানোর জন্য ‘হাতে খড়ি ফ্রাইডে স্কুল’ নামে একটি প্রজেক্ট চালু করে ও অর্ধশতাধিক শিশুকে এর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। পাশাপাশি ৫ জন শিশুর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার স্থায়ী দায়িত্ব নিয়েছে তারা।

হাতে খড়ির এ যাত্রা খুব একটা সুগম ছিল না। শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দুর্গম এলাকার জেলে শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে ‘হাতে খড়ি ফাউন্ডেশন’। আর এর স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর দেশের তরুণদের জন্য সবচাইতে সম্মানজনক পুরস্কার ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ লাভ করেছে। এই সম্মাননা তাদের কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি, তাদের উদ্যমকে আরও বেগবান করবে। অন্য সম্প্রদায়ের শিশুদের মতো এগিয়ে যাবে জেলে সম্প্রদায়ের শিশুরাও।

লেখক: শিক্ষার্থী, কৃষি অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

পবিপ্রবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়