ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিদেশে ভর্তির রিকমেন্ডেশন লেটার লেখার নিয়ম

ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ২ ডিসেম্বর ২০২০  
বিদেশে ভর্তির রিকমেন্ডেশন লেটার লেখার নিয়ম

বিশ্বের বিভিন্ন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে যুক্ত করতে হয় রিকমেন্ডেশন লেটার। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা প্রচলিত ও একই ধাঁচের রিকমেন্ডেশন লেটার ব্যবহার করে। ফলে, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ফাইল যাচাইয়ের ক্ষেত্রে শুরুতেই বাদ পড়ে যায় ফাইলটি। 

সাধারণ রিকমেন্ডেশন লেটারগুলোর বক্তব্য প্রায় একই ধরণের হয়ে থাকে। দেখে মনে হবে শিক্ষক পুরাতন একটি লেটারে শুধু শিক্ষার্থীর নাম পরিবর্তন করে লেটারটি দিয়ে দিয়েছেন।  

রিকমেন্ডেশন লেটার নিয়ে অনেক প্রার্থী বা শিক্ষার্থীরই স্পষ্ট ধারণা থাকে না। রিকমেন্ডেশন লেটার হতে হয় শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে আলাদা আলাদা। এটি লেখার জন্য আছে কিছু নির্দিষ্ট নিয়মও। অনেক সময় দেখা যায় রিকমেন্ডেশন লেটারে শিক্ষার্থীর পূর্বের কাজের উপস্থাপন ভাল হলে শিক্ষার্থীর অন্য দুর্বল দিক বিবেচনা না করে তাকে নির্বাচন করা হয়।
বিদেশে ভর্তির আবেদন করা শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র অ্যাকাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে বাছাই করা হয় না। এতে যোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা নির্ধারিত আসনের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে রিকমেন্ডেশন লেটারের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা হয়। এ কারণে মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে ভর্তির আবেদনের সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদনের কাগজপত্র বিশেষ করে রিকমেন্ডেশন লেটার খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে। 

ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীকে সাধারণত ৩টি রিকমেন্ডেশন লেটার জমা দিতে হয়। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বা গবেষণার মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার জন্য এসব রিকমেন্ডেশন লেটার চাওয়া হয়।

শিক্ষার্থীকে কাছ থেকে নির্দেশনা দিয়েছেন এমন শিক্ষকরাই রিকমেন্ডেশন লেটার দিয়ে থাকেন। ধরা যাক, একজন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে স্নাতক পাস করার পর বিদেশে গবেষণার জন্য আবেদন করবেন। তাহলে সেই শিক্ষার্থীকে যে প্রতিষ্ঠানে তিনি পড়েছেন সেখানকার কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে হবে। শিক্ষার্থীর চারপাশ সম্পর্কে জ্ঞান ও সার্বিক মেধা কেমন তা উল্লেখ থাকতে হবে রিকমেন্ডশন লেটারে। শিক্ষার্থীকে সুযোগ দেওয়া হলে সে কি কি কাজ করতে পারবে সেটিও উল্লেখ থাকতে হবে সেখানে। রিকমেন্ডেশন লেটার তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন।

শিক্ষার্থীরা রিকমেন্ডেশন লেটার নিজে নিজেই লিখে ফেলেন। শিক্ষকদের কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার না নিয়ে নিজে নিজে তৈরি করে তা আবেদনের সঙ্গে জমা দেন। আবার অনেক সময় শিক্ষকের কাছে রিকমেন্ডেশন লেটারের জন্য গেলে শিক্ষক বলেন-রিকমেন্ডেশন লেটার নিজেই তৈরি করে নিয়ে এসো, দেখে স্বাক্ষর করে দেবো। পরে শিক্ষক রিকমেন্ডেশন লেটার ভালো করে দেখেন না, কোনো কিছু সংযোজন কিংবা মূল্যায়ন না করেই স্বাক্ষর করে দেন। এই পদ্ধতিটি ঠিক নয়। এসব কারণে রিকমেন্ডেশন লেটার স্বতন্ত্র হয় না।
এসব সুপারিশপত্র পড়েই বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বুঝতে এতে নতুন কিছু নেই। তাই পরামর্শ-সুপারিশপত্র এমন শিক্ষককে দিয়ে লেখানো উচিত, যিনি গুরুত্ব দিয়ে চিঠি লিখে দিবেন। পত্র খুব বড় করার দরকার নেই । যতটুকু লিখলে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে, ততটুকু লিখলেই চলবে।

আরেকটি গুরুতর সমস্যা হল হুবুহু লিখে ফেলা। শুধু নাম ও সামান্য পরিবর্তন করে রিকমেন্ডেশন লেটার লিখলে এতেও নতুন কিছু থাকে না। এসব চিঠি দেখেও অভিজ্ঞরা বুঝে ফেলেন যে এগুলো ধার করা। অন্য শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার নেয়া যেতে পারে শুধু ধারণার জন্য, হুবুহু লিখে ফেলার জন্য না। আবার অনেকে ইন্টারনেট থেকে নমুনা রিকমেন্ডেশন লেটার দেখে সামান্য পরিবর্তন করে জমা দেন। এটাও ঠিক না।

অনেক সময় সুপারিশপত্রে এমন কিছু থাকে, যা প্রাসঙ্গিক না। আবার সাধারণ বা মুখস্থ কথাবার্তাও লেখা হয়। যেমন-সে আমার পরিচিত ও খুব পছন্দের ছাত্র। খুবই মেধাবী। ক্লাসের পরীক্ষায় ভালো করতো ইত্যাদি। এসব কথা থেকে ভর্তি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা গবেষণার সঙ্গে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাবেন না। এসব কমন কথা না লিখে যদি বিশেষ কোনো ঘটনা বা উদাহরণের কথা বলা হয়, তাহলে তা ভর্তি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শত শত আবেদন জমা পড়ে। এক সঙ্গে এত আবেদন দেখতে গিয়ে ভর্তি অফিসের কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া প্রায়ই আবেদনের কাগজপত্র হারিয়ে যায়। আর অসম্পূর্ণ আবেদন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমলেই নেয়া হয় না, যাচাইয়ের আগেই বাতিল করে দেয়া হয়। এসব ঝামেলা এড়াতে এখন অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি আবেদন করতে হয় অনলাইনে বা ইমেইলে। রিকমেন্ডেশনের ক্ষেত্রেও তা-ই। মানে ইমেইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রিকমেন্ডেশন পাঠানোর সুযোগ থাকে। তাই অনলাইনে পাঠানোই নিরাপদ।

সাধারণত শিক্ষকদের কাছ থেকেই সুপারিশ নিতে হয়। তবে যারা ইতোপূর্বে চাকরি করেছেন, তারা চাইলে তাদের বসের কাছ থেকে রিকমেন্ডেশন লেটার বা সুপারিশপত্র নিতে পারেন। ধরুন আপনি সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানে আগে চাকরি করেছেন। সেখানে আপনার পারফরম্যান্স কেমন ছিল, গুরুত্বপূর্ণ অর্জনগুলো কী কী-তা তুলে ধরবে আপনার বস। তবে অবশ্যই যৌক্তিক ও গুছালো কথা থাকতে হবে। পড়ে যাতে মনে না হয়-এসব মনগড়া মুখস্থ। এই লেখাটির জন্য ‘রোড টু হায়ার স্টাডি’ বইয়ের সহায়তা নেওয়া হয়েছে।

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়