ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

করোনা পরবর্তী বিশ্বে যেসব দক্ষতা প্রয়োজন

আবু সালেহ শামীম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১৬, ২১ ডিসেম্বর ২০২০  
করোনা পরবর্তী বিশ্বে যেসব দক্ষতা প্রয়োজন

করোনা ইতোমধ্যে বিশ্বে একটি ক্ষত রেখে দিয়েছে। মহামারি শেষ হওয়ার পরে সব চাকরির ক্ষেত্রেই প্রয়োজন হবে ভিন্ন দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী। চাকরিজীবী বা চাকরিসদ্ধানী যেই হোন না কেন, আপনি যদি আপনার ক্ষেত্রে শীর্ষে উঠতে চান, তবে আপনার নতুন বাস্তবতায় তাল মিলিয়ে চলার জন্য সঠিক দক্ষতা থাকা আবশ্যক। 

আপনার আবেদনকৃত কাজের জন্য নিজেকে সেরা প্রার্থী হিসেবে প্রমাণ করতে সেই কাজের চাহিদা মাফিক এক বা একাধিক দক্ষতা প্রদর্শন করতে হবে। করোনা পরবর্তী চাকরি জীবনে সবচেয়ে বেশি যে দক্ষতাগুলোর প্রয়োজন, তা তুলে ধরা হলো- 

উপযোগীকরণ 
বর্তমান কর্মক্ষেত্রে যেসব পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়, এটা নিশ্চিত কয়েক মাস বা কয়েকবছর পরেই তা বদলে যাবে। দ্রুত পরিবর্তিত হওয়া পরিস্থিতির একটি অংশ হলো নতুন ডিজিটাল বিশ্ব। যাইহোক, চলমান করোনা মহামারি এই পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নিয়োগকর্তারা অবশ্যই জানতে চাইবেন, এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে আপনি নিজেকে কতটুকু খাপ খাইয়ে নিয়েছেন ও এর থেকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে আপনার কি কি দক্ষতা আছে। একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চলমান বাজারের সব সুবিধা নিতে চাইবে, সেই সঙ্গে নিজেকে পিছিয়ে পড়া থেকে রক্ষা করবে। সুতরাং একটি নমনীয় চলমান পরিবেশের উপযোগী মন-মানসিকতা বজায় রাখার জন্য কাজ করুন, যা সর্বদা উন্নতির দিকে তাকিয়ে থাকে। (সুতরাং, এমন এক মানসিকতা তৈরি করুন, যা সর্বদা উন্নতির দিকে তাকিয়ে থাকে)।

সম্মোহনী ও সংবেদনশীল বুদ্ধিমত্তা

বুদ্ধিমত্তা বিভিন্ন ধরনের আছে। গণিত, বিজ্ঞান বা পড়াশোনায় দুর্দান্ত থাকা সব ঠিক আছে। কিন্ত এই প্রতিযোগিতামূলক কর্মব্যস্ত বিশ্বে, আপনাকে বিভিন্ন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কাজ করতে হবে। আপনার কোম্পানির নীতিনির্ধারক, গ্রাহক ও বিক্রেতা সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে আপনার সংবেদনশীল ও সম্মোহনী  বুদ্ধিমত্তা থাকতে হবে। 

আপনার যদি এ বুদ্ধিমত্তা থাকে, তবে আপনার চিরসবুজ দক্ষতা রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, মানুষের আচার-আচরণ পরিবর্তন হয় না। এই বিপর্যস্ত মহামারিতে মানব প্রকৃতি বোঝা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাইবার নিরাপত্তা

সাইবার অপরাধীরাও এখন অনেক বেশি চতুর। করোনার প্রভাবে আগের চেয়ে অনেক বেশি লোক এখন গৃহ অভ্যন্তরে অবস্থান করে ও ইন্টারনেট-সংযুক্ত ডিভাইস ব্যবহার করে। একই হারে সাইবার অপরাধীরাও আগের চেয়ে বেশি লক্ষ্যবস্তু বাড়িয়েছে। বর্তমানে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠাগুলোর জন্য সাইবার ক্রিমিনালরা বড় ধরনের হুমকি। যদি কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ডাটা ব্রিচ হয়, তবে সে প্রতিষ্ঠানের গ্রাহক বা আর্থিক লেনদেনের তথ্য প্রতারকদের হাতে চলে যেতে পারে। যা উক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য মহাবিপদ ডেকে নিয়ে আসতে পারে। 

অনেক ক্ষেত্রে সাইবার দক্ষতার অভাবে সে প্রতিষ্ঠান ভেঙে যেতে পারে। আপনি যদি নতুন কোনো বিষয়ে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন, তবে সাইবার সিকিউরিটি প্রশিক্ষণ কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। এই দক্ষতা চাকরির বাজারে আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

ডিজিটাল দক্ষতা

করোনায় জনস্বাস্থ্যের কারণে এখন অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মীদের বাসায় বসে কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আপনি অন্যদের সঙ্গে ফিজিক্যালি উপস্থিত হয়ে কাজ করা পছন্দ করতে পারেন, তবে করোনভাইরাস ও নতুন বাস্তবতা এমন অনুমতি সবাইকে দেবে না। এখন অনেক সংস্থার কর্মীদের শারীরিকভাবে কার্যালয়ে আসার অনুমতি নেই। 

এদিকে, বাসায় বসে কাজ করার অনেক সুবিধা রয়েছে। যেমন- আপনি সুবিধামতো কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে নিতে পারবেন, পরিবহনের ঝামেলা এড়িয়ে সময় বাঁচাতে পারবেন ও নিজ বাসায় অফিসের দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রোগ্রামিং, আর্টিকেল রাইটিং ও ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি কাজগুলো অনেকেই ঘরে বসে করছেন ও খুব সহজে অনেক বেশি ইনকাম করছেন। এই কাজগুলোর উচ্চ চাহিদাও রয়েছে। 

যে কাজগুলোতে শারীরিক উপস্থিতি জরুরি, সেসব কাজও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে হাতের নাগালে নিয়ে আসা হচ্ছে। যাইহোক, ডিজিটাল বিশ্বে আপনার যথাযথ টাইম ম্যানেজমেন্ট, সাংগঠনিক ও কমিউনিকেশন দক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, আপনি পিছিয়ে পড়বেন।

নেগোশিয়েশন 

আপনি কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন, সেটা ব্যাপার না, যেখানেই কাজ করেন না কেন-গ্রাহকদের জন্য আপনার প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট সেবা প্রদান অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। যেমন- ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কাজ হলো পণ্য বিক্রি করা ও উন্নত গ্রাহক সেবা দিয়ে তাদের আকৃষ্ট করে রাখা, নাহলে প্রতিযোগিতামূলক এই বাজারে আপনি পেছনে পড়ে যাবেন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করার দক্ষতা থাকা অপরিহার্য।   

এটা স্পষ্ট যে, কোভিড-১৯ পরবর্তী বিশ্বে অর্থনৈতিক বাস্তবতা আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে। এখন সময় হলো নেগোশিয়েশনের মাধ্যমে কম খরচে বেশি মুনাফা অর্জনের। চাকরির ভাইভাতে নেগোশিয়েশন দক্ষতা দেখাতে পারলে, সেটা অবশ্যই আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। 

করোনাভাইরাসের পরে নতুন পৃথিবী কখনোই এমন হবে না। করোনা পরবর্তী বিশ্ব সম্পূর্ণ নতুন হবে। ভূ-প্রাকৃতিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য-রাজনীতিতে বিশাল পরিবর্তন আসবে। পুরনো ধারণা ও পদ্ধতিগুলো বদলে যাবে। অনেক কিছুই নতুনভাবে প্রণয়ন করে হবে।

আপনি যদি নিজের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানে কাজ পেতে চান ও আপনার প্রতিষ্ঠানে নিজেকে সেরা হিসেবে প্রমাণ করতে চান, তবে উপরোক্ত গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করুন ও প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার সম্ভাবনাময় দক্ষতাগুলো অর্জন করুন। প্রতিযোগিতাময় বিশ্বে টিকে থাকতে সঠিক দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই। 

লেখক: হিদার রেডিং, বর্তমান সময়ের একজন বিখ্যাত লেখক।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়