ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

যাদের কাছে আমরা চিরঋণী… 

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২৫, ২০ জানুয়ারি ২০২১  
যাদের কাছে আমরা চিরঋণী… 

শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষক ছাড়া উন্নত সমাজ ও উজ্জ্বল জীবন কল্পনাতীত। তাঁদের শিক্ষার আলো যেমনি শিক্ষার্থীদের সামনের পথচলাকে সুদৃঢ় করে, তেমনি তাদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। 

২০০৩ সালে ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে তৎকালীন সরকার ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ চালু করে। এরপর থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশের শিক্ষক ও ছাত্র সমাজ ১৯ জানুয়ারি ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে। ‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, চিন্তা-ভাবনা ও সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

অনন্য প্রতীক রাউত, আইন বিভাগ

একজন মানুষের জীবনে সফলতা অর্জনের পেছনে যার সুনিপুণ দক্ষতা বা দিক-নির্দেশনা থাকে তিনি হচ্ছেন শিক্ষক। আলোর মতো সরলরেখায় অবিরাম বিলিয়ে যান জ্ঞানের ভান্ডার। এক সময়কার বটতলাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার চিত্র কালের বিবর্তনে বদলেছে সত্যি, তবে কমেছে গুণগত মান। মুখস্ত আর জিপিএ নির্ভর শিক্ষাব্যবস্থায় আমরা আটকে গেছি। বাড়ছে নম্বরের বোঝা তবে কমছে মনুষ্যত্ব বোধের অবস্থান হৃদয় থেকে। এটার জন্য আমরা যেমন দায়ী, তেমনি অনেক অপেশাদার শিক্ষক নামধারী কিছু অশিক্ষক দায়ী৷ যারা নিজের অর্থ-বিত্ত বা ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে ক্রমাগত পথ ভ্রষ্ট করাচ্ছে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে। ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছেন দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ধারাকে। 

স্বাভাবিকতার মাঝে কিছু অস্বাভাবিকতা থাকেই। সেজন্য, পুরো শিক্ষক সমাজের দিকে আঙ্গুল তোলা বোকামির শামিল। শিক্ষক দিবসের মতো মহান দিনে নেতিবাচকতার দিকে ইঙ্গিত দিতে চাই না আর। তবে, পরিবর্তন ঘটা খুব জরুরি। স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকের বাইরে সবার জীবনে একজন স্রষ্টা প্রদত্ত শিক্ষক থাকেন। যার হাত ধরে শুরু হয় সন্তানের প্রথম পথচলা। যার কাছ থেকেই একজন মানুষ প্রথম কিছু শেখে। প্রথম যা শেখে, সেই শব্দটাও ‘মা’ এবং ব্যক্তিও নিঃসন্দেহে মা। যিনি পৃথিবীতে সন্তানের সবচেয়ে আপন এবং অকৃত্রিম বন্ধু। শুভ কামনা সকল আলোর দিশারীদের তরে। সমৃদ্ধ জাতি গড়ার কারিগরদের বিনম্র শ্রদ্ধায় করি স্মরণ। 

সানজিদা মাহমুদ মিষ্টি, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। আর শিক্ষকরা সেই মেরুদণ্ড তৈরির শ্রম শিল্পী। গোটা মনুষ্য সমাজের মধ্যে নৈতিকতার বিচারে শিক্ষক একটি মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। শিক্ষক তাঁর সুচিন্তিত জ্ঞানের মাধ্যমে অপশিক্ষা, কুশিক্ষা, অন্ধত্ববাদ থেকে বের করে এনে জাতিকে আলোর পথ দেখায়। বিশ্বকে নতুনভাবে চিনতে শেখায়। একটি শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে যেমন স্নেহ-ভালোবাসা পেয়ে বড় হয়, তেমনি শিশুর ভবিষ্যৎ লক্ষ্যে পৌঁছাতে শিক্ষকেরা আলোর দিশারি হয়ে কাজ করেন। 

দক্ষ কাঠমিস্ত্রি ব্যতিত যেমন একটি ঘর তৈরি করা যায় না, তেমনি দক্ষ শিক্ষক ছাড়া একটি দেশকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলা যায় না। স্নেহ, ভালোবাসা সহমর্মিতা, চরিত্র গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় এসব আমরা তাঁর কাছে শিখতে পারি। তাছাড়া আমাদের আচরণের বহিঃপ্রকাশ কেমন হবে, শিশু বয়স থেকেই উচিত-অনুচিত বোধশক্তি, সততা, ন্যায়-নীতি, মনুষত্ববোধ, দেশপ্রেম প্রভৃতি বিষয়গুলো আমরা শিক্ষকের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারি। তাই আমাদের আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকা অনস্বীকার্য। 

জ্ঞান বিজ্ঞানের সব তত্ত্ব আবিষ্কারের পেছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দান করেন একমাত্র শিক্ষক। তাঁদের স্নেহ-ভালোবাসা, শাসনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত, সৎ, সাহসী ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে।

রুকাইয়া মিজান মিমি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড, ঠিক তেমনি আদর্শ শিক্ষক শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। শিক্ষক মানেই যেন একটি সম্মানিত শব্দ, জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার, সব মানবিক গুণের অধিকারী। আমাদের জাতীয় জীবনে শিক্ষকের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তাই ভাষায় বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। একজন আদর্শ শিক্ষক শুধু সুকৌশলে পাঠদানই করেন না, ছাত্রদের গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে তাদের সুপ্ত প্রতিভাকেও জাগিয়ে তোলেন। তাঁর হাতে গড়ে ওঠে বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, ডাক্তার, আইনজীবী, আমলা, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, তথা আগামীর ভবিষ্যৎ। তিনি যেন প্রজন্ম গড়ার কারিগর! ব্যক্তিত্ব, দৃষ্টিভঙ্গি গঠনেও শিক্ষক প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলছে। 

বিশেষ করে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষকের আচরণ, মূল্যবোধ, সততা প্রতিটি কোমল শিশুর জীবনেই ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তারা তাদের প্রিয় শিক্ষকটির অনুসারী হতে চায়, তাঁর আচরণগুলো আয়ত্ত করে নিজের জীবনে প্রতিফলিত করে। তাই একটি জাতিকে আলোকিত ও সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী করতে সুশীল শিক্ষক সমাজের কোনো বিকল্প নেই, শিক্ষকরা আমাদের জাতীয় জীবনে একেকটা আশীর্বাদ। 

যোগ্য শিক্ষকরাই প্রতিটি ছাত্রের মনে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, ধর্ষণের মতো অপরাধপ্রবণতার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করে দেশপ্রেম, সততা, সময়ানুবর্তিতা জাগিয়ে তুলে একটি আদর্শ জাতি গঠন করতে পারেন। তাই জাতির প্রতি তাঁদের দায়িত্ববোধের জায়গাটাও অনেক বেশি। প্রতিটি শিক্ষক ভালো থাকুক, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থা আরো সমৃদ্ধ হোক।

শাহিন হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

কোনো প্রাণী যেমন মেরুদণ্ড ছাড়া সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না, ঠিক তেমনি কোনো জাতি শিক্ষা ছাড়া সভ্যতা ও সফলতার স্বর্ণ শিখরে পৌঁছতে পারে না। যে জাতি যত বেশি সু-শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ। উন্নত জাতি গঠনের পেছনে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। তবে দুঃখের বিষয়, শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি থেকে শুরু করে সম্প্রতি আমাদের দেশে বিভিন্ন অনৈতিক, অনিয়ম, দুর্নীতি, প্রশ্নফাঁস, ঘুষ, জালিয়াতি এমনকি ধর্ষণের মতো স্পর্শকাতর কর্মকাণ্ডেও শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা বরাবরই লক্ষ্যণীয়। 

সিদরাতুল মুনতাহা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ

মানবশিশুর জন্মের পর থেকে বাবা-মা যেমন তাঁদের ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা দিয়ে সন্তানকে বড় করে তোলেন, তেমনই শিক্ষকরা শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমেই নয়, বাস্তবমুখী ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে একজন সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী, সৎ ও সাহসী মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষাটা দেন আমাদের শিক্ষকরাই। তাঁদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, আদর ও শাসন এবং নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সৎ, সাহসী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। 

সমাজ ও জাতি গঠনে, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে, দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে, বিশ্বের দরবারে নিজ দেশের গৌরবময় অবস্থান গড়ে তুলতে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান একজন রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ বা সমাজনেতার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। তাই বলা যায়, একজন আদর্শ শিক্ষক দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান ও শ্রেষ্ঠ মানুষের অন্যতম। জাতি সঙ্গত কারণেই শিক্ষকের কাছে অনেক প্রত্যাশা করে। শিক্ষকদের এই কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে একটি শিক্ষিত জাতি। প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর মহান শিক্ষকদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম।

মেহরাব হোসেন অপি, পরিসংখ্যান বিভাগ

শিক্ষা ও শিক্ষক শব্দ দুটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বলা হয়ে থাকে, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই মেরুদণ্ড গঠনের কারিগরই হলেন শিক্ষক। আর শিক্ষকদের সম্মানার্থে যেই দিবস পালিত হয়, তাই শিক্ষক দিবস। শিক্ষক শুধু ছাত্রদের পড়াশোনায় সাহায্য করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠন করে তাদের মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে উঠতে এবং তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেন। 

বস্তুত ছাত্রছাত্রীর জীবনে একজন যোগ্য শিক্ষকের অসামান্য অবদান বিদ্যমান। একজন মানব শিশুকে জন্ম দেন তার পিতামাতা। আর সেই সন্তানকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন শিক্ষক। এজন্যই বলা হয়ে থাকে শিক্ষক জাতি গঠনের কারিগর।  শিক্ষককে বলা হয় মানসপিতা। জন্মিলেই কেউ মানুষ নয়। মানুষ হতে হলে তাকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়। মানুষকে সঠিক পথের দিশা দেওয়ার মহান ব্রত নিয়েই আমাদের দেশ, সমাজ এবং সারাবিশ্বে শিক্ষকরা কাজ করে গেছেন যুগের পর যুগ। এটি এমনই এক ব্রতের নাম, যা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতা। 

জবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়