ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

কানামাছি আর লুকোচুরির শৈশব 

রানা আহম্মেদ অভি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৬:১১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১
কানামাছি আর লুকোচুরির শৈশব 

হারিয়ে গেছে শৈশব। বিলীন হয়েছে অনেক খেলা। শৈশবের সেই সঙ্গীরা আজ পাশে নেই। তাদের কথা মনে পড়তেই কিছু মহূর্তের জন্য হলেও উদাস হয়ে যাই। যদি ফিরে যেতে পারতাম অতীতে, ফিরে দেখতাম ছোট্টবেলার প্রতিটি মুহূর্ত, যদি ধরা যেত সেই স্বপ্ন, তাহলে বার বার ফিরে যেতাম সোনালী সেই দিনে।  

‘শৈশব’ শব্দটি শুনলেই হৃদয়স্পর্শী একটি জগৎ চলে আসে মনের আয়নায়। চঞ্চল, চিন্তাহীন একটা সময়। কত কিছুই না করেছি সে সময়! কত খেলা, মারামারি, দুষ্টুমি আর গল্পের খুনসুটি। এই লেখার পাঠকদের সেই স্মৃতিময় কিশোরকাল এখন কিছুটা ফিকে হয়ে আছে। সেই কিশোর বেলায় ফিরে গেলে স্মৃতির পাতায় ধরা পড়ে মাটির আঁকাবাঁকা মেঠো পথে হেঁটে যাওয়া স্কুলের কথা, দীঘির জলেতে শাপলা তোলা, ঝড়ের দিনে আমতলা, খেলার সঙ্গী, খেলার মাঠ আরো এমন শত স্মৃতি। খেলার বন্ধুরা কোথায় তা অজানা। কিন্তু খেলার সময়টুকু মনে রয়ে গেছে।

লাটিম, যা ছিল ছোট্টবেলার অত্যন্ত প্রিয় খেলাগুলোর মধ্যে একটি। শুধু খেলা নয়, এর সঙ্গে স্মৃতি হিসেবে জড়িয়ে আছে বাবার লাঠিঘাত, মায়ের মাটির ব্যাংকের টাকা। রঙিন লাটিম কেনা ছিল নেশা। নতুন রঙিন লাটিম দিয়ে জিতে যাওয়া ছিল সুখস্মৃতি, তা এখনো চোখে লেগে আছে। পক্ষান্তরে, বন্ধুময় লাটিম শত্রুদের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত রঙিন লাটিম স্মৃতির পাতার শিরোনাম।

গোল্লাছুট, গোধূলির আগে পাড়ায় বেঁধে যেত হৈচৈ। ছোট্ট সবাই থাকতাম উপস্থিত। কী করতে হবে, তা নিয়ে চিন্তা থাকতো দর্শকদেরই বেশি। কী করতে হবে না, তা কেউ বলার আগেই, ওই দৌড়। খেলোয়াড়দের চোখ ফাঁকি দিয়ে জয়ধ্বনি, বিফলে হাতে-ঘাতে আফসোসের সুর। এটি একটি স্মৃতিময় খেলা। গোল্লাছুট ছাড়া শৈশবের গল্প আছে এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া যায় না বললে চলে। ছেলেমেয়ে উভয় মিয়ে হতো খেলাটি। দোদলা খেলায় এক দল হাতে হাত ধরে দৌড়ায়। অন্যদল ধরে ফেলার চেষ্টা করে অবিরত। ভীষণ উত্তেজনার খেলা। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘গোল্লাছুট’ হারিয়ে গেছে আমাদের জীবন থেকে।

কানামাছি ভোঁ ভোঁ, কাজের টেবিলের অবসরে এখনো কানে আওয়াজ আসে সেই খেলার সুর। একটি অসম্ভব ভালো লাগার স্মৃতিচারণ করে মন। সময় হয়তো হারিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা এখনো আটকে রয়েছি কানামাছির ভোঁ ভোঁ’র মাঝে। ফিরে গেলে সেই সবীজ শৈশবের দিনে। বিকেলে পেরিয়ে যাওয়া আলোয় ‘টুককি’ সুর, গলায় বলা ছন্দ যারে পাবি তারে ছোঁ। স্কুলের টিফিনের সময় বাঁচিয়ে পুনরাবর্তন। কানামাছি কাউকে ছুঁয়ে দিলো, আরে কানামাছির হলো জন্ম। এভাবেই পরির্বতন সুর আর ছন্দ থাকে। বৃদ্ধ বয়সেও প্রশ্নহীন কানামাছির ভোঁ ভোঁ আপনাকে স্মৃতিকাতর করবেই।

যত ব্যস্তই থাকি, দূরে বহুদূরে প্রবাসে, শৈশব আমাদের আপনই রয়ে যায়। খেলতে পারার সেই দিন বা সুযোগ না থাকলেও গল্পটা বলা হয়ে যাবে অনর্গল। বলুন তো, এই করোনায় বিদ্যালয় বন্ধতে এর চেয়ে ভালো স্মৃতিচরণ আর কী হতে পারে!

ঝিনাইদহ/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়