ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

করোনা পরবর্তী শিক্ষায় যে পরিবর্তনগুলো চাই  

মো. মনির হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১  
করোনা পরবর্তী শিক্ষায় যে পরিবর্তনগুলো চাই  

শিক্ষাব্যবস্থা সচল করার লক্ষ্যে আগামী মার্চ মাসের শেষ দিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেই কি সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে, যেখানে করোনা পূর্ববর্তী শিক্ষা শুধু আমাদের ঘরবন্দী হয়ে সময় পার করতে শিখিয়েছে! অর্জিত শিক্ষা বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে সব সমস্যার সুন্দর একটি সমাধান দেওয়া সম্ভব, তা আমাদের জানা-শোনার বাইরেই থেকে গেছে।

মহামারি মোকাবিলায় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটাই ব্যর্থ। তাহলে কি করোনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হবে না? যেখানে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় একজন শিক্ষার্থী জ্ঞান অর্জনের চেয়ে শতকরা কত নম্বর পেলো তার গুরুত্ব বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

একজন শিক্ষার্থী শতকরা কত নম্বর পেলো তার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে তার ভর্তি পরীক্ষা, চাকরি, সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত জিপিএ ৫ ও সিজিপিএ ৪ এ কে কত পেলো তার উপর ভিত্তি করেই শিক্ষার্থীসহ প্রতিষ্ঠানের সফলতা নির্ণয় করা হয়। এটা কি প্রকৃত সফলতা, প্রশ্ন থেকে যায়।

 ব্যক্তি হিসাবে কেউ হয়তো সফল, একক প্রতিষ্ঠান হিসাবে তার পদমর্যাদা হয়তো বেড়ে গেলো, এতে সমাজের মানুষের কি লাভ! দিনমজুর থেকে বিত্তবান পর্যন্ত কেউ যখন করোনার ছোবল থেকে রেহায় পায়নি, ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তাদের কি কোনো প্রত্যাশা ছিল না? যেখানে বিশ্ববিদ্যালয় সমমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চালু রেখে জনগণকে সচেতন করে, সঠিক নিয়ম শৃঙ্খলা মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যাগুলো সমাধানে লক্ষ্যে তাদের কাজ করার অনুপ্রেরণা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা তার বিপরীত প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম।

করোনার পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চয়ই ব্যাপক পরিবর্তন, পরিমার্জন করে আমাদের সামনে হাজির করা উচিত, নয়তো আমরা দিন শেষে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে আজীবন দোষ দিয়ে যাবো। 

তাই করোনার পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি-

১. বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপযুক্ত গবেষণাগার গড়ে তুলতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা নানা বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।

সাধারণত যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গবেষণার হার বেশি, সেইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে সচেতন হয়ে থাকে। এতে যে কোনো দুর্যোগপূর্ণ সময়ে তারা অনেক বেশি সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে পারবে।

২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিগুলোকে অত্যাধুনিক করতে হবে। শিক্ষার্থীরা সহজে যাতে সেখানে প্রবেশ করতে পারে সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত রেফারেন্সমূলক বই, জার্নাল ও পত্রিকা সংগ্রহশালা থাকবে।
 
৩. গবেষণা বাস্তবে প্রয়োগ করার লক্ষ্যে অত্যাধুনিক ল্যাব সংযোজন করতে হবে, যেখানে শিক্ষার্থী তাদের গবেষণার ফলাফল যাচাই করতে পারবে। 

৪. শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রির পরিবর্তে মানসম্মত উচ্চ ডিগ্রি অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। এতে শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের সম্মান প্রদর্শন করা বিষয়টি অনেক বেশি বেড়ে যাবে। ফলে ছাত্র-শিক্ষক বান্ধব শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠবে।

৫. শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে এ বিষয়ে তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর মধ্য দিয়ে সবাই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে, যা আমাদের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায় সুফল বয়ে আনবে।

৬. উচ্চশিক্ষার সিলেবাসগুলোতে মুখস্থ বা গলদকরণ কনটেন্টের পরিবর্তে বিজ্ঞান সম্মত আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করতে হবে। এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে। অন্যদের সঙ্গে যেকোনো বিষয় নিয়ে প্রতিযোগিতা করার দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। সুপরিকল্পিত শিক্ষার আলোয়  দেশ ও জাতিকে আলোকিত করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

জবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়