ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সেশনজটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা, শিক্ষকরা বলছেন ‘না’ 

হাকিম মাহি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ২৪ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৮:৫৯, ২৪ মার্চ ২০২১
সেশনজটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা, শিক্ষকরা বলছেন ‘না’ 

দীর্ঘ এক বছর ধরে চলমান করোনার ভয়াল থাবায় সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায়  স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ‌্যালয় বন্ধ থাকায় পড়াশোনা অনলাইন ক্লাসেই সীমাবদ্ধ। তবে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকায় এই সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া অনেকেরই স্মার্ট ফোন বা অনলাইন ক্লাস করার মতো সুব্যবস্থা নেই। তাদের অভিযোগ, ইন্টারনেটের অভাব ও দুর্বল নেটওয়ার্ক অনলাইন ক্লাসের মান ধরে রাখতে পারছে না।  তবে, সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা বলছেন, সেশনজটের আশঙ্কা নেই, শিগগিরই পরীক্ষা নেওয়ার ব‌্যবস্থা হবে।

সেশনজট নিয়ে উৎকণ্ঠায় থাকা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মাহমুদা হক মনিরা বলেন, ‘দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হওয়ার কথা থাকলেও আমরা এখনো প্রথম বর্ষেই পড়ে আছি। করোনা পরিস্থিতিতে বাকি সব স্বাভাবিক থাকলেও হচ্ছে না ক্লাস, আটকে আছে পরীক্ষা। অথচ, আমাদেরই সহপাঠীরা যারা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে অনলাইনের পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হচ্ছে নতুন ক্লাসে। পরীক্ষার দোহাই দিয়ে যেন আমরা সব কিছু থেকেই পিছিয়ে পড়েছি। ভবিষ্যৎও এখন অনিশ্চিত। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা যেখানে জরুরি, সেখানে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম।’

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আরমান মিয়া বলেন, ‘করোনার জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। প্রথম দিকে আমাদের অনলাইনে ক্লাস হতো। এখন তাও হয় না বললেই চলে। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা নভেম্বরে হওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে সময় মতো পরীক্ষা দিতে পারিনি। দিনকে দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি বেড়েই চলেছে, আমাদের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা কবে হবে, সেই বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সঠিক দিক-নির্দেশনা পাইনি।’ 

ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘দ্বিতীয় বর্ষে থাকার কথা কিন্তু আটকে আছি প্রথম বর্ষে। না হচ্ছে অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস আর না হচ্ছে পরীক্ষা। নির্দিষ্ট সময়ে অনার্স শেষ করা নিয়ে মনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।  মহামারি করোনা আমাদের শিক্ষা জীবনে চলার স্বাভাবিক গতিপথ রোধ করেছে। তবে সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এগিয়ে চলছে।’

ভবিষ‌্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠিত সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘চাকরির বাজার কিংবা অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সব জায়গাতেই প্রাইভেট কলেজ-বিশ্ববিদ‌্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন। আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?’

এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘শুধু যে করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে, তা নয়; এর আগেও বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকতো।  তখনো ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে সেশনজট এড়িয়েছি।  আশা করি, এবারও পারবো।’

রোবায়েত ফেরদৌস আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক থেকে তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত ক্লাস টেস্ট, অ্যাসাইনমেন্ট বা শুধু ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া সব পরীক্ষাই নিয়েছি। এখন শুধু বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পালা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্যাম্পাস খোলার পরপরই ফাইনাল পরীক্ষা নিয়ে নেবো। তখন আর সেশনজটে পড়তে হবে না।’

এ সম্পর্কে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আশরাফ হোসেন বলেন, ‘সেশনজট এড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে স্নাতকের তৃতীয় ও চতুর্থবর্ষের পরীক্ষা নিয়েছি।  স্নাতকোত্তরের ফাইনাল পরীক্ষাও নিয়েছি।  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ঈদের পর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় খুললে যতটুকু পিছিয়ে আছি, আশা করি, দ্রুত ততটুকু এগিয়ে যাবো।  এই সমস্যা তো শুধু আমাদের নয়, এটা পুরো দেশের, এমনকি পুরো বিশ্বেরও।  আশা করি, সব স্বাভাবিক হবে ও শিক্ষার্থীদের সেশনজটও থাকবে না।’
 
একই দাবি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মশিউর রহমানেরও। তিনি বলেন, ‘জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকটাই সেশনজট কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।  কোভিড শুরুর পরে আমরা ‘ক্রাস প্রোগ্রাম’ (ক্যালেন্ডার দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালানোর পদ্ধতি) দিয়ে ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়েছি। এতে আমরা অনেক সুফলও পেয়েছি। আশা করি, কোভিড পরবর্তী সময়েও একই পদ্ধতি অবলম্বন করবো। এতে সেশনজটের কোনো আশঙ্কাই থাকবে না। শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে থাকতে পারে।’

#প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন সরকারি তিতুমীর কলেজ সংবাদদাতা মামুনূর রহমান হৃদয়

/এনই/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়