ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্ব

স্বপ্নীল আকাশ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৩, ২৮ এপ্রিল ২০২১  
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্ব

সাধারণত, স্কুলজীবনে আমাদের অনেক বন্ধু থাকে। কলেজে পড়ার সময়ে অনেকের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা বহুগুণে বেড়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তি হলে তো কথাই নেই। নতুন এক অচেনা পরিবেশে অনেকের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব হয়।

আমাদের একটা প্রচলিত ভুল ধারণা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধুত্ব হয় স্বার্থের জন্য কিংবা অনেক সময় শুনে থাকি ভার্সিটির বন্ধুগুলো শিট, সাজেশন্সের টানেই কাছে আসে, ভালোবাসার টানে নয়।

এই কথাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে অথচ একবারও শুনেনি এমন ছাত্র পাওয়া দুস্কর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বন্ধুত্বের ধরন ও আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ একেকজন একেক মতামত পেশ করবেন। আমার কাছে বন্ধুত্বের সংজ্ঞা কেবল বন্ধুত্বই।

বন্ধুর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে জর্জ হার্ভার্ট বলেছেন, ‘একজন বন্ধু হলো সর্বোৎকৃষ্ট আয়না।’ তার মানে, এ আয়নাতে প্রতিমুহূর্তে সে নিজেকে দেখবে। শুধু বাহ্যিক অবয়বকে নয়, ভেতরটাকেও। বন্ধুত্বটা হওয়া চাই হাত আর চোখের সম্পর্কের মতো। হাতে ব্যথা লাগলে চোখে জল আসে। আর চোখে যদি জল ঝরে, তবে হাত এগিয়ে যায় তা মুছে দিতে। বন্ধু শব্দের মাঝে মিশে আছে নির্ভরতা আর বিশ্বাস।

আমরা যারা ২০১৯-২০ সেশনের, তারা খুবই দুর্ভাগা। ফাস্ট ইয়ার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলতে চলতে সেকেন্ড ইয়ার চলে আসলো। আর সেকেন্ড ইয়ার শেষ হতে হতেই মহামারি কোভিড-১৯ এর হানা। বন্ধ হলো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বাকি দু’বছর অনলাইনেই সেমিস্টার শেষ করতে হচ্ছে। ক্যাম্পাসে একসঙ্গে আর পাশাপাশি বসে কখনো ক্লাস করার সুযোগ হবে কিনা জানি না। কিংবা ক্লাস প্রেজেন্টেশন শেষ করে দলবেঁধে ছবি তুলতে মাঠের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত আর কখনো ছবি তোলাও হবে কি না জানি না। 

যখনই কথাগুলো মনে পড়ে, মনের অজান্তেই চোখের কোণে পানি চলে আসে আর রবিঠাকুরের এই গানটির মনের মধ্যে বাঁজতে থাকে ‘পুরনো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়। ও সেই চোখের দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়। আয় আর-একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়। মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।’

রবি ঠাকুরের এই গানের মতোই চাইলেও হাজার চেষ্টা করেও পুরনো বন্ধুরা একত্র হতে পারবো না কখনো। একেকজন একেক কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বো। যে বন্ধুটার সঙ্গে সারাদিন ক্যাম্পাসে আড্ডা দিয়ে সময় কাটাতাম, ফোন দিলে রিসিভ না করলে অভিমান করতাম। এক বালিশে মাথা রেখে রাতের পর রাত কাটিয়ে দিতাম। সবাই আলাদা হয়ে যাবো। রয়ে যাবে শুধু স্মৃতিগুলো।

যে বন্ধুটির সঙ্গে ইউনিভার্সিটিতে ছোট একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল, আর অভিমান করে কথা বলতাম না। ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে হয়তো কখনো রাস্তায় কিংবা চলন্ত বাসে দেখা হয়ে যাবে তার সঙ্গে আর সব অভিমান ভুলে বুকে জড়িয়ে মনের অজান্তেই কান্না চলে আসবে। হয়তো ভাবতে পারেন এগুলো আমার মনের কল্পনা। কিন্তু না, এমনটাই হতে যাচ্ছে।

ক্লাসে যে বন্ধুটাকে দুষ্টুমি করার জন্য বাচাল বলে সমালোচনা করতাম কিংবা সিজিপিএ খারাপ থাকায় তার কথায় গুরুত্ব দিতাম না, কে জানে হয়তো সে হয়তো আমাদের চেয়ে ভালো পজিশনে যাবে।

ক্ষণস্থায়ী এই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নানা রকমের বন্ধু পাবো নিজের স্বার্থের জন্য বন্ধুত্ব না করে বন্ধুকে ভালোবাসতে শিখুন। ক্যাম্পাস লাইফের বন্ধুত্বটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনার্স শেষ হলে সব বুঝতে পারবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসি বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

ডিআইইউ/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়