ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যেভাবে জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন শাহরিয়ার আহমেদ

আন্তর্জাতিক ক্যাম্পাস ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ৮ মে ২০২১   আপডেট: ১৪:০৮, ৮ মে ২০২১
যেভাবে জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন শাহরিয়ার আহমেদ

জাপানের একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বাংলাদেশি শাহরিয়ার আহমেদ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে চালু হওয়া নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ‘সানজো সিটি বিশ্ববিদ্যালয়’। 

বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের নিইগাতা জেলার সানজো শহরে অবস্থিত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নগর প্রশাসনের সহায়তায় এর পথচলা শুরু হয়। উল্লেখ্য, জাপানের সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের কোনো পদ নেই। তাই নিয়োগপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টই হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। ফলে এই দায়িত্ব অনেকটাই বিস্তৃত এবং চ্যালেঞ্জিং।

জাপানে সাত শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র আটটিতে বিদেশি প্রেসিডেন্ট রয়েছেন। তবে সানজো বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া বাকি সাতটি হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সেদিক থেকে প্রথমবারের মতো দেশটির সরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হয়েছেন কোনো বাংলাদেশি।

শাহরিয়ার আহমেদ উচ্চশিক্ষা অর্জনে জাপানে যান ১৯৮৮ সালে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে লেখাপড়া করতে জাপানি ভাষা জানা প্রয়োজন, তাই ভর্তি হয়েছিলেন টোকিওতে জাপানি ভাষা শেখার একটি স্কুলে। ভাষা রপ্ত হওয়ার পর ভর্তি হন তাকুশোকু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষাগ্রহণ শেষে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ভর্তি হন টোকিও দেনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিকে জাপানি ভাষায় দেনকি বলা হয়। বিজ্ঞানচর্চার সেই বিশ্ববিদ্যালয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর পর্যায়ের গবেষণায় নিয়োজিত থাকাকালীন শাহরিয়ার আহমেদ কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড নিয়ে কাজ করেছেন। কৃত্রিম হৃৎপিণ্ডের কার্যকারিতা, বিশেষ করে মানবদেহে এটির ব্যবহারের সময় রক্তকণিকা ভেঙে যাওয়ার সমস্যা সমাধানে তার উদ্ভাবন ছিল ব্যতিক্রমী এক অর্জন। 

পিএইচডি সম্পন্ন হওয়ার পর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পান। এরপর নিইগাতার সাঙ্গিও বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কয়েক বছর শিক্ষকতা শেষে যোগ দিয়েছিলেন ওকিনাওয়ার আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটে। সেখানে থাকা অবস্থায় এবছর এপ্রিল মাসে চালু হওয়া নিইগাতা জেলার সানজো বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের পদ তিনি গ্রহণ করেছেন। পেশাগত দক্ষতা ও পারদর্শিতার মধ্যে দিয়ে শিক্ষকতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে তিনি পৌঁছেছেন।

নতুন এই বিদ্যাপীঠকে প্রযুক্তিশিক্ষার ক্ষেত্রে জাপানের একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলায় তিনি এখন সার্বক্ষণিকভাবে নিয়োজিত আছেন। প্রথম বছর ৮১ জন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন এবং এরা সবাই জাপানি। দুই থেকে তিন বছর পর বিদেশি ছাত্র গ্রহণের ব্যবস্থা তার বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারবে বলে আশা করেন শাহরিয়ার আহমেদ। সেই সুযোগ দেখা দিলে বাংলাদেশের ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানান তিনি। 

লক্ষ্য অর্জনে মানুষ প্রতিকূলতার মধ্যেও নিষ্ঠাবান থেকে গেলে সাফল্য যে জীবনে ধরা দিতে পারে, তার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত শাহরিয়ার আহমেদ। জাপানে তিনি এসেছিলেন মনের গভীরে প্রযুক্তিবিদ হওয়ার স্বপ্ন লালন করে। জাপানি ভাষার স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা গ্রহণের কঠিন জীবনে কখনো হাল ছেড়ে দেননি। জাপানে নিজের পরিচয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও তিনি তুলে এনেছেন অনন্য এক উচ্চতায়।

সাব্বির/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়