ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

উপাচার্য পরিচয় না দিতে ড. কলিমউল্লাহকে লিগ্যাল নোটিশ

মোবাশ্বের আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০০, ৬ জুন ২০২১   আপডেট: ১৭:০৩, ৬ জুন ২০২১
উপাচার্য পরিচয় না দিতে ড. কলিমউল্লাহকে লিগ্যাল নোটিশ

অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য হিসেবে পরিচয় না দিতে এবং তার দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশিদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে দুটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। 

শনিবার (৫ জুন) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে এবং রোববার (৬ জুন) বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বেরোবি শাখার সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর খন্দকার রফিক হাসনাইন এসব নোটিশ দেন। পৃথকভাবে আগামী তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

ডক্টর কলিমউল্লাহকে পাঠানো নোটিশে উপাচার্য হিসেবে চার বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় উপাচার্য পদের কোনো কার্যক্রম না চালানো, ফাইলে সই না করা, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ না করা, সিন্ডিকেট ও বিভিন্ন সভা থেকে বিরত থাকাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোনো কার্যক্রম না চালাতে সতর্ক করা হয়েছে। 

নোটিশে বলা হয়, ২০১৭ সালের ১ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে চার বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জনস্বার্থে জারিকৃত আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চলতি বছরের গত ৩১ মে ড. কলিমউল্লাহর চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। এরপরও তিনি অনেক ফাইলে স্বাক্ষর করেছেন। এমনকি কিছু ফাইল পূর্বে তারিখ দেখিয়েও স্বাক্ষর করেছেন। এই কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল। চার বছর উপাচার্য পদে থাকার পরও জোরপূর্বক পদে থেকে বিভিন্ন ফাইল স্বাক্ষর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুবিধা গ্রহণ করেছেন, যা বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। 

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশিদের আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, ট্রেজারার হিসেবে যোগদান করার পর থেকে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর দুর্নীতি ও অবৈধ সব কর্মকাণ্ডের আর্থিক অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছেন ট্রেজারার ড. হাসিবুর রশিদ। রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে তিনি তার নিয়োগ প্রজ্ঞাপনের সব শর্ত লঙ্ঘন করে চলেছেন। এছাড়া তিনি নিজেও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। 

নোটিশে আরও বলা হয়, অধ্যাপক হাসিবুর রশিদ বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন এবং ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে অবৈধভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ পরিপন্থী। এই আইনের ধারা ১৩ অনুযায়ী ট্রেজারার পদটি শুধু অর্থ সংশ্লিষ্ট। ট্রেজারার হিসেবে তিনি সাবেক উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর সব অবৈধ কর্মকাণ্ডের আর্থিক অনুমোদন দিয়ে চলেছেন। এছাড়া, তিনি মিথ্যা, ভুয়া ও জাল ভাউচার দিয়ে অবৈধ বিল তৈরি করে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন এবং অন্যদেরও লাভবান হতে সাহায্য করেছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ চলতি বছরের ১৩ মার্চ ট্রেজারার হাসিবুর রশিদ এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর ৭৯০ পৃষ্ঠার ১১১টি অভিযোগ সম্বলিত দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। সেখানে দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে ট্রেজারার হাসিবুর রশিদের নামও বিশেষ গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে। এছাড়া, ট্রেজারার হাসিবুর রশিদসহ ডক্টর কলিমউল্লাহর দুর্নীতির সহযোগীদের অপসারণের জন্য গত ১ জুন ২০২১ ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধু পরিষদ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। 

এ বিষয়ে জানতে অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এবিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক হাসিবুর রশিদ বলেন, ‘আমি এখনো কোনো লিগ্যাল নোটিশ পাইনি। আমার নামে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ সঠিক নয়। বরং আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

বেরোবি/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়