ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বন্ধুর জন্মদিনে নতুন উদ্যোগ ‘গ্রিন হ্যাপি বার্থডে’ 

তমাল, ঢাবি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  
বন্ধুর জন্মদিনে নতুন উদ্যোগ ‘গ্রিন হ্যাপি বার্থডে’ 

মহিউদ্দিন রনি। পড়াশোনা করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স বিভাগে। রনি তার কোনো এক বন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করার সময় গায়ে কেক মাখাতে গিয়ে বন্ধুকে নিজের অজান্তেই আহত করে ফেলেন। সেদিনের সেই ঘটনার পর রনির মনে অনুশোচনার জন্ম নেয়। বন্ধুকে আঘাত দেওয়াটা কোনো ভাবেই যেনো মেনে নিতে পারছিলেন না। 

সেই ঘটনার পর রনি উপলব্ধি করেন জন্মদিন উদযাপনের এই রীতিটা কী আমরা পরিবর্তন করতে পারি না? আমরা কী এমন কোনো একটা রীতির প্রচলন করতে পারি না, যেটার মাধ্যমে বন্ধুর জন্মদিন উদযাপন করার পাশাপাশি পরিবেশ বান্ধব কার্যক্রম সম্পাদন হবে?

জন্মদিন মানেই বিশেষ কিছু। শিক্ষা জীবনের জন্মদিন উদযাপন বিশেষ মাত্রা যুক্ত করে সবার জীবনেই। প্রিয়জনের জন্মদিন ঘিরে থাকে আমাদের নানা আয়োজন। কিন্তু ইদানীং একটা ট্রেন্ড বেশ লক্ষণীয়, আমরা বন্ধুর জন্মদিনে তার গায়ে কেক মাখাই, পচা ডিম ফাটাই, কখনো বা আটা ময়দার বৃষ্টি ঝরাই। এতে করে বন্ধুটির হয়তো ক্ষতি হয়ে যায়, তার শখের জামাটি নষ্ট করে ফেলি। কখনো বা নাকে চোখে ডিম, আটা, ময়দার কিছু অংশ ঢুকে তার শ্বাসরুদ্ধ করে দেই। কখনো বা তার চোখের ক্ষতি করে ফেলি। বন্ধু হয়তো মুখ ফুটে প্রতিবাদ করতে পারে না। নীরবে সহ্য করে যায় বন্ধুদের এই অত্যাচার। আমরাও কখনো উপলব্ধি করতে পারি না তার কষ্টটা। বিনিময়ে বন্ধুর উপকার করার থেকে ক্ষতিটা বেশি করে ফেলছি আমরা। 

রনির অনুশোচনা থেকেই মাথায় আসে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবের বিষয়টি। বন্ধুর জন্মদিনে তো আমরা কত কিছুই উপহার দেই, আটা-ময়দা আর পচা ডিম মেখেও তাদের এক প্রকার শাস্তি দেই। এসব না করে তো আমরা তাকে চারা গাছ উপহার দিতে পারি। বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাদের বারবার সচেতন করতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই Green Happy Birthday আইডিয়াটা চলে আসে।

আমাদের প্রিয় বাসভূমি এই সবুজ পৃথিবীর রক্ষার্থে বায়ুমন্ডলের ওজন স্তর বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু প্রতিনিয়তই সেই স্তরের ক্ষতি হচ্ছে। দিন দিন আমরা গাছপালা, বনাঞ্চল কেটে ধ্বংস করে ফেলছি। প্রকৃতির প্রতি আমাদের এ অন্যায়, অবিচারের মাত্রা কমছেই না। আমরা কতটা অকৃতজ্ঞ প্রকৃতির কাছে, আমাদের পৃথিবীর কাছে। মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে নিমজ্জিত হচ্ছে সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলসমূহ। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। 

মহিউদ্দিন রনি সামাজিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ Green Happy Birthday, আর্টিস্ট ফর চেঞ্জ নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ কিছুদিন ধরে প্রচার করে আসছেন। প্রকল্পটি ইতোমধ্যে বৃটিশ কাউন্সিলের কপ-২৬ চ্যালেঞ্জ ফান্ড জিতে নিয়েছে। প্রকল্পটির সাথে বর্তমানে দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট এবং ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশ উৎসাহ প্রদান করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ১১ হাজার তরুণ এই কাজে স্বেচ্ছায় যুক্ত হয়েছেন।

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক এই উদ্যোগে সাড়া দিয়েছেন তরুণ প্রজন্মের আইডল আয়মান সাদিক, এনিমেটর আন্তিক মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদের এজিএস সাদ্দাম হোসেইন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, জনপ্রিয় তরুণ অভিনেতা খায়রুল বাশার, অভিনেত্রী ও মডেল সুনেহরা বিনতে কামাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ইনান এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক হায়দার মোহাম্মদ জিতু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে ভার্চুয়ালি একাত্মতা প্রকাশের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবে অংশ নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

জন্মদিন পালনের এই অসুস্থ সংস্কৃতির প্রচলন প্রতিরোধ করে সবুজ বিপ্লব ঘটাতে শিক্ষার্থীরা নিজে সচেতন হচ্ছেন। পাশাপাশি প্রিয়জন, পরিবার এবং পরিচিতদের নিজ উদ্যোগে এখন সবাই সবুজায়নের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। সবার প্রচেষ্টায় একদিন পৃথবী আবার সবুজ হবে, ফিরে পাবে প্রাণ। জলবায়ু পরিবর্তনে আর কেউ বাস্তু হারা হবে না, এটাই আমাদের স্বপ্ন।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়