ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ইলিশের প্রজননে আরও যত্নশীল হতে হবে

আরিফা আক্তার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ১৩ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১২:৪৯, ১৩ অক্টোবর ২০২১
ইলিশের প্রজননে আরও যত্নশীল হতে হবে

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। রূপে ও স্বাদে মাছের রাজাও এটি। জাতীয় মাছ হিসেবে ইলিশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব বরাবরই অনেক বেশি। এর প্রজনন বৃদ্ধির মাধ্যমে দাম নিয়ন্ত্রণ করে মানুষের হাতের নাগালে নিয়ে আসা যেতে পারে। দেশের প্রতিটি মানুষের রয়েছে মাছ খাওয়ার অধিকার। ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে ইলিশ মাছকে আমাদের দেশের মাছ মনে করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দূষণ ও পানি দূষণের ফলে ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধিহ্রাসসহ নানা রকম জটিলতা তৈরি হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের মজুদের বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন হতে পারে। ইলিশের ঝাঁক  মোহনার দিক পরিবর্তন করে নিম্নাঞ্চলে যেতে পারে, সাধারণ জেলে যারা ইলিশ মাছের সাথে জড়িত তারা সংখ্যায় কম মাছ পাবেন, বঙ্গোপসাগরের সাইক্লোন বা বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে মাছ জেলেদের হাতের বাইরে চলে যাবে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা এই তিনটি নদীর মোহনায় পানি প্রবাহ কমে গেলে ইলিশের প্রজনন ক্ষমতাও কমে যাবে, কলকারখানার বর্জ্য বা কীটনাশকসহ পানি দূষণের ফলে ইলিশের প্রজনন ক্ষমতা কমে আসবে।

প্রকৃতিগতভাবেই ইলিশ দ্রুত স্থান পরিবর্তনকারী মাছ। অত্যধিক পানি দূষণ ও পানিতে বিভিন্ন রকম রাসায়নিক পদার্থ মিশে যাওয়ার ফলে ইলিশ দ্রুতই দেশ, স্থান ত‌্যাগ করতে পারে। এই মাছ মিঠা পানিতে ডিম পাড়ে এবং পরবর্তী সময়ে নোনা পানিতে চলে যায়। একটি মা ইলিশের ডিম ধারণ করার ক্ষমতা ১৫ থেকে ২০ লাখ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি দূষণের কারণে এর প্রজনন ক্ষমতা দিন দিন কমে বর্তমানে ১২ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে। ইলিশ সাগরে থাকলেই ধরা পড়ে না। অনেক সময় এই মাছ গভীর পানি থেকে উঠে আসে না। এর জন্য প্রয়োজন অনুকূল আবহাওয়া। যেমন পর্যাপ্ত বৃষ্টি, পানির চাপ, খাদ্য ইত্যাদি। এই মাছের প্রথম হকদার হচ্ছেন অতিদরিদ্র জেলেরা, তাদের জন্যই মাছ সংরক্ষণ করা হয়। মাছ না 

এ বছর মৌসুমের বেশি অর্ধেক সময় অতিবাহিত হয়ে গেলও আশানুরূপ ইলিশের দেখা নেই, দামও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। তারপরও যতটা মাছ আহরিত হয়, তার একটি বড় অংশ চলে যায় উপসাগরীয় দেশগুলোসহ উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায়। এই দেশগুলোই ইলিশের জন্য সবচেয়ে বড় বাজার। এদিকে ভারতে যেটুকু ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে, তার বড় অংশই আসছে দেশটির পশ্চিম উপকূলের নর্মদা মোহনা সংলগ্ন এলাকা থেকে। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বিদেশের বড় বড় বাজারে অনেক দামে বিক্রি হয় বাংলাদেশের ইলিশ। অথচ এই বিশাল মুনাফার ছিটেফোঁটাও পায় না দেশের ক্ষুদ্র জেলেরা। কেবল জেলেরাই নদীতে মাছের সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নন, এই খাতের সাথের যুক্ত স্থানীয় ব্যবসায়ীও সমানভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

এই মৌসুমে মূলত ইলিশ মাছের প্রধান চালান আসে সাগর থেকে। মোহনায় অতিরিক্ত পলি জমার ফলে নদীর মুখগুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। আর এর ফলে প্রজনন মৌসুমে ইলিশের পরিযান মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি ইলিশ মাছের উজানে যেতে প্রয়োজন তুলনামূলকভাবে দূষণমুক্ত পানি। ইলিশের চিহ্নিত অভয়ারণ‌্য বা চলাচলের রাস্তায় নৌপরিহন চলাচলের মাত্রা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ইলিশের পরিযান বা অভিপ্রয়ানকে বাধাগ্রস্ত করছে। 

ইলিশ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য গণসচেতনতা সবচেয়ে জরুরি। বাংলার এই রুপালি ইলিশকে নিয়ে আরও বিস্তৃত পর্যায়ে গবেষণা প্রয়োজন।  পানি দূষণ রোধ, পানিতে যেন বর্জ্য পদার্থ, রাসায়নিক দ্রব্যাদি এছাড়াও কোনো ধরনের দূষণ না ঘটে, সেদিকে বিশেষ নজরদারি জোরদার করতে হবে। ২০১১ সাল থেকে জাটকা বা মা ইলিশ না ধরার জন্য সরকার সব জেলেকে সচেতন করে আসছে। দরিদ্র জেলেদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় তাদের অনেক বেশি সহযোগিতা দিতে হবে। 

ইলিশ সংরক্ষণে একটি স্বতন্ত্র তহবিল গঠন করা প্রয়োজন, যেন দুর্যোগের সময় জেলেদের বেশি করে সহায়তা দেওয়া যায়, সঠিক বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাহায‌্যে মা–ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারণ করতে হবে। যেসব জেলের মাছ ধরার ক্ষমতা নেই, তাদের ইলিশ মাছ ধরার সামগ্রী দিয়ে সাহায্য করা যেতে পারে।  ইলিশ মাছ সংরক্ষণে জেলেদের বেশি পরিমাণ খাদ্যশস্য বিতরণ একটি বড় ভূমিকা রেখেতে পারে। 

জেলেদের প্রণোদনা, গণমানুষের ব্যাপক সচেতনতা ও প্রশাসনের উদ্যোগ ইলিশ উৎপাদনে অন্যতম ভূমিকা রাখতে পারে। সর্বোপরি ইলিশ মাছ রক্ষায় এবং এর প্রজনন বৃদ্ধিতে প্রতিটি মহলের সর্বাধিক সচেতনতা জরুরি ।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ (তৃতীয় বর্ষ), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়