ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

আভিজাত্যে মোড়ানো যে বাড়ির প্রতিটি ইট ও কক্ষ

আবু সোহান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:১০, ১৪ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ১৫:১৪, ১৪ অক্টোবর ২০২১
আভিজাত্যে মোড়ানো যে বাড়ির প্রতিটি ইট ও কক্ষ

নকিপুর জমিদার বাড়ি, সাতক্ষীরা

প্রাচীন নিদর্শন এবং জমিদারি প্রথার এক দৃষ্টান্ত নকিপুরের জমিদার বাড়ি। স্থাপত্য শিল্পের শৈল্পিক কারুকার্যে মোড়ানো বাড়িটি সবার নজর কাড়ে। জমিদার বাড়িটি সাতক্ষীরা শহর থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে শ্যামনগর উপজেলার নকিপুরে।

১৮৮৮ সালে হরিচরণ রায় চৌধুরী একচল্লিশ কক্ষের তিনতলা বিশিষ্ট এল-প্যার্টানের এই বাড়িটি নির্মাণ করেন। এটি এখন পরিণত হয়েছে দুইতলায় এবং কক্ষগুলোর সংখ্যাও হাতেগোনা। স্থানীয়দের কাছে এটি রায় চৌধুরীর বাড়ি ও নকিপুর জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। 

গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটির বিশালতা প্রথমে আমরা কেউ বুঝতে পারিনি। ছোট ছোট বটগাছ আর লতাপাতা বাড়িটির নিজস্বতা নষ্ট করেছে। সময় আর সুযোগের সাথে গাছগুলোও এটির গায়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে গেছে। দূর থেকে শুধু এটার ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়। এক পা দুই পা করে বাড়িটার কাছে গেলাম। খুঁটে খুঁটে সবকিছু দেখতে শুরু করলাম, যতই দেখছি অবাক হয়েছি। 

আভিজাত্য আর গাম্ভীর্যে ভরপুর প্রতিটি ইট, প্রতিটি কক্ষ। জানালা আর দরজার ক্ষোপগুলো অসাধারণ কারুকার্যের চাদরে মোড়ানো। সেগুলো দেখেই আমার গায়ে শিরশির করে ওঠে। ভাবতে শুরু করলাম, বাড়িটির প্রতিটি জায়গা একদিন কতই না কোলাহল, বিলাসিতা আর আড়ম্বরপূর্ণ থাকতো। কিন্তু সব আড়ম্বর আর নৈপুণ্যতা আজ কালের গহ্বরে তলিয়ে যাওয়ার জন্য দিন গুণছে! 

চোখের খুরাক মেটাতে যখন সবাই ধ্বংসাবশেষ বাড়িটি বিচক্ষণতার সাথে দেখছি এবং ছবি তুলছি, ঠিক তখনই নিস্তব্ধতা ভেঙে আমাদেরই একজন তৎকালীন খরচের সাথে এর বর্তমান বাজার মূল্য নিয়ে কথা বলে উঠলেন। সবাই একযোগে হেসে উঠলাম, এটা নিয়ে নিজেরা কিছু সময় দর-কষাকষি আর বাক-বিতণ্ডাও করলাম। 

এক ভাইয়ের কৌতুহলের বশবর্তী হয়ে বাড়িটার চারিপাশে ঘুরলাম, যদি একটা সোনার মোহর পাই এই আশায়। সোনার মোহর না পেলেও দর্শনার্থীদের ফেলে আসা কিছু জিনিস ঠিকই পেয়েছি। অন্য দর্শনার্থীরাও হয়ত আমাদের মতো সোনার মোহর খুঁজেছিল এটা বুঝতে বাকি থাকল না। ইট, চুন আর সুরকি মিশ্রিত বাড়িটি চোখের সঙ্গে মনের ক্ষুধাও মিটিয়েছে। প্রতিটা ইটের পরতে পরতে রাজকীয়তার সুঘ্রাণ এখনো বিদ্যমান। 

কিছুটা হেঁটে দেখা পেলাম এক বিশাল পুকুরের। চারপাশে অসংখ্য গাছ আর আগাছা দিয়ে পুকুরের বাঁধগুলো আবৃত হয়ে গেছে। ঝি ঝি পোকার ডাকে পরিবেশটা মুখরিত। পুকুরে নামার জন্য ইট দিয়ে বাঁধানো ঘাট আমার নজর এড়াতে পারেনি। ছোট ছোট ইট দিয়ে বাঁধানো ঘাটটি দেখে মনে হলো ললিতকলার আবেগ মিশ্রিত শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়ে আঁকা ছবি। এসব দেখে ভাবতে ভাবতে সূর্য যে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে, তা বুঝতে পারিনি, সেটা জানান দিতে হঠাৎ গাড়ির হর্ন বেজে উঠল। বুঝতে পেলাম সময় শেষ। অতঃপর ঘোরাঘুরি শেষে আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। 

নকিপুরের জমিদার বাড়িটি নিপুণ কারুকার্যে ভরপুর। বাড়ির ইতিহাস ও ঐতিহ্য ভ্রমণপিপাসুদের মন ও চোখের খোরাক মেটায়। ঐতিহ্যবাহী এই বাড়ি স্থানীয়রা দেখাশোনার পাশাপাশি সরকারের দৃষ্টিপাত জরুরি। প্রাণবন্ত কিছুসময় আমার হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। 

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়