ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সবুজ গালিচায় সজীব প্রকৃতি

আহমেদ শাহীন, সিলেট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৫ অক্টোবর ২০২১   আপডেট: ০৮:৪৬, ২৫ অক্টোবর ২০২১
সবুজ গালিচায় সজীব প্রকৃতি

চারপাশে সবুজের সমারোহ। নীল আকাশের নিচে যেন সবুজ গালিচা পেতে আছে সজীব প্রকৃতি। উঁচু-নিচু টিলা এবং টিলাঘেরা সমতলে সবুজের চাষাবাদ। মাঝে মাঝে টিলাবেষ্টিত ছোট ছোট জনপদ। পাহাড়ের কিনার ঘেঁষে ছুটে গেছে আঁকাবাঁকা মেঠোপথ। কোনো যান্ত্রিক দূষণ নেই। কোথাও আবার ছুটে চলছে রূপালী ঝরনাধারা। প্রকৃতির সব সৌন্দর্যের সম্মেলন যেন এখানে।

অন্তহীন সৌন্দর্যে একাকার হয়ে আছে সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকার পাশে বাইশটিলা। সিলেটের বাইশটিলার খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ হলেও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অন্য এক ভালো লাগার ধারক হয়ে আছে সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকার পাশে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্র। ভ্রমণ বিলাসী মানুষের কাছে আনন্দ ভ্রমণ কিংবা উচ্ছ্বল সময় কাটানোর প্রথম পছন্দের স্থান এটি। শহরের একেবারেই অদূরে হওয়ায় পর্যটকরা প্রথমেই ছুটে যান সেখানে। তারপর ঘুরে দেখেন এপাশ থেকে ওপাশ। আপনিও দেখে আসতে পারেন নৌকার সমারোহ।

যা দেখবেন

সিলেট সদর উপজেলার বিমান বন্দর এলাকায় অবস্থিত বাইশটিলা। এখানে প্রবেশের আগে হাতের বাঁ-দিকে দেখবেন লাক্কাতুরা স্টেডিয়াম। বাইশটিলায় প্রবেশপথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বা রিকশায় যেতে যেতে ডানে-বাঁয়ে দেখতে থাকুন সবুজ আর সবুজের সমারোহ। একটু সামনে অগ্রসর হলেই দেখতে পারেন ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ঘুরতে ঘুরতে রাস্তা ছেড়ে বাইশটিলায় প্রবেশ করতে পারেন। আপনি যদি রাস্তা দিয়ে এগোতে থাকেন, তাহলে ৮-১০ মিনিট পায়ে হাঁটলে পাবেন ছোটখাটো চায়ের দোকান। ছোটখাটো এই বাজারটিও কিন্তু বিখ্যাত একটি বিশেষ কারণে। তা হলো গরুর খাঁটি দুধের চা।

মানসম্পন্ন হোটেল বা চা স্টল না হলেও পাঁচ টাকায় গরুর খাঁটি দুধের চা আপনার ভ্রমণ ক্লান্তি দূর করে দেবে। এই বাজারের উত্তর দিকে আরও কয়েক মিনিট হাঁটলে পাবেন বাইশটিলার দেখা। আর যদি আপনি ফিরে আসতে চান, তাহলে এখান থেকে সিএনজি চেপে বসতে পারেন। আম্বরখানা পয়েন্ট পর্যন্ত ভাড়া নেবে ৫০ টাকা। বছরের যেকোনো সময় বাইশটিলা ভ্রমণ উপযোগী হলেও জোসনা রাতে সুবজের বুকে রূপালি আলোর খেলা আপনাকে স্বর্গ দর্শনের আনন্দ দেবে।

যেভাবে যাবেন

রাজধানী থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানযোগে আপনি সিলেট মহানগরীতে প্রবেশ করতে পারেন। সায়দাবাদ-ফকিরাপুল থেকে দূরপাল্লার বাসে সিলেটের দক্ষিণ সুরমাস্থ কদমতলী যেতে আপনার খরচ পড়বে সাড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেখান থেকে বন্দরবাজার যেতে রিকশায় খরচ হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা আর সিএনজি অটোরিকশায় ৭০ থেকে ১০০ টাকা। বন্দরবাজার থেকে বিমানবন্দর বাজার বা বাইশটিলা প্রবেশমুখ পর্যন্ত সিএনজি অটোরিকশায় যেতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ৫০ টাকা। রিজার্ভ নিয়ে গেলে খরচ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।

যেখানে থাকবেন

সিলেট শহরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, দরগা গেইট এলাকায় প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে থাকার খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া কয়েকটি অভিজাত হোটেলও আছে।

শেষ চিরকুট

বাইশটিলা লাগোয়া পথে যেতে যেতে দেখা সবুজ দৃশ্যপট, শিল্পিত লোকালয় পর্যটকদের নজর কাড়ে সহজেই। রাস্তার পাশেই চা প্রক্রিয়াজাতকরণ হওয়ায় নাকে লাগে সতেজ চায়ের মধুমাখা ঘ্রাণ। আসলেই অসাধারণ! দু’পাশের সবুজ প্রকৃতির ছায়া যেন আছড়ে পড়েছে স্রোতস্বিনীর বুকে। সবুজের সাথে সবুজের কি অপরূপ মেলবন্ধন! আপনার আগামীর জন্য এখানেও ফ্রেমবন্দি করে রাখতে পারেন কিছুটা সময়। সিলেট, যেন সবুজ প্রকৃতির অভয়াশ্রম! আর সবসময় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা মানুষের জন্য সেরা সময় এখনই। যখন প্রকৃতির সব বিচিত্র সৌন্দর্য মিশে আছে চা গাছের সবুজ পাতায়। তো এই অপরূপ চায়ের দেশে আপনাকে স্বাগতম। দেখতে পারেন মালনীছড়া চা বাগান সিলেট শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত। শহরের কেন্দ্রস্থল জিন্দাবাজার পয়েন্ট থেকে গাড়িতে মাত্র ১৫ মিনিটের পথ। সিলেট শহর থেকে রিকশাযোগে অথবা অটোরিকশা বা গাড়িতে বিমানবন্দর রোডে চা বাগানটি পাওয়া যাবে।

ছবিতে যা দেখা যায়

বিশাল বাইশটিলার হাওরে নৌ ভ্রমণ করার জন্য দূর দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক পর্যটক এখানে আসেন, হাওরের চতুর্দিকে সবুজের সমারোহ।  শান্ত পানিতে হঠাৎ পানকৌড়ির ডুব দিয়ে মাছ শিকার দেখতে পাওয়া যায়, ডিংগি নৌকায় জেলেদের মাছ ধরা, লেকের পানিতে বিশাল বাঁশের চালি ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া, হাওরে পালা হাঁসের ঝাঁকের বিচরণ এই সবই বাওরকান্দি হাওরের সৌন্দর্য্য বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। ছুটির দিনে সিলেটের নগরীর পাশে একটি বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ে ওঠেছে এই জায়গাটি, বিকেল হলেই মানুষের ভরপুর হয়ে ওঠে।

/মাহি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়