ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় চান শিক্ষার্থীরা

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জবি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪০, ১৯ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৫:৫১, ১৯ জানুয়ারি ২০২২
মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় চান শিক্ষার্থীরা

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকরা হচ্ছেন সেই মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর। জাতির চালিকা শক্তি ঠিক রাখার জন্য শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম। একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষক মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। ২০০৩ সালের ১৯ জানুয়ারি বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে তৎকালীন সরকার এ দিনটিকে ‌‘জাতীয় শিক্ষক দিবস’ হিসেবে চালু করে। দিবসটি উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

পেশার ঊর্ধ্বে শিক্ষকতা

মানবশিশুর জন্মের পর থেকে বাবা-মা যেমন তাদের ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা দিয়ে বড় করে তোলেন, তেমনি শিক্ষকরা শিক্ষার আলো দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে যান। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমেই নয়, বাস্তবমুখী ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে একজন সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী, সৎ ও সাহসী মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষাটা প্রদান করেন আমাদের শিক্ষকরাই। তাদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, আদর ও শাসন এবং নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সৎ, সাহসী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজ ও জাতি গঠন, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে, দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে, বিশ্বের দরবারে নিজ দেশের গৌরবময় অবস্থান গড়ে তুলতে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে একটি শিক্ষিত জাতি।

শ্রাবন্তী হরি, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

ভালো থাকুক জাতি গঠনের কারিগররা

শিক্ষক শব্দটি কানে প্রবেশের সাথে সাথেই শ্রদ্ধায় কেমন মাথা নত হতে আসে। উন্নত জাতি গঠনের সবচেয়ে মহান দায়িত্বটি যারা নিরলসভাবে পালন করে যাচ্ছেন, প্রতিনিয়ত তাদের প্রতি যথার্থ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ আসলে ভাষায় অসম্ভব। একজন আদর্শ শিক্ষকের জ্ঞান, নৈতিকতা ও মানবিক গুণাবলির আদর্শে আলোকিত হয় সমস্ত জাতি। তাদের শিক্ষায় সূর্যের আলোর মতো তেজস্বী ও প্রখর হয়ে ওঠে পরবর্তী প্রজন্মের অনুজেরা। যারা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র পরিচালনায় ছড়িয়ে দেয় সেই আলোর ছটা। তাই মানুষ তৈরির এই মহান কারিগরদের যথার্থ মূল্যায়ন নিশ্চিতকরণে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। জাতীয় শিক্ষক দিবসে জাতির এই সূর্য সন্তানদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর কৃতজ্ঞতা।

জান্নাত আরা, শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ

জাতির ভবিষ্যৎ শিক্ষক

একটি জাতি গঠনের পরিচালক ও নির্দেশক হলেন একজন শিক্ষক। শিক্ষকদের মাধ্যমেই মেধা, জ্ঞান এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চারিত হয়। সেই মেধার পরিচর্যার দায়িত্বে থাকেন শিক্ষকরা। আমাদের শিক্ষকরা আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে কোন অবস্থানে আছেন, তাদের সম্মানজনক জীবনযাপনের জন্য সেই সুযোগ সুবিধা পর্যাপ্ত কি না, সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আমাদের সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মোটামুটি সুযোগ-সুবিধা থাকলেও বিভিন্ন প্রান্তিক অঞ্চলের যে শিক্ষকরা আছেন, তারা হয়তো সেই সুযোগ-সুবিধাটা পায় না। যদিও অনেক শিক্ষকের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা কিছুটা হলেও দেওয়া হচ্ছে এবং অন্যান্য সরকারি দিনের ন্যায় এই দিনটিতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা উচিত শিক্ষকদের জন্য। আমাদের উচিত সবসময় তাদের যোগ্য সম্মান ও ভালোবাসা দেওয়া। তারা ক্রমাগত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের শিক্ষিত করে তোলেন। তাদের অনুপ্রেরণার জন্যই আমরা জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারি।

তন্বী আক্তার, শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

শিক্ষকরা হোক পথপ্রদর্শক

ভালো-মন্দের শিক্ষা দিয়ে একজন শিক্ষক তার ছাত্রকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। অনেক শিক্ষকই আছেন, যারা তাদের ব্যক্তিগত জীবনে সময় দেওয়া থেকে তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বেশি সময় ব্যয় করেন। এছাড়া এমন শিক্ষকের উদাহরণও পাওয়া যাবে, যারা বিনা পয়সায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করে থাকেন। তবে বর্তমানে শিক্ষক এবং ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। অধিকাংশ শিক্ষক তাদের পেশা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা চাকরি জীবনে বেতন বা চাকরি জীবন শেষে পেনশনটা ঠিকমতো পান না। 

এছাড়াও করোনা পরিস্থিতিতে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষক অন্য পেশা খুঁজে নিতে বাধ্য হয়েছেন। শিক্ষকরা যাতে বর্তমান প্রজন্মের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, নির্দ্বিধায় শিক্ষাদান করে যেতে পারেন সে জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সরকারি বেসরকারি কর্মসূচির মাধ্যমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা, তাদের কাজকে গুরুত্ব এবং স্বীকৃতি দিতে হবে।

শ্রুতিলেখা বিশ্বাস, শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ

ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ থাকুক

একটি শিশু যখন গুটিগুটি পায়ে পৃথিবীর চলমান নিয়ম-কানুনের মধ্যে খোলস খুলে বের হয়, তখনি তাদের বড় একটা অংশ শিক্ষকের সঙ্গে জুড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা পরিবারের সদস্যদের চাইতে শিক্ষকদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু শতাব্দীর পরিবর্তনে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক দিন দিন যেনো শুধু ক্লাসরুম পর্যন্তই বিরাজমান, এর কারণ নানারকম সামাজিক অবক্ষয়, শিক্ষকের প্রতি ছাত্রদের বৈশ্বিকভাবে গড়ে উঠা নানারকম নেতিবাচক ধারণা, শিক্ষকের অনীহা ইত্যাদি। শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান, সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করলেই তারা শিক্ষকতাকে শুধু পেশা নয়, ভালোবেসে গ্রহণ করবে। ভালোবেসে গড়ে উঠবে ছাত্র-শিক্ষকের পুত্র-কন্যা তুল্য সম্পর্ক।

আনতাজ হেনা আখি, শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ

আলোকিত সমাজ বিনির্মাণের চালিকাশক্তি শিক্ষক 

একজন শিক্ষক একজন ছাত্রের অভিভাবক। শিক্ষক যে শুধু পড়াশোনার ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করেব, এমন না। একজন শিক্ষক একজন ছাত্রকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন। ছাত্রদের মনের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে তোলেন। একটা ছাত্রের জীবনের লক্ষ্য থেকে শুরু করে জীবনের সফলতার প্রত্যেকটা ধাপে শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। আলোকিত সমাজ গঠনের মূল চালিকাশক্তি ও দক্ষ কারিগর তিনি। 

শিক্ষক মানুষের সুপ্ত প্রতিভা, গুণাবলির বিকাশ, ব্যক্তিত্বের জাগরণ, মেধা-মননে উৎকর্ষতা সাধন করে জীবন আলোকিত করেন। বাবা-মা শিশুকে জন্ম দেন ও লালন-পালন করেন ঠিকই কিন্তু তাকে সফল ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন শিক্ষক। সমাজে আধুনিকতার সূচনা ঘটান শিক্ষক। কারণ তিনি জ্ঞানে-বুদ্ধিতে ও পরিকল্পনায় থাকেন সবার চেয়ে এগিয়ে। তাই একজন শিক্ষককে সভ্যতার রচয়িতা বলা হয়।

আবির হাসান সুজন, শিক্ষার্থী, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগ

জাতি গঠনের শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার শিক্ষক

শিক্ষকরা আমাদের সম্মান এবং শ্রদ্ধার পাত্র। সেই আদিকাল থেকে সমাজের একটা বড় অংশ হচ্ছেন আমদের শিক্ষক সমাজ। তারা হলেন সমাজের দর্পণ। দেশের ভবিষ্যতে প্রজন্ম মেধা দক্ষতা অনেকাংশে নির্ভর করে শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে। অতি দুঃখের কথা হলো, সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের প্রতি সহিংসতার খবর প্রায়ই পত্রিকার পাতায় লক্ষ করা যায়, যা জাতির জন্য আদৌও সুখবর নয়। তবে কিছু কিছু শিক্ষক আছেন, যাদের কিছু কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে সেটা অন্য শিক্ষদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শিক্ষক দিবসে আমাদের প্রতিজ্ঞা হোক, আমরা প্রত্যেকে নিজের জায়গা থেকে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ এবং যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা করবো। 

ইসমাইল জাবিউল্লাহ, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ

সেরা কারিগর শিক্ষক

শিক্ষাদানের মহান ব্রত এবং মনুষ্যত্ব যারা সৃষ্টি করে থাকেন, তারাই শিক্ষক। শিক্ষকের মাধ্যমেই শিক্ষার প্রসার ঘটে, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান সৃষ্টি হয়। একজন যোগ্য শিক্ষক গাছতলায় বসেও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, মেধাবী মানুষকে শিক্ষকতা পেশায় সম্পৃক্ত করার জন্য আকর্ষণীয় সুযোগ–সুবিধা ও প্রণোদনা আমাদের দেশে নেই। আমাদের দেশের শিক্ষার মান ও শিক্ষা বাজেট দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন। শিক্ষকেরা আমাদের আলোকবর্তিকাবাহী ও আমাদের ভবিষ্যৎ জাতির রূপকার। শিক্ষকদের গবেষণার জন্য বিশেষ বাজেট বরাদ্দ করা দরকার এবং সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা দরকার। শিক্ষকই হোক জাতি ও সভ্যতা গঠনে শ্রেষ্ঠ কারিগর, সম্মানিত হোক উচ্চ আসনে।

আরিফুজ্জামান রনজু, শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়