ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

বিয়ে বনাম চাকরি: কোনটি হওয়া উচিত নারীর প্রথম পছন্দ?

মনিরা রহমান তিশা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১৬:২৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩
বিয়ে বনাম চাকরি: কোনটি হওয়া উচিত নারীর প্রথম পছন্দ?

বিয়ে আগে নাকি চাকরি আগে- এই দোটানায় বাংলাদেশের অধিকাংশ চাকরিপ্রত্যাশী নারীকেই পড়তে হয়। একদিকে পারিবারিক ও সামাজিক চাপ, অন্যদিকে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন। দুইয়ের মধ্যে সমন্বয় করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থার সম্মুখীন হন দেশের অধিকাংশ নারী। অনেক মেয়েকে তো পরিবারের চাপে পড়াশোনা শেষ করার আগেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়। নারীদেরই এই জীবনজটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। কারণ আমাদের সমাজে ছেলেদের ক্ষেত্রে ক্যারিয়ারের আগে বিয়ের সুযোগ কম। 

আমাদের সমাজে একটা মেয়ের নিজের চাইতে তার বিয়ে বা সন্তান নেয়ার কথা বেশি ভাবে তার পরিবার ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। যদি কোনো মেয়ে বিয়ের আগে চাকরির কথা ভাবে, তবে তাকে নানাবিধ প্রশ্নে জর্জরিত করা হয়। এমনকি তার চরিত্রের উপরও প্রশ্ন তোলা হয়। নারীরা আজকাল নিজে সাবলম্বী হয়েই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চায়। এরপর চাকরিতে একটু থিতু হয়ে সমসাময়িক সহকর্মীদের পাশে নিজের যোগ্যতাকে জাহির করতে গিয়ে তারা আরেক পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। তা হলো সময়ের দাবিতে মেয়েটা মা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেয়া। তবে মা হওয়া মাত্রই মেয়েটা কীভাবে সন্তান, সংসার এবং চাকরি সামাল দিবে সেই দায়িত্বও কিন্তু মেয়েটার।

কথায় আাছে, মেয়েরা হলো মায়ের জাতি। ইসলাম ধর্মে বলা আছে, মায়ের পায়ের নিচে জান্নাত আর হিন্দু ধর্মে আছে, দেবী দূর্গার দশ হাতের শক্তিমত্তার বর্ণনা। প্রতিটা ধর্মেই যে নারীদেরকে পুরুষের সমান মর্যাদায় আসীন করা হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। একজন নারী যেভাবে সৃজনশীল চিন্তা করতে পারে, যত্ন-ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু আগলে রাখতে জানে সাধারণত একজন পুরুষ তা পারেনা। নারীরা প্রবল মানসিক শক্তি ও অসাধারণ ধৈর্যের অধিকারী হয় যা ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন উভয়ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রয়োজন। 

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, শিক্ষার আদিস্তরে মেয়েরা তাদের মেধা ও মননের যথার্থ প্রয়োগ দ্বারা ছেলেদের তুলনায় অধিক ভালো ফলাফল অর্জন করে। কিন্তু যখন কর্মস্থলের দিকে একটু নজর দেয়া হয় তখন দেখা যায়, পুরুষের তুলনায় নারীদের সংখ্যা যেন অতি নগন্য। একটা মেয়ে ছোটবেলা থেকে যে মেধা নিয়ে বেড়ে ওঠে সেই মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে দেশ ও সমাজের যে উপকার হবে তা অপরিসীম। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই নারী। এই জনসংখ্যাকে যদি জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায় তবে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে নিয়ে যাওয়ার পথ অনেকটাই মসৃণ হবে। ইউজিসি রিপোর্ট ২০২১ অনুযায়ী, প্রায় ৩৭ শতাংশ নারী উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থীই নারী।  এ বিপুল সংখ্যক নারী যদি দেশের অগ্রগতিতে অংশ না নেয় তাহলে দেশ পিছিয়ে পড়বে। আবার অন্যদিকে প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী, একজন নারীকেই গর্ভধারণ করতে হয়। আর সন্তান ধারণের জন্য ২০-২৯ বছর বয়সটা বেশ উপযুক্ত। এতে করে মা ও শিশুর অনেক ধরনের ঝুঁকি কম থাকে। তাই বিয়েটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। 

একজন নারীর সাবলম্বী হওয়ার বিষয়টা যেমন তার নিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি তার পরিবার, সমাজ এবং সর্বোপরি দেশের জন্য অপরিহার্য। আবার বিয়ে এবং সন্তান নেয়াটাও মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সন্তান -সংসার সামলানোর দায়িত্বও যেহেতু নারীদের ওপরই অর্পিত হয়, তাই নারীর ওপর থেকে এ ক্রমবর্ধমান চাপ লাঘবে পরিবর্তন করতে হবে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি। পরিবর্তিত সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিই পারে চাকরি ও বিয়ে নিয়ে নারীর সকল দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে। বিয়ে আর চাকরিকে একসঙ্গে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে জীবনসঙ্গীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। স্বামী যদি স্ত্রীর এই চাকরি বনাম সংসারের যুদ্ধে তার পাশে থেকে সহায়ক ভূমিকা রাখে তাহলেই একজন নারী তার এই যুদ্ধে জয়ী হতে পারবেন। এক্ষেত্রে যা দরকার তা হলো দলবদ্ধ হয়ে কাজ করা, প্রয়োজন মোতাবেক কাজ বণ্টন করে নেয়া এবং সহায়ক মানসিকতা ধারণ করা। স্বামী স্ত্রী সমানতালে জীবনকে এভাবে এগিয়ে নিলে বিয়ে বনাম চাকরি নিয়ে নারীদের আর কোনো সংশয় থাকবেনা।

- লেখক: শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

/ফিরোজ/

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়