ঢাকা     শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

তরুণ লেখকদের ভাবনায় আগামী বইমেলা

তানজিদ শুভ্র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৪:২৩, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩
তরুণ লেখকদের ভাবনায় আগামী বইমেলা

প্রতীকী

প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলা মানে বাঙালি হৃদয়ে নতুন এক উৎসব আমেজ। লেখক, পাঠক, প্রকাশক সবার মাঝে বিরাজ করে নতুন উদ্দীপনা। বছরে অন্য সময়ে বই প্রকাশিত হলেও মেলা উপলক্ষে নবীন-প্রবীণ লেখকদের বই প্রকাশের হার বেড়ে যায়। বইমেলা যেন বাঙালির এক অনন্য উৎসব। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে গত কয়েকবারে মেলায় ছিলো কিছুটা ভিন্নতা। এবার জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। এরপর কী পরিস্থিতি হবে তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। এ বিষয়ে কয়েকজন তরুণ লেখকের সঙ্গে কথা বলেছেন তানজিদ শুভ্র। জানাচ্ছেন তাদের ভাবনা।

কবিতায় গল্প বলা মানুষ সালমান হাবীব। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার নতুন কবিতার বই ‘কবি তার কবিতার’। বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশিত হবে আরেকতি নতুন বই ‘কথারা ফুরিয়ে এলে নাম ধরে ডেকো’।

আসন্ন বইমেলা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বইমেলা এলেই প্রকৃতিতে আসা ফাগুনের মতো লেখক-পাঠক; তথা বইপ্রেমী মানুষের মনেও ফাল্গুনী হাওয়া বয়ে যায়। উৎসব উৎসব ব্যাপার! সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, একাডেমি প্রাঙ্গণ কিংবা মেলার পার্শবর্তী এলাকাগুলোর পাশ দিয়ে যাবার সময় অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু এবারের আসন্ন বইমেলা নিয়ে আগ্রহের পাশাপাশি আশঙ্কাও কাজ করছে। কারণ জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা। রাজনৈতিকভাবে দেশে এখন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এটি একটি জাতীয় সংকট। বইমেলাতে এর কোনো প্রভাব পড়বে কিনা এখনো স্পষ্ট না। তবে সবকিছু ছাপিয়ে আশা রাখি সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবেই বইমেলার আয়োজন হবে। বইয়ের মানুষ হিসেবে আমাদের এটাই প্রত্যাশা।

নিজের বই সম্পর্কে সালমান হাবীব জানান, বইমেলাকে কেন্দ্র করে চলতি বছরের নভেম্বরে আমার একটি নতুন বই এসেছে বইটির নাম ‘কবি তার কবিতার’। যেটি ইতোমধ্যেই পাঠক মহলে বেশ সাড়া পাচ্ছে। আগামী ২৪’ এর বইমেলায় আমার নতুন আরও একটি বই প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। যেটির নাম ‘কথারা ফুরিয়ে এলে নাম ধরে ডেকো’।

তরুণ লেখক মোহাম্মদ অংকন। ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে তার গল্প, কবিতা আর উপন্যাসের বই। প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, একজন লেখক হিসেবে অমর একুশে বইমেলা নিয়ে কিছু না কিছু প্রত্যাশা থাকে। এবার প্রত্যাশা থাকবে- স্টল বিন্যাস হওয়া চাই আরও সুসজ্জিত। যাতে পাঠক প্রচণ্ড ভিড়ের মাঝেও কাক্সিক্ষত বইয়ের স্টলটি খুঁজে পায়। এছাড়া বইমেলার প্রত্যেকটি প্রবেশ ও বাহির হওয়ার পথ একই সঙ্গে খোলা রাখা জরুরি। ২০২৩ মেলাতে রমনা পার্ক সংলগ্ন গেটটি শুধু বাহির হওয়ার গেট হিসেবে খোলা রাখায় প্রবেশে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিলো।

তিনি আরও বলেন, মেলায় বিরাট বিরাট খাবারের দোকান বসানোটা বাদ দিতে হবে। কেননা, বইমেলায় এসে মানুষ বই না কিনে সেসব দোকানে চড়া দামে খাবার খেয়ে পকেট শূন্য করে এবং বই না কিনে বাসায় ফেরে। বইমেলায় থাকা বাহারি খাবারের দোকান পাঠক-দর্শকদের বইয়ের চেয়ে খাবার কেনার প্রতি বেশি প্রভাবিত করে, যা দৃষ্টিকটু মনে হয়।

নতুন বই আসবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ অংকন বলেন, বই প্রকাশ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতি বইমেলাতে আমার একের অধিক বই প্রকাশ হয়। আসন্ন বইমেলাতেও একাধিক বই প্রকাশ হবে। রৌদ্রছায়া প্রকাশন থেকে কিশোর উপন্যাস ‘গুল্টু গোয়েন্দা’, লেখাচিত্র প্রকাশনী থেকে কাব্যগ্রন্থ ‘ভালোবেসে দুঃখ ছুঁয়েছি’ আসবে। এছাড়া বেশ কয়েকটা প্রকাশনী বই প্রকাশের আগ্রহ জানিয়ে পাণ্ডুলিপি চেয়েছে। সে বিবেচনায় একটা উপন্যাস ও একটি গল্পগন্থ আসতেও পারে। এছাড়া ‘অ্যা কমপ্লিট রুটিন অব অ্যা চাইল্ড’ বইয়ের দ্বিতীয় মুদ্রণ আসবে লেখাচিত্র প্রকাশনী থেকে।

রায়হান আহমেদ তামীম তরুণ ছড়াকার ও ফিচার লেখক হিসাবে পরিচিত মুখ। এবার তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ পেতে যাচ্ছে। বইমেলা নিয়ে প্রত্যাশার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবছর বইমেলা আসে সাহিত্য প্রেমীদের হৃদয়ের খোরাক জোগাতে। লেখক-পাঠক উভয়ই বইমেলার অপেক্ষায় সারাবছর মুখিয়ে থাকে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। বাংলা একাডেমি আয়োজিত আগামী বইমেলা দেখতে চাই গোছালো ও পরিপাটি। বইয়ের স্টল বিন্যাস ধারাবাহিকভাবে  সাজানো হলে দর্শনার্থীরা সহজেই তা খুঁজে পাবেন। সেক্ষেত্রে  স্টল খুঁজে বের করার জন্য নির্দিষ্ট গাইডলাইন রাখা যেতে পারে।

তিনি বলেন, বইমেলায় এসে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে যান অনেকেই। তাদের বিশ্রামের জন্য বসার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যত্রতত্র খাবারের দোকানের বইমেলার পরিবেশ নষ্ট করে। সেক্ষেত্রে যেকোনো একপাশে সুবিন্যস্তভাবে খাবারের দোকান রাখতে হবে এবং খাবারের মূল্য হতে হবে সুলভ। বিগত বইমেলায় দেখা গেছে অধিকাংশ দোকানে গলাকাটা দামে খাবার বিক্রি হয়, এটা বন্ধ করতে হবে।

রায়হান আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে পাঠক হিসেবে মেলায় গেলেও এবার বইমেলায় যাবো লেখক হিসেবে। দীর্ঘদিন চেষ্টা সাধনা করে নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আগামী বইমেলায় লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। ‘যাবতীয় তুমি সমাচার’ নামে আমার প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হবে। বইটি প্রকাশ করবে স্বনামধন্য প্রকাশনা কিংবদন্তী পাবলিকেশনের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘দূরবীণ’।

লেখক: শিক্ষার্থী, মিরপুর-১১, ঢাকা।

/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়