শেখ হাসিনার রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে বর্ণচোরা ষড়যন্ত্র করছে বামরা: ঢাবি শিবির
ঢাবি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এসএম ফরহাদ বলেছেন, “বিভিন্ন ট্যাগ বা তকমা দিয়ে বামদের এই আচরণ আজকের নয়। অনেক দিন ধরে চলে আসছে। তারা আজো শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র ও রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে বর্ণচোরার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। মতিউর রহমান নিজামীসহ অন্যদের ফাঁসির আদেশ একটি বিচারিক হত্যাকাণ্ড। এর দায় শুধু হাসিনার নয়, শাহবাগের ফ্যাসিবাদীদের দোসরদেরও।”
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) রাতে টিএসসিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
এর আগে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ঢাবি ছাত্রশিবির আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘আমরাই ৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক বর্ণাঢ্য ও ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করে। এতে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত নেতা গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, আলী আহসান মুজাহিদ, মীর কাশেম আলী, কামরুজ্জামান চৌধুরী ও বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবি প্রদর্শন করে। পরে বামপন্থিদের তোপের মুখে সরিয়ে নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ নিয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ করতে থাকে শিবির ও বাম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টায় সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেয় ঢাবি শাখা শিবির।
সংবাদ সম্মেলনে এসএম ফরহাদ বলেন, “আজকের আয়োজনের বিরুদ্ধে যারা বিক্ষোভ করেছেন এবং মব তৈরি করার জন্য ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই পোস্টধারী। তারা হয়ত বিভিন্ন সংগঠনের সভাপতি-সেক্রেটারি। যারা ১০-১২টা সংগঠন থেকে ২০-২৫ জন নিয়ে টিএসসিতে এসেছে।”
তিনি বলেন, “আজকের মব সৃষ্টির ফ্রেমিংটা ১৯৭১ বনাম ২০২৪ না। এটা মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দাঁড় করিয়ে আবারো আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা। শাহবাগ ও বাকশালকে নতুন করে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র।”
তিনি আরো বলেন, “শাহবাগ কায়েম করে আমাদের দিনে দিনে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, ক্রসফায়ার দেওয়া হয়েছে, আয়না ঘরে রাখা হয়েছে। আমরা এতে হতাশ হয়নি। আমরা শাহবাগ ও বাকশালের বিরুদ্ধে ছিলাম। সামনে আবার শাহবাগ কায়েম করে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্রে আমরা শঙ্কিত নই। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আমরা এর বিরুদ্ধে থাকবো ইনশাআল্লাহ।”
এর আগে, শিবিরের ওই চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয় এবং বামপন্থি নেতাকর্মীরা ব্যাপক আপত্তি জানাতে থাকে। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের বেশকিছু নেতাকর্মীও ছবিগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য শিবিরের কাছে অনুরোধ করে।
ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়েছিল, তাদের তিন দিনব্যাপী এই আয়োজনে ‘জুলাই বিপ্লব’ এর তাৎপর্য তুলে ধরা, শহীদ ও আহত পরিবারের অভিজ্ঞতা সরাসরি শোনা এবং প্রতিরোধ চেতনা পুনর্জাগরণের প্রয়াস থাকবে। পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতির ভবিষ্যৎ ও ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে গণআলোচনাও হবে কর্মসূচির অন্যতম অনুষঙ্গ।
অনুষ্ঠানের প্রথম দিন মঙ্গলবার ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী, বিপ্লবী গান ও কবিতা, শহীদ পরিবার ও আহতদের স্মৃতিচারণ, বিকেলে মাইম পরিবেশনা ও নাটক এবং রাতে ব্যতিক্রমধর্মী ‘প্ল্যানচেট বিতর্ক’ অংশ ছিল দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত। অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে ‘৩৬ জুলাই এক্সপ্রেস’ নামক একটি চলমান ট্রেনের আদলে নির্মিত ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয় কিভাবে রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়নের শিকার হয় সাধারণ মানুষ এবং কিভাবে একেকজন শহীদ হয়ে উঠেন প্রতিরোধের প্রতীক।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী