ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কপিরাইট দিবস যেভাবে এলো

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ২৩ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ০৯:৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২১
কপিরাইট দিবস যেভাবে এলো

মৌলিক সৃষ্টিকর্মের মালিকানা বা সত্ত্বাধিকারী নিশ্চিত করাই হচ্ছে কপিরাইট। প্রতিটি মেধাকর্ম কপিরাইট আইনে গ্রন্থস্বত্ব বা লেখস্বত্ব দ্বারা রক্ষিত। বলা যায়, Copyright হচ্ছে কর্মের অধিকার। সৃষ্টিশীল মানুষ দু’ধরণের সম্পদ নিয়ে জীবন যাপন করে। প্রথমত বস্তুগত সম্পদ-জায়গাজমি, গাড়ি-বাড়ি, টাকা পয়সা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প কারখানা ও নানারকম প্রাত্যহিক ব্যবহার্য দ্রব্য এবং দ্বিতীয়ত মেধাসম্পদ বা  Intellectual Property এর আওতায় আছে- সাহিত্যকর্ম, নাট্যকর্ম, শিল্পকর্ম, সঙ্গীতকর্ম, অডিও-ভিডিওকর্ম, চলচ্চিত্রকর্ম, ফটোগ্রাফি, ভাস্কর্যকর্ম, সস্প্রচারকর্ম ইত্যাদি।

আজ বিশ্ব বই ও কপিরাইট দিবস। ১৯৯৫ সালের ২৩ এপ্রিল ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ সভায় দিবসটি উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

বিশ্ব বই দিবসের মূল ধারণাটি আসে স্পেনের লেখক ভিসেন্ত ক্লাভেল আন্দ্রেসের কাছ থেকে। ১৬১৬ সালের ২৩ এপ্রিল স্পেনের আরেক বিখ্যাত লেখক মিগেল দে থের্ভান্তেস মারা যান। আন্দ্রেস ছিলেন থের্ভান্তেস-এর ভাবশিষ্য। নিজের প্রিয় লেখককে স্মরণীয় করে রাখতেই ১৯২৩ সালের ২৩ এপ্রিল থেকে আন্দ্রেস স্পেনে পালন করা শুরু করেন বিশ্ব বই দিবস। এরপর দাবি ওঠে প্রতিবছরই দিবসটি পালন করার। সে দাবি তখন সেভাবে কারোই নজরে আসেনি। বহুদিন অপেক্ষার পর ১৯৯৫ সালে ইউনেস্কো দিনটিকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পালন করতে শুরু করে। সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হিসেবে কপিরাইটকেও যুক্ত করে।

অনেকে মনে করেন শেক্সপিয়র, সত্যজিৎ রায়, ইনকা গার্সিলাসো ডে লা ভেগা এসব খ্যাতিমান সাহিত্যিকদের জন্ম ও প্রয়াণ দিবসও ২৩ এপ্রিল। আর এ কারণেও ২৩ এপ্রিলকে বিশ্ব বই দিবস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে।

ইউনেস্কোর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এই বছর দিবসটি উদযাপনে ইউনেস্কো একটি ‘বুকফেস’ চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ইউনেস্কো সেখানে বলছে ‘আমাদের লক্ষ্য হ'ল লোককে পড়াতে জড়িত করা, এবং মজা করা।’

বই পড়ার প্রতি গুরুত্ব বাড়াতে ও বইয়ের জগতের অপরিহার্য অংশ কপিরাইট বিষয়ে মানুষকে আগ্রহী করতেই এই দিবসটি আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি গুরুত্বের সহকারে উদযাপন করছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দিবসটি উদযাপনে তেমন আয়োজন দেখা না গেলেও দিবসটির গুরুত্ব মোটেই হারিয়ে যায়নি। বরং লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে বই পড়ার অভ্যাস একটি সুখকর সময় যাপনের ভালো উপায় হিসেবে গণ্য হতে পারে।

এই দিবসের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে- বই পড়া, বই ছাপা, বইয়ের কপিরাইট সংরক্ষণ করা ইত্যাদি বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানো। সর্বোপরি লেখক, পাঠক, প্রকাশকদের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করা। সঙ্গত কারণে এটি সর্বস্তরের লেখক, পাঠক, মুদ্রাকর, ছাপাকর্মী, বইয়ের বিপণনকারী তথা বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। এই দিনে সাধারণত বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রিয়জনকে বই উপহারের প্রবণতা বিশেষভাবে দেখা মিলে।

অন্যদিকে এই দিবসের সঙ্গে যুক্ত হওয়া কপিরাইটই লেখকদের মূল সত্ত্বা ধরে রাখার অনন্য একটি উপায়। কারণ, কপিরাইট হলো কোনো লেখকের যা কিছু সৃষ্টি, হতে পারে সেটি কোনো গল্প, কবিতা, সুর, গান, ভাস্কর্য, আঁকা বা তোলা ছবি, ভিডিও এবং স্থাপত্যসহ এমন কিছু –যার সৃষ্টির পেছনে লেখকের মেধা রয়েছে। সেই সৃষ্টিকে আইনি সুরক্ষা দেওয়া, যাতে অন্য কেউ সেই সৃষ্টি থেকে এর রূপকারের অনুমতি ছাড়া আর্থিকভাবে লাভবান বা নিজের সৃষ্টি বলে চালিয়ে দিতে না পারে।

লেখা নিয়ে প্রায়ই চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। চৌর্যবৃত্তির কারণে একজন লেখকের মন ভেঙে যায়। ফলে মৌলিক লেখা ক্রমেই তার নিজস্ব পথ হারাতে থাকে। এ ক্ষেত্রে কপিরাইটই হচ্ছে লেখককে টিকিয়ে রাখার সর্বোত্তম পন্থা। আজকের দিবসেরও মূল ভাবনাই হচ্ছে বই পড়া অবারিত রাখা এবং বইয়ের লেখকের স্বকীয়তাকেও বাঁচিয়ে রাখা।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়