ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ঢাবিতে ভর্তির আসন পুনঃনির্ধারণ: কোন বিভাগে কতটি বাড়ছে-কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ১৪ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ২১:০৬, ১৪ জানুয়ারি ২০২২
ঢাবিতে ভর্তির আসন পুনঃনির্ধারণ: কোন বিভাগে কতটি বাড়ছে-কমছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে বিভিন্ন বিভাগে আসন সংখ্যা পুনঃনির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ১৫টি আসন কমবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদার কথা বিবেচনা করে দক্ষ জনবল তৈরি করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি ডিনস কমিটির এক সভায় এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশ করা হয়। সুপারিশ অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি আসন কমছে কলা অনুষদের বিভাগগুলোতে। বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে আসন বাড়ানো হচ্ছে।

ডিনস কমিটির প্রতিবেদনে কলা অনুষদের বেশিরভাগ বিভাগেই আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কলা অনুষদে বিভাগ আছে ১৭টি। এর মধ্যে ১৬টিতেই আসন কমানোর সুপারিশ করেছে ডিনস কমিটি। একটিতে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডিনস কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে কলা অনুষদে আসন কমবে ৫১৫টি। কলা অনুষদে আসন ছিল ১ হাজার ৮৭৫টি।

বাংলা বিভাগে ১৩২ থেকে কমিয়ে ১২০টি আসন করার সুপারিশ করা হয়েছে। ইংরেজিতে ১৫০ থেকে কমিয়ে ১২০টি, আরবিতে ১৫০ থেকে কমিয়ে ১০০টি, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ১০০ থেকে কমিয়ে ৭৫টি, উর্দুতে ১১০ থেকে কমিয়ে ৭০টি, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ৯০ থেকে কমিয়ে ৫০টি, ইতিহাসে ১৩০ থেকে কমিয়ে ১১০টি, দর্শনে ১৭০ থেকে কমিয়ে ১২০টি, ইসলামিক স্টাডিজে ১৮৫ থেকে কমিয়ে ১০০টি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১৬০ থেকে কমিয়ে ১১০টি, তথ্যবিজ্ঞান ও প্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ৭৫ থেকে কমিয়ে ৬৫টি, ভাষাবিজ্ঞানে ৯০ থেকে কমিয়ে ৭০টি, সংগীতে ৮০ থেকে কমিয়ে ৬০টি, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ১০০ থেকে কমিয়ে ৬০টি এবং নৃত্যকলায় ৩৫ থেকে কমিয়ে ৩০টি আসন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে, থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজে ৭টি আসন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। বিভাগটিতে আগে আসন ছিল ১৮টি। এখন হবে ২৫টি।

ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে বর্তমানে আসন আছে ১ হাজার ২৫০টি। এ অনুষদে ২০০টি আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মার্কেটিং, ফাইন্যান্স ও ম্যানেজমেন্টে ৩০টি করে আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। বিভাগগুলোতে আসন আছে ১৮০টি করে। ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগে ১৫০ থেকে কমিয়ে ১০০টি, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ১১৫ থেকে কমিয়ে ১০০টি, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসে ১১৫ থেকে কমিয়ে ১০০টি এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে ১১৫ থেকে কমিয়ে ১০০টি আসন করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই অনুষদের একটি মাত্র বিভাগে ১৫টি আসন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ডিনস কমিটি। অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি আসন করা হচ্ছে।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ২০০ থেকে আসন ১৫০টি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ১০০ থেকে আসন ৮০টি, সমাজবিজ্ঞানে ১৮৫ থেকে আসন ১৫০টি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৬৬ থেকে আসন ৬০টি, লোকপ্রশাসনে ১১০ থেকে আসন ৯০টি, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে ৬০ থেকে আসন ৪০টি, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে ৪৫ থেকে আসন ৪০টি, ক্রিমিনোলজিতে ৬০ থেকে আসন ৫০টি, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারসে ৪০ থেকে আসন ৩০টি এবং জাপানিজ স্টাডিজে ৬০ থেকে আসন ৫০টি আসন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এ অনুষদে আসন বাড়ছে তিনটি বিভাগে। এর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগে ১২৮ থেকে বাড়িয়ে ১৩০টি, পপুলেশন সায়েন্সেসে ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০টি এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে ২৮ থেকে বাড়িয়ে ৪০টি আসন করার কথা বলা হয়েছে। নৃবিজ্ঞান; টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি এবং প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজে আসন অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

আইন অনুষদে আসন ১৩০ থেকে কমিয়ে ১১০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদে শুধু অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগে আসন ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বাকি বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা অপরবির্তিত থাকবে।

কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে আসন কমানোর সুপারিশ করলেও বিজ্ঞান অনুষদগুলোতে আসন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে ডিনস কমিটি। বিজ্ঞান অনুষদে বাড়ছে দুটি আসন। এ অনুষদের চারটি বিভাগে আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে। শুধু পরিসংখ্যার বিভাগে আসন ৮৮ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করার কথা বলা হয়েছে।

জীববিজ্ঞান অনুষদের জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগে আসন ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই অনুষদের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে ১২০ থেকে কমিয়ে ১০০টি, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ৭৫ থেকে কমিয়ে ৭০টি, প্রাণিবিদ্যায় ১০০ থেকে কমিয়ে ৮০টি এবং মনোবিজ্ঞানে ১৩০ থেকে কমিয়ে ৮০টি করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। প্রাণরাসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান, অণুজীব বিজ্ঞান এবং মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগে আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে।

আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগে ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৪০টি, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনায় ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪০টি, আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগে ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫টি আসন করার সুপারিশ করা হয়েছে। ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ১২০ থেকে কমিয়ে ৮০টি আসন করার কথা বলা হয়েছে। ভূতত্ত্ব বিভাগে আসন অপরিবর্তিত রাখতে সুপারিশ করা হয়েছে।

ফার্মেসি অনুষদে ৬৫ থেকে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৫ করা হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০ এবং রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ আসন করার কথা বলা হয়েছে। বাকি বিভাগগুলোতে আসন অপরিবর্তিত থাকবে।

১০টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে পাঁচটিতে আসন অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। আসন কমানো হচ্ছে তিনটি ইনস্টিটিউটে এবং বাড়ানো হচ্ছে দুইটিতে। আসন কমছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেখানে ১৬০ থেকে কমিয়ে আসন ১২০ করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ ও গবেষণায় ১০৫ থেকে কমিয়ে ১০০ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ১৬০ থেকে কমিয়ে ১৪০ আসন করা হবে। আসন বাড়ছে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে। ইনস্টিটিউট দুটিতে আসন বাড়ছে যথাক্রমে ৫টি ও ২০টি।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, ‘যেসব বিভাগের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বেশি, সেগুলোতে আসন বাড়ানো হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা এবং মানসম্পন্ন ও দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে আসন সংখ্যা পুনঃনির্ধারণ করা হচ্ছে।

ইয়ামিন/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়