ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অল্প আয়ের নারীদের জন্য জুট প্যাড

মিফতাউল জান্নাতী সিনথিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৬:৪৫, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০
অল্প আয়ের নারীদের জন্য জুট প্যাড

বিভিন্ন সমস্যার কারণে দেশের পাটশিল্পে নেমে এসেছে স্থবিরতা। অতি আধুনিকতার ছোঁয়ায় সোনালি আঁশের সেই ঝলমলে ভবিষ্যৎ পড়ে আছে দৃষ্টির আড়ালে। দেশে উৎপাদিত পাট দিয়ে তৈরি হতে পারে সাস্থ্য সুরক্ষাকারী স্যানিটারি ন্যাপকিন বা জুট প্যাড।

পাট একটি বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। কিন্তু ধীরে ধীরে এই পাটশিল্প হুমকির মুখে পড়ে হারিয়ে যেতে বসেছে। পাট খুবই সহজলভ্য ও পচনশীল হওয়ায় পাটকেই জুটপ্যাডের কাচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে পাটকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

এমন উদ্ভাবনী চিন্তা থেকেই ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির বিবিএ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের ও সালাহ উদ্দিন শুভ একটানা এক বছর গবেষণা করে এমন পণ্য তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, উন্নয়নশীল বা দরিদ্র দেশগুলোতে গড়ে ৮০ শতাংশ নারী স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করে না। ৪০ শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী পিরিয়ডের সময়ে স্কুলে অনুপস্থিত থাকে। কারণ, তাদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ক্রয়ের মতো সামর্থ নেই, কিংবা তারা এ সম্পর্কে সচেতন নয়। 

অন্যদিকে সাধারণ স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলো ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয় পানিতে কিংবা মাটিতে। পানিতে ফেলার ফলে এটি পানিকে দূষিত করে। একইসঙ্গে এটি জল জীববৈচিত্র্যকে ব্যহত করে খাদ্যচক্রে ক্ষতিকারক জীবের সৃষ্টি করতে পারে। সাধারণ স্যানিটারি ন্যাপকিনগুলো প্রতিবছর পুরো পৃথিবীতে ১০ হাজার টনেরও বেশি আবর্জনা তৈরি করে। অবহেলার জন্য কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও বিষাক্ত কার্সিনোজেনিক (বিপাকীয় প্রক্রিয়ার ক্ষতি করে এমন তেজস্ক্রিয় পদার্থ) ধোয়া উৎপাদন করে পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে দেয়।  

এই দুটি বৃহৎ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ কী? আর এর সমাধান বের করতে গবেষণার ফলে সৃষ্টি হয় জুট প্যাডের। জুট প্যাড সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামাল পাট থেকে তৈরি করা হয়, যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকরী ও আরামদায়ক। অপর দিকে পাট দিয়ে তৈরির ফলে এটি সম্পূর্ণ পচনশীল, যা পরিবেশের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

জুট প্যাড সম্পূর্ণ দেশি কাঁচামাল পাট থেকে তৈরি হওয়ায় এটি খুবই সুলভমূল্যে কাঙ্ক্ষিত ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। জুট প্যাড বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উৎপাদন দূর করে ও প্রতিটি নারীর জীবনে ৫০ কেজি প্যাড বর্জ দূর করে। নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্যে যেমন এটি ক্রয়লভ্য একইসঙ্গে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্ত করে টক্সিক মুক্ত পৃথিবী গড়ার জন্য জুট প্যাড একটি কার্যকরী সমাধান।

জুট প্যাডের প্রতিষ্ঠাতা জুবায়ের জানান, কানাডার এইচইসি, মন্ট্রেল কর্তৃক আয়োজিত সোশ্যাল বিজনেস ক্রিয়েশন কম্পিটিশনে ৩০টি দেশ ও ৩৬৫ প্রতিযোগীর মধ্যে নির্বাচিত এবং 'ইম্পেক্টফুল সোশ্যাল বিজনেস আইডিয়া অ্যাওয়ার্ড' বিজয়ী হয় জুট প্যাড। এইচইসি, মন্ট্রেল, কানাডার আমন্ত্রণে তারা ২০২১ সালে জুট প্যাডকে নিয়ে কানাডাতে প্রদর্শন ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করবেন। 

২০২১ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে আত্মপ্রকাশের জন্যে কাজ করছে এ পণ্যর কারিগররা। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোর নারীদের কাছে গণ-সচেতনামূলক প্রচরণার মাধ্যমে জুট প্যাডের কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানা যায়। 

ধীরে ধীরে এটি বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর সুবিধাবঞ্চিত নারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন এই দুই তরুণ। এছাড়াও জুট প্যাড বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টার্টআপ কম্পিটিশন, গ্রিন বিজনেস কম্পিটিশনসহ নানা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে।

ঢাকা/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়