ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

দেশি পণ্যে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ঈদের কর্মব্যস্ততা

প্রকাশিত: ১২:২৭, ১৩ মে ২০২১  
দেশি পণ্যে ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের ঈদের কর্মব্যস্ততা

বিগত কয়েক বছর ধরে দেশে অনলাইনে কেনাকাটার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সারাদেশ লকডাউউনে, কিন্তু থেমে নেই বাঙ্গালির ঈদ আয়োজন। রমজানের শুরুতে শপিংমলগুলো বন্ধ থাকায় অনলাইনে জমে উঠেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততা। অপরদিকে চাঁদ রাত মানেই ঈদের উৎসবের নতুন মাত্রা। সবকিছু মিলিয়ে কেমন কাটছে অনলাইনে দেশি পণ্যের উদ্যোক্তাদের কর্ম ব্যস্ততা  ও ক্রেতাদের কাছে কেমন ছিল দেশি পণ্যের  চাহিদা ? এসব জানতেই কথা হয় কয়েকজন সফল ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা অনেকেই নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা ঘরে বসেই সারতে পারছি।

কাকলী তালুকদার (স্বত্বাধিকারী,কাকলী’স অ্যাটিয়ার )

গতবারের তুলনায় এবার ঈদে আমার পণ্যের চাহিদা ভালো ছিল এবং যার ফলে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়েছে প্রতিমুহূর্তে। এবার ঈদের অর্ডারগুলো অনেক আগের থেকে আসায় ক্রেতাদের থেকে অনেক ভালো রেসপন্স পেয়েছি। তবে এবার শাড়ির পাশাপাশি জামদানি পাঞ্জাবী ও থ্রি পিসের চাহিদা ছিল ব্যাপক। যা এই শিল্পের জন্য একটা ভালো দিক। প্রতিনিয়ত ক্রেতার ম্যাসেজ,তাদেরকে রিপ্লাই দেওয়া ও পণ্য ঠিকমতো তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এসব নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত সময় কাটছে। অনেক সময় হয়তো ঝুঁকি নিয়ে বাইরে গিয়ে কুরিয়ার করতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও আমি খুশি কারন অনলাইনে দেশি পণ্যের ক্রয়-বিক্রয় এ বছর অনেক বেড়েছে।

গত বছর থেকেই দেশি পণ্যের চাহিদা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে আসছিল। তবে সেটা আরও বেশি ত্বরান্বিত হয় করোনাকালীন সময়ে। এরফলে আমরাও বুঝতে পেরেছি দেশি পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি কতটা প্রয়োজন। ই-কমার্সের জন্য আজকে সবাই ঘরে বসে তাদের পছন্দের পণ্যটি অর্ডার করতে পারছে। দেশের এই পরিস্থিতিতে অনেকেই শপিংমল গুলোতে যাচ্ছে না। আমি আমার নিজের উদ্যোগ দিয়েই বুঝতে পেরেছি দেশীয় পণ্যের প্রতি ক্রেতার চাহিদা কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সেই সঙ্গে এবারের ঈদে আমার সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হলো আমি আমার নিজস্ব ডিজাইনের জামদানি শাড়ি ক্রেতার হাতে তুলে দিতে পেরেছি যার জন্য আমি গর্বিত। এখনও অনেক অর্ডার আসছে। অনেকেই পণ্য অর্ডারের জন্য যোগাযোগ করছেন।  তবে যারাই চাচ্ছে বাধ্য হয়েই বলে দিতে হচ্ছে  ঈদের আগে আর হচ্ছে না। কারন ১০ই মে আমাদের শেষ অর্ডার ছিল। প্রতি ঈদের অভিজ্ঞতা থেকে এবার একটু গুছিয়ে কাজ করার ফলে সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক শেষ করতে পেরেছি। তবে আমাদের এই সুপরিকল্পিত কাজের সফলতার পেছনে আমি কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারিম্যানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। যারা এই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়েছেন। কেননা তারাই এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে ছিলেন।

মোঃ দেলোয়ার হোসেন,(প্রতিষ্ঠাতা আওয়ার শেরপুর )

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। এই দিনে ভোজন রসিক বাঙালিদের খাবারের বেশি অংশজুড়ে থাকে কোরমা,পোলাও,পায়েস ও পিঠা ইত্যাদি। এইদিন নানারকম খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত থাকে মা-বোনেরা। ঈদের উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি প্রতিবেশী ও নিকট আত্মীয়দের জন্যও আয়োজন করে কোরমা পোলাও।

পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে তুলশীমালা চালের বিক্রি ছিল লক্ষ্যণীয়। তুলশীমালা চালের খাবারের সাথে প্রিয়জনদের পরিচয় করিয়ে দিতে ঈদ কেনাকাটার তালিকায় তুলশীমালা চাল রেখেছে গৃহিণী,শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা। “ঈদের ছুটিতে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবে না” সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনা থাকায় চাকরিজীবীরা প্রিয়জনদের জন্য পাঠিয়েছেন তুলশীমালা চাল। তাদের আবেগের অংশ হতে আমরা উপজেলা পর্যায়েও হোম ডেলিভারি দিয়েছি। চলতি ঈদে আমাদের ৭০ ভাগের বেশি ছিল রিপিটেড কাস্টমার।

সালমা নেহা ( স্বত্বাধিকারী, টেস্টবিডি )

অনলাইনে আমার পেজের নাম টেস্টবিডি।  মূলত মিষ্টি, অন্যান্য শুকনো খাবার ও সিজনাল ফল নিয়ে আমার এই উদ্যোগের পথ চলা। তবে লকডাউনে আমার খাবারের অর্ডার একেবারেই বন্ধ ছিল। কেননা আমার প্রতিটা খাবার ঢাকার বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। এবারের রমজানের ঈদকে কেন্দ্র করে পোশাককে ঘিরে আমার ব্যস্ততা ছিলো বেশি। পোশাক নিয়ে জানুয়ারিতে ই-ক্যাবের (ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েসন অব বাংলাদেশ ) সাবেক প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধেয় রাজিব আহমেদ স্যারের  অনুপ্রেরণায় আমার নতুন করে পথ চলা শুরু হলেও, এখনো ফেইসবুক পেজ বা ওয়েবসাইটে আসা হয়নি।

এবার ঈদে আমার ফেইসবুক প্রোফাইলের মাধ্যমেই ক্রেতাদের থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ । আমার কালেকশনে এবার ছিলো দেশীয় শাড়ি,থ্রি পিস এবং ব্লাউজ পিস। সেই সঙ্গে বেবী ড্রেস ও ছেলেদের পান্জাবীর জন্য আনস্টিচ গজ কাপড়ও ছিল । তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিলো থ্রি-পিস ও শাড়ির। গরমকাল হওয়াতে সবাই সুতি ও আরামদায়ক পোশাক বেশি বেছে নিয়েছেন। অর্ডারকৃত  পোশাক ঈদের আগেই ঠিকমতো সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেছি আমি ও আমার স্বামী। ডেলিভারি এজেন্সির অতিরিক্ত ব্যস্ততার জন্য কিছু আর্জেন্ট গিফট পার্সেল আমরা নিজেরাই ডেলিভারি করেছি। সব মিলিয়ে আলহামদুলিল্লাহ দারুণ ব্যস্ততা উপভোগ করলাম গত কিছু দিন ধরে।

প্রতাপ পলাশ (স্বত্বাধিকারী, নকশীওয়ালা )

বরাবরই ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা থাকে ঊর্ধমুখী। এইবারের ঈদে ক্রেতাদের বেশ ভালো একটা অংশ অনলাইনে কেনাকাটা করেছেন। কেনাকাটায় দেশি পণ্যের চাহিদাও ছিল প্রচুর। যা আমাদের দেশি পন্য, উদ্যোক্তা ও ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য খুবই ইতিবাচক দিক। অনলাইনে আমি আমাদের দেশীয় ঐতিহ্য কুমিল্লার খাদি পোশাক নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে খাদি শাড়ি,পাঞ্জাবি, থ্রি পিসসহ খাদির অন্যান্য পণ্য। এই বারের ঈদ উপলক্ষে গত এক মাসে আমি প্রায় ১৫০ এর মতো অর্ডার প্রসেস করেছি। টাকার অংঙ্কে প্রায় ২.৫ লাখ টাকার অর্ডার। আমার পণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে আমাদের নিজেদের তৈরি খাদি শাড়ি ও পাঞ্জাবী। পণ্য নিয়ে কনটেন্ট লেখা ও অনলাইনে পণ্য দেখানো নিয়েই ছিলো আমার ব্যাস্ততার মূল অংশ। সব মিলিয়ে ক্রেতাদের থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছি।

ঢাকা/ সিনথিয়া

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়