ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ই-কমার্স ক্লাবের গুরুত্ব

আশীষ পাত্র || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  
শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ই-কমার্স ক্লাবের গুরুত্ব

‘ই-কমার্স ক্লাব’- নামটা শুনেই বোঝা যায় সম্পূর্ণ নতুন একটা বিষয়। আসলে যখন গতানুগতিক পদ্ধতির বাইরে নতুন কিছু আলোচনায় আসে, তখন আমাদের মধ্যে একটি কৌতুহল জাগে। কি হতে পারে আলোচনার বিষয়টি? এটি কারা করতে পারবে?

আমাদের দেশে এখনো অনেকের কাছে ই-কমার্স কনসেপ্টটাই ঠিকভাবে স্পষ্ট নয়। উপরন্তু সেই ই-কমার্স নিয়েই আবার ক্লাব। ভিন্নধারার এই বিষয়টি নিয়ে জানার আগ্রহ থাকাটাই স্বাভাবিক। নতুন যে কোন বিষয়ে আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন জাগে। এই কাজটি সবাই ব্যবহার করতে পারবে? তেমনই যখন ই-কমার্স ক্লাবের ব্যাপারে আলোচনা শুরু হলো তখন অনেকের মাঝে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এতো সব ক্লাব থাকতে কেনো আমি ই-কমার্স ক্লাবে যুক্ত হবো? উন্নত ক্যারিয়ারে এর গুরুত্ব কি?   

ভিন্ন মাত্রার কোন কাজের খাত বা সেক্টর সৃষ্টি হলে এর সঙ্গে আরো অনেক কাজের খাত যুক্ত হয়। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধরনের ক্লাব রয়েছে। তাদের কার্যক্রমও একটি আর একটি থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। তেমনি ই-কমার্স ক্লাবও অন্যান্য ক্লাবগুলো থেকে কিছুটা আলাদা। এই ক্লাবকে অলরাউন্ডার ক্লাব বললেও কোন ভুল হবে না। প্রশ্নের উত্তর হলো এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে সকল বিভাগের ছাত্রছাত্রী।   

উত্তর শুনে একটু অবাক হওয়ারই কথা। কারণ, এক একটি ক্লাবের উদ্দেশ্য থাকে একেক রকম। সবাই সব জায়গা থেকে যেকোন সময়ই এর সুফল পেতে পারবে। সবই বুঝলাম এর থেকে সবাই উপকৃত হতে পারবে। কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা কিভাবে এ থেকে উপকৃত হতে পারবে একটু আলোচনায় আসা যাক -  

ছাত্রছাত্রীদের জন্য ই-কমার্স ক্লাবের গুরুত্ব:

জন্মের কয়েক বছর পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আমাদের পড়াশোনার জীবন বা ছাত্রজীবন। শিক্ষার সময় ‘দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত’ এই কথাটির সঙ্গে কমবেশি আমরা সকলেই পরিচিত। পড়াশোনা শেষ করার পর আমাদের প্রথম লক্ষ্য থাকে ভালো চাকরি করার। গতানুগতিকভাবে পর্যায়ক্রমে এই প্রথার সঙ্গেই আমরা বেশিরভাগ মানুষ অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। অর্থাৎ আমরা চাকরিকেই জীবনের নিরাপত্তা মনে করি।  কিন্তু আসল সমস্যা হলো আমাদের কর্মসংস্থান যতোটুকু তার থেকে চাকরি প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি। আমাদের সমাজে এমন অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা সবসময় জীবন পরিকল্পনার জন্য ভালো দিকনির্দেশক পায় না।   

অর্থাৎ শিক্ষাজীবনের পর একজন শিক্ষার্থী কোনদিকে যাবে, বা কি করলে তারা ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারবে এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হতে পারে না। অনেক ছাত্রছাত্রী ক্যারিয়ারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চিন্তিত থাকে। এমন সব ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ই-কমার্স ক্লাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই ধরনের ক্লাবে ই-কমার্সের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব চাকরি বা উদ্যোগ আছে তার পুরো বিষয়াদি নিয়ে সেমিনার বা ট্রেনিং হতে পারে।

একজন ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা অবস্থায় চার বছর সময় অতিক্রম করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই অনেকেই সময়ের ব্যাপারে সচেতন থাকে না। কারণ ছাত্র অবস্থায় অনেকেই ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অনার্স প্রথম বর্ষ থেকেই ছাত্রছাত্রীরা যদি ই-কমার্স ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন তারা শিক্ষাজীবনের পরবর্তী সময়ের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারবে। বর্তমান ‍যুগে ডিজিটাল স্কিলের কোন বিকল্প নেই। কারণ এখন প্রায়ই সকল সেক্টরেই ডিজিটাল স্কিলের দরকার রয়েছে, যা তারা ই-কমার্স ক্লাব থেকে অর্জন করতে পারে।

ফটোগ্রাফি ক্যারিয়ারে ই-কমার্স ক্লাবের ভূমিকা:

মানুষ একা বাস করতে পারে না। অর্থাৎ মানুষ সংঘবদ্ধভাবে একটি কমিউনিটির মধ্যে বাস করে। আর সেই কমিউনিটির মধ্যেই থাকে তাদের নেটওয়ার্ক। এভাবেই কাজের অনেক সূত্র আমরা নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমেই পেতে পারি। ঠিক তেমনই কোন ছাত্রছাত্রী ফটোগ্রাফার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে একটি কমিউনিটি বা নেটওয়ার্কিংয়ে থাকা দরকার। কেননা ওয়েবসাইট বা ই-বাণিজ্যে সুন্দর ছবির মাধ্যমেই তাদের ব্যবসার কনসেপ্ট প্রেজেন্ট করে থাকে। ছাত্রছাত্রীরা ই-কমার্স ক্লাব থেকে এই ব্যাপারে দক্ষ হতে পারে। এছাড়াও এমন ক্লাবের মাধ্যমে ই-কমার্সের সঙ্গে জড়িত অনেকের সঙ্গে পরিচিতির মাধ্যমে ভালো নেটওয়ার্ক তৈরি বা বিশ্বস্ততা অর্জন করতে পারবে। যখন একজন মানুষের ভালো নেটওয়ার্কিং গড়ে উঠবে তখন তার কাজ করতে অনেক সহজ হবে। এক্ষেত্রে ই-কমার্স ক্লাব অনেক বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ই-কমার্স ক্লাব:

একজন বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে বিভিন্নভাবে ই-কমার্স ক্লাব থেকে উপকৃত হতে পারে। কেউ কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করে আবার কেউ কেউ ওয়েবসাইট ডেভেলপার অর্থাৎ ওয়েবসাইট নিয়ে পড়াশোনা করে থাকে। তারা যদি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা থাকাকালীন সময় থেকেই এই ই-কমার্স ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তখন থেকেই তাদের একটি কাস্টমার বেইসড তৈরি থাকবে। পাশাপাশি তাদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক তৈরি থাকবে যা তাদের পড়াশোনা শেষ করেই কাজে লাগাতে পারবে। এরজন্য তারা ই-কমার্স ক্লাব থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।

সাহিত্যের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ই-কমার্স ক্লাবের ভূমিকা:

বর্তমান যুগটাই হচ্ছে অনলাইনের যুগ। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিভিন্ন সেক্টর। ভালো কন্টেন্টকে আমরা অনলাইন বা ই-কমার্সের প্রাণ বলে থাকি। এই কন্টেন্ট হতে পারে ছবি, ভিডিও বা তথ্য। আর যারা এই তথ্য লিখে থাকে তাদেরকে বলা হয়ে থাকে কন্টেন্ট রাইটার। একজন ই-কমার্স উদ্যোক্তা যখন তার উদ্যোগ শুরু করে, তখন সে একা সব দিকের কাজ সামলিয়ে উঠতে পারে না। তখন তার পণ্য, পেজ বা ওয়েবসাইটের জন্য কন্টেন্ট রাইটারের প্রয়োজন হয়। অনেক ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার পাশাপাশি ঘরে বসে এমন কাজ করতে পারে। একজন সাহিত্যের ছাত্র বা ছাত্রী যাদের এই বিষয়ে প্রচুর জ্ঞান থেকে থাকে। কারণ তাদের মধ্যে মুক্ত চিন্তাভাবনায় লেখার দক্ষতা থাকে। ইচ্ছা করলেই এ ধরনের কাজের সঙ্গে তারা যুক্ত হতে পারে।  ই-কমার্স ক্লাব এমন অনেক নতুন কর্মসংস্থান তৈরিতে সহযোগিতা করবে।

এমন অসংখ্য কাজের খাত ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত আছে। আর তা জানার জন্য আমাদের ই-কমার্স ক্লাব অনেক সাহায্য করতে পারে। তাই বলা যায় এখানে বা ক্লাবে সকলেই যুক্ত হতে পারবে। মোটকথা যার যে দিকে বুদ্ধি বা জ্ঞান আছে তা বিকশিত করতে এই ই-কমার্স ক্লাবকে ব্যবহার করে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পারবে।

লেখক: শিক্ষার্থী (সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা)

ঢাকা/ সিনথিয়া/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়