মসজিদের পল্লি বারবাজার
|| রাইজিংবিডি.কম
মসজিদ
শাহরিয়ার আলম
ঝিনাইদহ, ২৫ আগস্ট: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ১৯৯৩ সালে অল্প জায়গার মাটি খুঁড়ে প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান মিললেও এখানে কোনো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি।
ঝিনাইদহ শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে বারোবাজারের অবস্থান। বারো আউলিয়া, খানজাহান আলী, গাজী কালু চম্পাবতী, গঙ্গারিডিসহ বারোবাজারের ইতিহাসের শেষ নেই। বারোবাজারের রেললাইনের পশ্চিম পাশে তিন বর্গকিলোমিটার জায়গার মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মাটি খুঁড়ে মসজিদসহ ১৫টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সন্ধান পেয়েছে।
এগুলো হচ্ছে সাতগাছিয়া মসজিদ, ঘোপের ঢিপি কবরস্থান, নামাজগাহ কবরস্থান, গলাকাটা মসজিদ, জোড়বাংলা মসজিদ, মনোহর মসজিদ, জাহাজঘাটা, দমদম প্রত্নস্থান, গোড়ার মসজিদ, পীর পুকুর মসজিদ, শুকুর মল্লিক মসজিদ, নুনগোলা মসজিদ, খড়ের দীঘি কবরস্থান, পাঠাগার মসজিদ ও বাদেডিহি কবরস্থান।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এসব পঞ্চদশ শতাব্দীর কীর্তি। তবে ১৯৯৩ সালে জোড়বাংলা মসজিদ খননের সময় একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল শাহ সুলতান মাহমুদ ইবনে পুসাইন ৮০০ হিজরি। এ শিলালিপিটি এখানকার প্রত্নতত্ত্বের অন্যতম দলিল। এ থেকেই বোঝা যায়, নিদর্শনগুলো প্রায় ৭০০ বছরের প্রাচীন। বেশিরভাগ নিদর্শনের পাশে বিরাট বিরাট দীঘি রয়েছে।
গোরার মসজিদ:
বারবাজার বেলাট দৌলতপুরে কারুকাজ খচিত বর্গাকৃতির মসজিদটি চার গম্বুজ বিশিষ্ট। মূল ভবনের সঙ্গে চারকোনে আটকোন বিশিষ্ট স্তম্ভ এবং বারান্দার সঙ্গে আরও দুটি স্তম্ভ আছে। মসজিদটির মেহরাব ও দেওয়াল বিভিন্ন নকশায় সজ্জিত।
মসজিদের অভ্যন্তরে চারি দেওয়ালের সঙ্গে সংযুক্ত আটটি ইটের তৈরি কেবলা দেওয়ালে ও মেহরাবে পোড়া মাটির নকশা, শিকল নকশা,বৃক্ষপত্রাদীর নকশা পুষ্পশোভিত পোড়া মাটির নকশা খঁচিত আছে। মসজিদের পূর্বপাশে একটি বিশাল দীঘি আছে।
জোড়বাংলা মসজিদ : বারবাজার তাহেরপুর রাস্তার বাম পাশে জোড়বাংলা মসজিদটি অবস্থিত। প্রচলিত লোককথা মতে মসজিদের কাছাকাছি জোড়া কুঁড়ে ঘর ছিল। এ কারণেই হয়তো মসজিদটির নামকরণ জোড়বাংলা হয়ে থাকবে।
ধারণা করা হয় এক গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি সুলতান গিয়াস উদ্দীন মাহমুদ শাহের শাসন আমলে নির্মিত। মসজিদের পূর্ব পাশে তিনটি সুচালো খিলান যুক্ত প্রবেশ পথ আছে। মসজিদের চার কোণে আটকোণ বিশিষ্ট চারটি কারুকাজ খঁচিত টাওয়ার আছে।
নুনগোলা মসজিদ : বারবাজার হাসিল বাগে অবস্থিত নুনগোলা মসজিদটিও বর্গাকৃতির একটি মসজিদ। মসজিদটিতে তিনটি অর্ধবৃত্তাকৃতির মেহরাব আছে। মেহরাবে ছোট ছোট বর্গাকৃতির মধ্যে বিভিন্ন জ্যামিতিক নকশা আছে। মসজিদের বাইরের দেওয়ালে পর্যায়ক্রমিক খাড়া চাল ও খাজ আছে। এগুলোতে দিগন্ত রেখাকৃতির ছাচে গড়া নকশা ও বাধন আছে। মসজিদের ওপরে একটি গম্বুজ আছে।
গলাকাটা মসজিদ :
বারবাজার তাহেরপুর রাস্তার উত্তর পাশে অবস্থিত গলাকাটা মসজিদটি সুলতানি আমলের আরেক অনিন্দ্য সুন্দর এক স্থাপত্য শিল্প। গোলাকার ঢিবির ওপর স্থাপিত মসজিদটির ভেতরের দিকের কেবলা দেওয়ালে তিনিটি অর্ধবৃত্তাকারাকৃতির সুসজ্জিত মেহরাব আছে।
মেহররাবের দু’পাশে পোড়া মাটির দিগন্ত রেখাকৃতির বাধন, বিভিন্ন প্রকার জ্যামিতিক ও ফুলের নকশা আছে। এছাড়া পোড়া মাটির ঘণ্টা ও চেইন নকশা মসজিদের দেওয়াল ও ছাদ জুড়ে আছে। মসজিদের সাথেই আছে একটি বৃহদাকার দীঘি।
শুকুর মল্লিক মসজিদ:
এটি একটি বর্গাকাকৃতির এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। দেখতে অনেকটা ঢাকার বিনত বিবির মসজিদের মত। মসজিদটির উভয় পাশে একটি করে বন্ধ মেহরাবসহ পশ্চিম পাশে একটি অর্ধবৃত্তাকৃতির মেহরাব আছে।
এই মেহরাবগুলোতে আছে পোড়া মাটির ঘন্টা ও চেইন নকশা। অপরুপ নকশাগুলো মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
বারবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন বলেন, “ইতিমধ্যে প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদগুলোকে সংস্কারের কাজ করেছেন। সরকারিভাবে উদ্যেগ নিলে এই বারবাজারে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠা সম্ভব বলে আমি মনে করি।”
রাইজিংবিডি / কবীর
রাইজিংবিডি.কম