ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আশির দশকের পত্রমিতালী

এস এম জাহিদ হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৬, ২০ আগস্ট ২০২৫   আপডেট: ১৩:১১, ২০ আগস্ট ২০২৫
আশির দশকের পত্রমিতালী

ছবি: প্রতীকী

আশির দশকে দূরের, অচেনা কারও সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার অন্যতম উপায় ছিলো পত্রমিতালী। এই পত্রমিতালী কেন্দ্র করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আলাদা একটি শৈল্পিক সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিলো। সাধারণত পরষ্পর-পরষ্পর সম্পর্কে কারও কাছ থেকে জেনে, একজন আরেকজন সম্পর্কে আগ্রহী হলে চিঠির মাধ্যমে একপক্ষ হয়তো বন্ধুত্বের আহ্বান জানাতো। এখানে একজন ব্যক্তি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকতেন। তিনিই প্রথম পক্ষের চিঠি দ্বিতীয় পক্ষের কাছে পৌঁছে দিতেন। চিঠি পাওয়ার পরে ওই মধ্যস্ততাকারীর কাছ থেকে বিস্তারিত জেনে দ্বিতীয় পক্ষ সিদ্ধান্তে আসতেন পত্রমিতালী করবেন, নাকি করবেন না। 

এর মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যেও অনেক সময় গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠতো। সে সময় নারী-পুরুষের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা মোটেও সহজ ছিল না। নারী-পুরুষে পত্রমিতালী তৈরি হলে  কোনো কোনো সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত প্রেম পর্যন্ত গড়াতো। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটা বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতো। 

আরো পড়ুন:

পত্রমিতালী সাহিত্যনির্ভর একটি বিষয় ছিল। কনভারসেশন, মত বিনিময়, ভাবের আদান-প্রদান, মতের আদান-প্রদান বা মতোবিরোধ হলে সেটা নিয়ে আলোচনা হতো। সেই আলোচনাগুলো খুবই উচ্চমার্গীয় ব্যাপার ছিল। কেন তার মতের সঙ্গে আমি একমত না, সেটার যুক্তি দিতে দিতে অনেক সময় দুই তিন, পৃষ্টার চিঠি লেখা হয়ে যেত। দেখা যেতো যে চিঠি পাঠানোর জন্য অনেক সময় বাড়তি ডাক মাসূলও দিতে হতো। 

পত্রমিতালী থেকে কোনো কোনো সম্পর্ক প্রেমের দিকে গেছে। ছবি: প্রতীকী

পত্রমিতালী চিন্তা চেতনা বিকাশেও সহায়ক ছিলো। এমন পত্রমিতালীও হয়েছে, দেখা গেছে যে দুই, চার বছর ধরে একজন আরেকজনকে চিঠি লিখেছে কিন্তু কেউ কাউকে দেখেনি। 

এখন যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ফেইক আইডি খোলে। নারী পুরুষ সাজে আবার পুরুষ নারী সাজে। এইটা ছিলো না। তখন যে যা, তাই বলতো, লিখতো। তবে হ্যাঁ, কোনো কোনো সম্পর্ক প্রেমের দিকে গেছে। কেউ কেউ বিয়ে করে ঘর বেঁধেছেন। কিন্তু বেশিরভাগই ছিলো বন্ধুত্বের সম্পর্ক। চিঠি লিখে একজন অজানা, অচেনা মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, তার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, সেই সম্পর্কের যে আবেদন সেটা এখন এই পর্যায়ে এসে ভাবা যায় না।

আমারও একজনের সঙ্গে পত্রমিতালীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। সে অভিজ্ঞতা থেকে জানি, একটা চিঠি লেখার পরে উত্তর পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো। তিন, চার, পাঁচ দিন বা তারও বেশিদিন পরে উত্তর আসতো। এই যে সময়টা, এই সময়টাতে একজনের কল্পনা, সম্ভাব্য উত্তর নিয়ে ভাবনা মনের ভেতর ছড়িয়ে পড়তো। একটা সময় ডাকপিয়ন চিঠি নিয়ে আসতো। সেটা একটা অসাধারণ মুহূর্ত।  খামটা খোলার পরে সেই চিঠিটা স্পর্শ করার যে অনুভূতি, তা আজকে বলে বোঝানো যাবে না। এটা শুধু তখনই বোঝা যেত। 

যথারীতি চিঠির তো আর অনুলিপি রাখা হতো না, কিছু কিছু যা মনে পড়তো সেগুলোর  উত্তর ঠিকঠাক আছে কিনা পড়ে মেলানো হতো। চিঠি পড়ে যদি কোনো জায়গায় দেখা যেত যে দুইজনের মতের সাথে মিল আছে, তাহলে ভালো বোধ হতো। আবার যদি যুক্তিসঙ্গত দ্বিমতের প্রকাশ দেখা যেত তাহলেও ভালো লাগতো। আবার কোনো কোনো যুক্তিকে যখন অযৌক্তিক মনে হতো, পরবর্তী চিঠির উত্তরে হয়তো আবার সেই লেখার প্রেক্ষিতে নিজের যুক্তি আর জোড়ালোভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা থাকতো। 

অনেকেই পত্রমিতালী গড়ে তোলার জন্য আগ্রহী হয়ে পত্রপত্রিকায় ছোট আকারে বিজ্ঞাপন দিতো। এটা এক ধরনের বিনোদনও ছিলো। এখন আমরা যেমন কক্সবাজার বেড়াতে যাই, আমরা হ্যাংআউট করি, রিসোর্টে যাই বা বারবিকিউ পার্টি করি, সে সময়তো এই কাজগুলো করার উপায় ছিলো না। কিন্তু মানুষ সব সময় অন্যরকম কিছু করার তাড়না বোধ করে, সেই বোধেরই এক ধরণের বহিঃপ্রকাশ ছিলো পত্রমিতালী।

ঢাকা/লিপি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়