ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রেকর্ড সংখ্যক উন্নয়নে বদলে গেছে লক্ষ্মীপুর 

জাহাঙ্গীর লিটন, লক্ষ্মীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৬, ৯ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৪:০০, ৯ ডিসেম্বর ২০২১
রেকর্ড সংখ্যক উন্নয়নে বদলে গেছে লক্ষ্মীপুর 

লক্ষ্মীপুর। একটি উপকূলীয় জেলা। মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে গড়ে ওঠা এ জনপদ নারিকেল, সুপারি, ইলিশ এবং সয়াবিনের জন্য বিখ্যাত। কয়েক বছর আগেও পিছিয়ে পড়া জেলার তকমা বয়ে বেড়াতে হতো। পরিচিত ছিল সন্ত্রাস আর অশান্তির জনপদ হিসেবে। এখন সেই পিছিয়ে পড়া জেলাই একেবারে সামনের সারিতে। পরিণত হয়েছে শান্তির ও উন্নয়নের জনপদে। শুধু জেলা শহরই নয়, গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের বিচারে গত এক যুগে অনন্য সাফল্য বয়ে এনেছে।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১২ বছরের শাসনামলে লক্ষ্মীপুরের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে সড়ক, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, মসজিদ-মন্দির, পর্যটন কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকসহ নানামুখী উন্নয়ন হয়েছে এ জেলায়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি উন্নয়নের রেকর্ড। জেলা এলজিইডি, গণপূর্ত, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং শিক্ষাপ্রকৌশল সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় গত ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ লক্ষ্মীপুর সফরে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় ২৭টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এর মধ্যে রামগতি ও কমলনগর মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (১ম পর্যায়), চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদ ভবন, সদর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম, কমলনগর উপজেলা পরিষদ ভবন, কমলনগর  উপজেলা অডিটোরিয়াম, লক্ষ্মীপুর পৌর আইডিয়াল কলেজ ভবন, মোহাম্মদিয়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র নির্মাণ (৩য় ও ৪র্থ), কমলনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও প্রাণী হাসপাতাল উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন করেন।

এছাড়া, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, প্রশাসনিক ভবন ও নাবিক নিবাস-কোস্টগার্ড মজু চৌধুরীর হাট, পুলিশ অফিসার্স মেস, লক্ষ্মীপুর সদর পুলিশ ফাঁড়ি, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ভবন, লক্ষ্মীপুর খাদ্যগুদামে ৫০০ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নতুন গুদাম নির্মাণ, রামগঞ্জ উপজেলায় ১৩২/৩৩ কেবি গ্রিড উপ-কেন্দ্র নির্মাণ, পিয়ারাপুর সেতু, চেউয়াখালী সেতু, মজু চৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দর, লক্ষ্মীপুর পৌর আধুনিক বিপণি-বিতান, রামগঞ্জে আনসার ও ভিডিপি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর কমপ্লেক্স, লক্ষ্মীপুর পৌর আজিম শাহ (রা.) হকার্স মার্কেট, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ একাডেমিক ভবন-কাম-পরীক্ষা কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর পুলিশ লাইন্স মহিলা ব্যারাক নির্মাণ, লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়কে পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, রায়পুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, কমলনগর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে লক্ষ্মীপুর জেলাব্যাপী বিদ্যুৎ খাতে অর্জিত হয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য। শহর থেকে শুরু করে গ্রামঞ্চলের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ। নির্মাণ হয়েছে পৌর শিশু পার্ক। জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে জেলা সদর হাসপাতালটি ১০০ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা হয়েছে। এর ভবন নির্মাণের কাজ শেষের দিকে। নদী ভাঙন রোধে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, প্রবাসীদের সুবিধার্থে চালু করা হয়েছে পাসপোর্ট অফিস। উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে লক্ষ্মীপুরে শেখ রাসেল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলমান রয়েছে। উদ্বোধন করা হয়েছে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ ৫ তলা ভবন, দত্তপাড়া কলেজ, জনতা কলেজের নবনির্মিত ভবনসহ ৪ শতাধিক স্কুল-মাদ্রাসার নতুন ভবন। 

জনদুর্ভোগ এড়াতে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপজেলার পিয়ারাপুর ব্রিজ, মেঘনা ব্রিজ। গ্রাম পর্যায়ে পুলিশী সেবা পৌঁছে দিতে উদ্বোধন করা হয়েছে দাশেরহাট পুলিশ ফাঁড়ি, চন্দ্রগঞ্জ থানা। প্রক্রিয়াধীন রয়েছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, নৌ-বন্দর, ঢাকা টু লক্ষ্মীপুর লঞ্চ সার্ভিস, রেল লাইন প্রকল্প। যা লক্ষ্মীপুরের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের রোল মডেল।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, গত ১ যুগে (২০০৯ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ৩০ জুন) মোট উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে ৪ হাজার ২৪টি। এই বিপুলসংখ্যক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৮৯ কোটি ৯১ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এলজিইডির বাস্তবায়নে পল্লী সড়ক উন্নয়ন ১৭১৮ কি:মি:। যার ব্যয় হয়েছে ১২৮৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পল্লী সড়ক মেরামতে ১২২৮ কিলোমিটারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৩৯১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ৪৯০ মিটার সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।

এ ছাড়া, ২টি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ১৫টি গ্রামীণ হাট বাজার-গ্লোথ সেন্টার, ৭০টি সাইক্লোন সেল্টার, ২টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন, ২৫টি অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণ, ২৪১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, ৪টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ ও ২২৯টি সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৮ কোটি ৫৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলম পাটওয়ারী।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১২ বছরের মধ্যে লক্ষ্মীপুরে সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯০ কোটি ৫ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। এছাড়াও বরিশাল- ভোলা-মজু চৌধুরী হাট সড়ক, লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগ সড়ক, লক্ষ্মীপুর থেকে রামগতি চরআলেকজান্ডার-সোনাপুর-মাইজদী সড়ক, মান্দারী থেকে দাসের হাট সড়ক, মান্দারী-দাসের হাট সড়কের সেতু, লক্ষ্মীপুর শহর সংযোগের তেরবেকী সেতু, হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ-লক্ষ্মীপুরের মন্ডলতলী সেতুটির নির্মাণ কাজ চলমান ও কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে। এসব সড়কে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৫২ কোটি ৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা এবং সেতুতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৯১৮ কোটি ৯৭ হাজার টাকা। তথ্যগুলো জানিয়েছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত দত্ত।

জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অফিস জানায়, গত ১২ বছরে ১২৮টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন ও চারতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ৩৭টি বেসরকারি মাদ্রাসায় ১ তলা ও ৪তলা বিশিষ্ট একাডেমিক নির্মাণ কাজ, ৩৭টি সরকারি ও বেসরকারি কলেজ এবং টেকনিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ১০০টি সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসায় নতুন ভবন, ঊর্ধ্বমুখী ভবন নির্মাণ ও সংস্কার কাজ করা হয়েছে। এসব কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ২ লাখ বিয়াল্লিশ হাজার ৭৪০ টাকা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুরাদ হোসেন। 

লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলায় ২১টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ তলাবিশিষ্টি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে জেলা সদর হাসপাতাল ভবন, ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে কোস্টগার্ড ভবনসহ ১৫টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, এ জেলায় গত ১২ বছরে ১০ হাজার গভীর নলকূপ স্থাপন, পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষে ৯টি পুকুর খনন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৫৮৬টি ওয়াশ ব্লক ও ৩৭৭টি গভীর নলকূপ স্থাপন। হতদরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে ৩৮১৫ সেট ল্যট্রিন, ৪২২৮ সেট স্বল্পমূল্যে রিং স্লাব বিতরণ, ১৪টি পাবলিক টয়লেট, ১৬টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন নির্মাণ, ৫৩.৬৩ কি.মি. পাইপ লাইন স্থাপন, ১৩টি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন, ১টি উচ্চ জলাধার নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। এছাড়া পানি শোধনাগারের নির্মাণ চলমান রয়েছে। 

এক নজরে লক্ষ্মীপুর জেলা

ইংরেজ শাসনামলে এ জনপদের নামকরণ করা হয়। ইতিহাস-ঐতিহ্য আর সম্ভাবনাময় লক্ষ্মীপুরকে ১৯৮৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা ঘোষণা দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মরহুম লে. জেনারেল (অব.) হুসাইন মো. এরশাদ। এর আগে ১৮৬০ সালে লক্ষ্মীপুর ছিল নোয়াখালী জেলার অর্ন্তগত মহকুমা। বর্তমানে এ জেলা ৫৮টি ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভার সমন্বয়ে ৫টি উপজেলা, ৬টি থানা, ৪৭৪টি মৌজা ও ৫৪৭টি গ্রাম নিয়ে সর্বমোট ১,৫৩৪.৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত।

বৃটিশ আমল থেকে শুরু করে সব কয়টি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে রয়েছে লক্ষ্মীপুরের গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক কমরেড তোয়াহা এবং সানা উল্লাহ নূরীর জন্মস্থান এ জেলায়। দেশের জাতীয় পতাকা যিনি সর্ব প্রথম উড়িয়েছেন সেই আ.স.ম আবদুর রবের জন্মভূমিও লক্ষ্মীপুরে। ১৯৭১ সালে এখানেও ছোট বড় কয়েকটি যুদ্ধ সংগঠিত হয়। ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী শাসনের পরাধীনতা থেকে লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত হয়। জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার ও  রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ উল্লাহর জন্মস্থান লক্ষ্মীপুর। এভারেস্ট পর্বত বিজয়ী প্রথম বাংলাদেশি নারী নিশাদ মুজমদার, শত দেশ ভ্রমণকারী নারী নাজমুন নাহার সোহাগী লক্ষ্মীপুরের নাগরিক হিসাবে গর্ববোধ করেন।

কমরেড তোয়াহার হাতে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, মরহুম জমির আলীর হাতে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, আ স ম আবদুর রবের হাতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল সাবেক জাসদ বর্তমানে জেএসডিসহ অন্তত ৫টি বাংলাদেশি রাজনৈতিক দলের জন্মদাতাদের জন্মভূমি লক্ষ্মীপুর। বর্তমানে বিশ্ব বিখ্যাত ইলিশের উৎপাদনস্থল এবং সয়াবিন উৎপানের স্বর্ণ রাজ্যের নামও লক্ষ্মীপুর। নারিকেল, সুপারি, ঘিগজ মুরি এবং মহিষের দই এ এলাকার ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে যুগ যুগ ধরে। সে ঐতিহ্যগুলো শুধু লক্ষ্মীপুরের সম্পদই না, এগুলো বাংলাদেশের গর্বের সম্পদও বটে।

লক্ষ্মীপুর জেলায় প্রাচীন ঐতিহাসিক বেশ কিছু স্থাপত্য রয়েছে। সেগুলোর অধিকাংশই ধ্বংসপ্রাপ্ত। কিছু স্থাপত্য এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য পাঁচ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত দালালবাজার জমিদার বাড়ী, কামানখোলা জমিদার বাড়ী, দুই শত বছরের প্রাচীন তিতাখাঁ জামে মসজিদ, মান্দারী বাজার মসজিদ সৌন্দর্য্য ও স্থাপত্য শৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ, ১৬৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ৩ গম্বুজ বিশিষ্ট বিখ্যাত রায়পুর জিনের মসজিদ, রামগঞ্জের কাঞ্চনপুরে মহান সাধক হযরত মিরান শাহ (রঃ)-এর মাজার এবং দুইশত বছরের অধিক পুরাতন শ্যামপুর দায়রা শরীফ।

পর্যটন আকর্ষণ স্থানের তালিকায় রয়েছে ২২ একর জমিজুড়ে খোয়া সাগর দিঘি, রায়পুরের উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের আলতাফ মাস্টারের ঘাট, মেঘনা নদীর তীরে অবস্থিত মজু চৌধুরী হাট, মতির হাট, আলেকজান্ডার মেঘনা বীচ অন্যতম। এর মধ্যে রামগতি ভ্রমণের সময় পর্যটকরা সেখানকার মিষ্টি এবং মহিষের দুধে তৈরি ঐতিহ্যবাহী দই সংগ্রহ ও উপভোগ করতে পারেন।

পর্যটকদের সরব উপস্থিতি এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে ছোট্ট এই উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুর একটি অমূল্য সম্পদে পরিণত হতে পারে। এমনটাই মনে করছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা। এসব স্থানগুলো যুগ যুগ ধরে লক্ষ্মীপুরের ঐতিহ্যকে বহন করে আসছে।

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. আনোয়ার হোসেন খান বলেন, লক্ষীপুর-১ আসনটি জেলার রামগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই আসনের উন্নয়ন মানে হলো পুরো জেলার উন্নয়ন। সরকারের উন্নয়নের ধারা হিসেবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলায় দারিদ্র বিমোচন ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ মোট ২৫টি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। পরিচালিত কার্জক্রমসমূহ টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা, ভিশন ২০২১ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বর্ণিত লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের লক্ষ্যে গতিশীলতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধির মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পল্লী সমাজসেবা ২৫,৩৪৩টি, আশ্রয়ন প্রকল্প ১৬৭৯টি উল্লেখযোগ্য। 

উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধির হার ১০০ ভাগ। অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাও শতভাগ, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি পেয়েছেন ৬৮৯ জন, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পেয়েছেন ১৭৮৪ জন। আরও কিছু উন্নয়নের মধ্যে রয়েছে সাব রেজিস্ট্রার অফিস নির্মাণ, একটি মডেল মসজিদ ও একটি ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রভৃতি প্রকল্প বাস্তবায়ন। বর্তমান সরকারের ছোঁয়ায় ডিজিটাল স্বাস্থসেবা এখন জনগণের দোরগোড়ায়। জনগণের অভিমত ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ায় সরকারের ডিজিটাইলাইজেশন ভিশন বাস্তবায়নের পরিক্রমায় সারা দেশের মতো লক্ষীপুর-১ আসনেও স্বাস্থ্য সেবা, যোগাযোগ, শিক্ষা এবং তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে ব্যাপক ভাবে। এর মধ্যে ১৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। তাই এই আসনের জনগণ বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ভার দিতে চায়, বলেন তিনি।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশের মতো পিছিয়ে পড়া অবহেলিত লক্ষ্মীপুরের উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগসহ সব ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। স্বাধীনতার পর থেকে যে উন্নয়ন হয়নি, তা গত ১২ বছরে হয়েছে। নদী শাসন, রাস্তা-ঘাটসহ সব সেক্টরের উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। বরিশাল-ভোলা-মজু চৌধুরী হাট ৪ লেন সড়কের নির্মাণ কাজ চলছে। 

লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাংসদ ও সাবেক বিমানমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ‘বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। উন্নয়নের সরকার। সরকারের দেওয়া প্রকল্পগুলো যখন শতভাগ বাস্তবায়ন হবে, তখন লক্ষ্মীপুর হবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অন্যতম জেলা।

বিগত ৭ বছরে লক্ষ্মীপুর জেলায় আলোচিত কয়েকটি উন্নয়ন হয়েছে। এগুলোর মধ্যে মেঘনার ভাঙন রোধে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। রামগতি-কমলনগরকে রক্ষার জন্য এ প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে ১৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা যায়। রামগতি-কমলনগর সড়ক উন্নয়ন হয়েছে। লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় চলছে প্রায় শত কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প। ইতোমধ্যে মজু চৌধুরীর হাটে নৌ-বন্দর এবং রেললাইন সংযোগ স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন লাভ করেছে। চন্দ্রগঞ্জে ‘চন্দ্রগঞ্জ থানা’ এবং ‘চন্দ্রগঞ্জ হাইওয়ে থানা’ বাস্তবায়ন হয়েছে।

/মাহি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়