‘এমডি-২’ আনারসে স্বপ্ন দেখছে মধুপুরের চাষিরা
কাওছার আহমেদ, টাঙ্গাইল || রাইজিংবিডি.কম
![‘এমডি-২’ আনারসে স্বপ্ন দেখছে মধুপুরের চাষিরা ‘এমডি-২’ আনারসে স্বপ্ন দেখছে মধুপুরের চাষিরা](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2023May/Pine-Apple-2307121058.jpg)
টাঙ্গাইলের মধুপুরে পরীক্ষামূলক চাষ হচ্ছে বিশ্ব সমাদৃত ফিলিপাইনের এমডি-২ জাতের আনারস। স্বাদে অনন্য, পাতলা খোসা ও প্রাকৃতিকভাবে লম্বা সময় সংরক্ষণ করা যায় বলে সমাদৃত এই আনারস। দেশে উৎপাদিত আনারস পাকার পর মেয়াদকাল এক সপ্তাহ, সেখানে এমডি-২ প্রায় এক মাস ভালো থাকে। তাই বিপুল অংকের টাকায় কেনা চারা বিনামূল্যে বিতরণ করে স্থানীয় কৃষকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয়রা জানান, মধুপুর উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে আনারস উৎপাদন হয়ে থাকে। প্রতি বছর শুধু মধুপুর উপজেলায় আনারস উৎপাদন হয় প্রায় ছয় হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত জলডুঙ্গি ও ক্যালেন্ডার জাতের আনারস দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে না পারায় টানা বৃষ্টিতে কৃষকদের লোকসান গুনতে হয়। তাই এই আনারস প্রক্রিয়াজাতকরণ করে রপ্তানির মাধ্যমে মধুপুরকে প্রকৃতই ‘ক্যাপিট্যাল অব পাইনাপেল’ এ পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এমডি-২ জাতের আনারসের চারা বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, মধুপুর উপজেলার ২২৭ জন কৃষকের মাঝে প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার মহিষমারা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকরা আনারস ছাড়াও অন্যান্য ফসলের চাষ করেছে। কৃষকরা আনারস বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি অ্যাওয়ার্ড পাওয়া ছানোয়ার হোসেন এক বিঘা জমিতে এমডি ২ জাতের আনারস বাগান পরিচর্যা করছেন।
ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আনারসের চাষ করি। আগে শুধু শুনতাম, পৃথিবীতে যতগুলো উন্নত জাতের আনারস আছে, তার মধ্যে এমডি ২ জাতের আনারস সেরা। দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করায় এটা বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা যায়। মধুপুরের আনারস চাষিদের সমৃদ্ধ করতে কৃষিমন্ত্রী প্রতি চাষিকে পাঁচ হাজার করে চারা এনে দিয়েছেন। যেভাবে শুনেছিলাম, সেই মতো ফলন অনেক ভালো হয়েছে। মিষ্টিও অনেক ভালো। আমরা আশাবাদী বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাষিরা যেমন আনারস রপ্তানি করে বৈদাশিক মুদ্রা আয় করে, ঠিক তেমনি আমরাও করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘মধুপুরের মাটি আনারস চাষের জন্য অন্যতম। বিশ্বের অন্য দেশে এমডি ২ জাতের আনারস এক কেজির উপরে হয় না। কিন্তু আমাদের এখানে দেড় কেজি পর্যন্ত আনারস হয়েছে।’
অপর চাষি মো. শিমুল সরকার বলেন, ‘মধুপুরে ক্যালেন্ডার ও জলডুঙ্গি জাতের আনারস চাষ হয়। এমডি ২ ক্যালেন্ডার ও জলডুঙ্গির চেয়ে অনেক টেকসই আনারস। অন্য আনারস বর্ষার সময় তিন-চার দিনে নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এমডি ২ এক মাসের অধিক সময় সংরক্ষণ করা যায়। আমরা ভালো ফলন পাচ্ছি। আমাদের দেখাদেখি আরও অনেকে চাষ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’
রহমান মিয়া ও সুমন মিয়া বলেন, অন্য জাতের চেয়ে এই আনারস খেতে অনেক সুস্বাদু। অন্য আনারস খেলে মুখে জ্বালাপোড়া করে, কিন্তু এমডি ২ তা করে না। এই আনারস চাষে খরচের হারও অনেক কম।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন রাসেল বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আনারসে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ক্যালেন্ডার জাতের আনারস ৪ হাজার হেক্টরের উপরে। এবার প্রথম ২২ হেক্টরের উপরে জমিতে এমডি ২ জাতের আনারস চাষ করা হয়েছে। অন্যান্য আনারসে ব্রিক্সস-১৪ (মিষ্টির হার), কিন্তু এমডি ২ তে ১৪ থেকে ১৬ পর্যন্ত বিক্সস। ফলনও ভালো হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কাতারে রপ্তানি করার প্রক্রিয়া চলমান আছে।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ অন্যসব আনারস উৎপাদন হয় হেক্টর প্রতি ৩৮ থেকে ৪০ মেট্রিক টন। এমডি ২ জাতের আনারস উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, হেক্টর প্রতি ৪০ থেকে ৪৫ মেট্রিক টন।
সম্প্রতি আনারসের বাগান পরিদর্শন করে কৃষি মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুবুল হক পাটোয়ারি বলেন, ‘মধুপুরে যে পরিমাণ আনারস উৎপাদন হয়, কৃষকরা বাজারজাত করতে না পারায় সেই রকম দাম পেতেন না। অনেক আনারস নষ্ট হয়ে যেত। টেকসই না হওয়ায় স্থানীয় আনারস আমরা রপ্তানি করতে পারি না। মাঠে যে আনারসের উৎপাদন দেখলাম তাতে কৃষিমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে বলে আমি আশা করছি।’
/বকুল/
আরো পড়ুন