সদরঘাট টু গুলিস্তান
উজ্জল জিসান || রাইজিংবিডি.কম
সড়ক দুর্ঘটনায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আন্দোলনের ফসল বাংলাবাজারের এই ফুটওভারব্রিজ। অথচ এটি কেউ ব্যবহার করছে না (ছবি : উজ্জল জিসান)
উজ্জল জিসান : নদীপথে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশমুখ সদরঘাট। সদরঘাট যাওয়া কিংবা আসা, যেটাই হোক না কেন, পাড়ি দিতে হবে বাংলাবাজার মোড়।
প্রায় এক যুগ আগে কলেজিয়েট স্কুলের সামনে রাস্তা পারাপারের সময় সড়ক দুর্ঘটনা প্রাণ হারায় জান্নাতুল হাসনা নামে এক শিক্ষার্থী। ওই সময় এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে সেখানে একটি মাল্টি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন। অথচ এই ফুটওভারব্রিজটি যে উদ্দেশে নির্মাণ করা হয়েছিল তা যেন বিফলে গেছে। এমনটা হচ্ছে কেবল জনসচেতনতার অভাবে।
এ প্রসঙ্গে ফুচকা বিক্রেতা সাত্তার ও ঝালমুড়ি বিক্রেতা সজিব রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে আমরা এখানে দোকান চালাই। এই ফুট ওভারব্রিজটি যে কারণে নির্মাণ করেছিল সরকার, তা কাজে আসছে ন। শুরুতে এটার ব্যবহার হলেও এখন আর কেউ তা করছেন না। এজন্য পুলিশ বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনে জনগণকে বাধ্য করেই এর ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। এভাবে একসময় পথচারীরা সচেতন হবেন।’
ওই এলাকায় ডিউটিরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, এখানে কেউ আইন মানে না। সবারই যেন তাড়া আছে। আর তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করেই রাস্তা পার হচ্ছেন তারা। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তবে উপরমহলের নির্দেশ এলে এখানেও পথচারীদের ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য করা হবে।
সকাল সাড়ে ৯টা। রায়সাহেব বাজার মোড়। খুবই ব্যস্ততম মোড় এটি। এখান দিয়ে কোর্ট-কাচারি, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলেই রাস্তা পার হয়। তবে তাদের নিতে হয় জীবনের ঝুঁকি।
রায়সাহেব বাজার মোড়ে ওভার ব্রিজ ও আন্ডারপাস না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা (ছবি : উজ্জল জিসান)
স্থানীয় ব্যবসায়ী রউফ জানান, গত তিন বছরে এই মোড়ে ছয়-সাতজনের প্রাণ গেছে গাড়ির ধাক্কায়। এখানে একটি ফুটওভারব্রিজ হলে এ দুর্ঘটনা রোধ করা যেত।
এর পরেই রাস্তা ঠেকেছে তাঁতীবাজার মোড়ে। এখান থেকে একটি রাস্তা গেছে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে মাওয়ায়। বিপরীতমুখী রাস্তাটা চলে গেছে গুলিস্তানের দিকে। পুরো এলাকায় পথচারীদের রাস্তা পারাপারে নেই কোনো ফুটওভারব্রিজ। নেই আন্ডারপাসও । ফলে ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা। এখানে একটি ফুটওভার ব্রিজ অথবা আন্ডারপাসের দাবি করছেন স্থানীয়রা।
চার রাস্তার মোড় বংশাল। সেই একই চিত্র! নেই কোনো ফুটওভারব্রিজ বা আন্ডারপাস। যানজট ও ঝুঁকিপূর্ণ এই রাস্তাটিতে । পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত ১০ বছরে এই মোড়ে প্রাণহানি ঘটেছে ১৫ জনের। শুধু রাস্তা পার হতে গিয়েই এতগুলো প্রাণ অকালে ঝরে গেছে।
বংশাল মোড়ের কিছুদুর এগোতেই সুরিটোলা মোড়। এখান দিয়ে সিদ্দিকবাজার ও নবাবপুর রোডের লোকজন এসে মূল রাস্তায় ওঠেন। পাশেই সুরিটোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আর সব রাস্তার চেয়ে এখানে ব্যস্ততা যেন একটু বেশি। বাংলাবাজারের মতো এখানেও স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে সিটি করপোরেশন সুরিটোলা মোড়ের ওপর একটি ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করে। মজার বিষয় হলো- এত আন্দোলন করে যে প্রাপ্তি, এর সুফল পেতে যেন ভুলে গেছেন স্থানীয়রা। ঠিক আগের মতোই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হচ্ছেন তারা।
পাশেই ওভারব্রিজ, সেটি ব্যবহার না করেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন পথচারীরা (ছবি : উজ্জল জিসান)
পথচারী সাজু, নাজির ও অনিকার ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে রাস্তা পার হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘সবাই পার হচ্ছে, তাই আমরাও পার হলাম। সরকার আইন করুক আমরা সচেতন হব।’
আইন তো আছে, তাহলে মানছেন না কেন- এমন প্রশ্নে সোজা উত্তর বাংলামোটরের মতো এখানেও আইন মানতে বাধ্য করুক তাহলে মানব।
এদিকে ফুলবাড়িয়ায় এসে দেখা গেল, ছেলেমেয়ে, নারী-পুরুষ ছোট-বড় সকলেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। বাস এসে লেগে যাচ্ছে গায়ে, তবুও তারা হাত উঁচিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন। কয়েকজন পথচারী বললেন, ‘পার না হয়ে উপায় নেই। এখানে তো আন্ডারপাস কিংবা ওভারব্রিজ নেই। কীভাবে পার হব।’ তাদের দাবি, ছোট করে হলেও এখানে একটি ওভারব্রিজ করা দরকার।
ফুলবাড়িয়ায় রাস্তা পারাপার। একেবারে লাগা-লাগা অবস্থা (ছবি : উজ্জল জিসান)
অন্যদিকে গুলিস্তানে একটি বড় আন্ডারপাস থাকা সত্ত্বেও অনেকেই এটাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন। পুলিশও কিছু বলছে না। তবে পুলিশের সার্জেন্ট সবুর মিয়া বলেন, ‘রাস্তার মাঝখানে রেলিং দিয়ে রাস্তা পারাপার বন্ধ করা দরকার। যখন রাস্তা পার হওয়ার বুদ্ধি পাবে না, তখন বাধ্য হয়েই সবাই আন্ডারপাস ব্যবহার করবে।’
গুলিস্তান আন্ডারপাস চলাচলের রাস্তা নেই। দোকানপাটে ভরপুর (ছবি : উজ্জল জিসান)
ওই সার্জেন্ট আরো জানান, আন্ডারপাস তো ব্যবসায়ীরা দখল করে আছেন। এজন্য হয়তো অনেকেই এই পথটিকে পছন্দ করছে না।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ নভেম্বর ২০১৪/জিসান/লেনিন/সন্তোষ/কমল কর্মকার
রাইজিংবিডি.কম