ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ফরাসি বিপ্লব থামিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে চেলসি চ্যাম্পিয়ন

ক্রীড়া ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৬, ১৪ জুলাই ২০২৫  
ফরাসি বিপ্লব থামিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে চেলসি চ্যাম্পিয়ন

বিশ্ব ফুটবলের রাজপথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল চেলসি। পিএসজির রঙিন স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে তারা জিতে নিলো ক্লাব বিশ্বকাপের মুকুট। যা শুধু একটি ট্রফি নয়, এক মহাগর্বের প্রতীক। নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামের রুপালি আলোয় স্নাত মাঠে, লাখো চোখের সামনে রোববার দিবাগত রাতে ফুটবলজাদুকরির অনবদ্য প্রদর্শনী উপহার দেয় ব্লুজরা। ইউরোপ সেরা পিএসজিকে স্রেফ উড়িয়ে ৩-০ গোলে জয় ছিনিয়ে নেয় তারা।

প্রথমার্ধেই যেন গল্পের পরিণতি লিখে ফেলেছিল চেলসি। কোল পালমারের জোড়া ঝলক আর জোয়াও পেদ্রোর নিখুঁত ফিনিশে প্রথমার্ধে তিনবার কেঁপে ওঠে পিএসজির জাল। ফরাসি পরাশক্তির সামনে চেলসির ক্ষুরধার আক্রমণ ও কৌশল ছিল বিদ্যুৎগতির মতো। প্রতিপক্ষের যেন করার কিছুই ছিল না শুধু তাকিয়ে দেখা ছাড়া।

২২ মিনিটে মালো গিস্তোর ছোট্ট এক সহানুভূতি থেকে ম্যাচে প্রথম প্রাণ সঞ্চার করেন কোল পালমার। বাঁ পায়ের নিচু শটে বল ছুটে যায় প্রতিপক্ষ জালে, যেন এক তরুণ শিল্পীর প্রথম সফল তুলির আঁচড়। এরপর মাত্র আট মিনিটের ব্যবধানে পালমার আবারও জ্বলে ওঠেন। লিভাই কলউইলের বাড়ানো লম্বা পাসকে শিল্পে রূপ দিয়ে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারকে পরাস্ত করে তিনি আবারও বল জড়ান জালে।

৪৩তম মিনিটে গোলের সুর বয়ে আনেন পালমার ও পেদ্রো জুটি। চেলসির ঘড়িতে তখন ছিল পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সময়। পালমারের সূক্ষ্ম পাস, আর পেদ্রোর ভরসাজাগানিয়া ফিনিশে চেলসি তুলে নেয় তৃতীয় গোল। এ এক অনন্য প্রদর্শনী যেন! ফ্লুমিনেন্সের বিপক্ষে সেমিফাইনালে দুই গোল করা এই তরুণ এই ম্যাচেও রাখলেন অমূল্য অবদান।

এদিকে গোলবারের নিচে চেলসির জন্য ছিলেন আরেক ‘অদৃশ্য’ নায়ক—রবের্ত সানচেস। তার হাত যেন ছিল দেয়ালের মতো। পিএসজির ছয়টি অন-টার্গেট শটই আটকে দেন তিনি। দেম্বেলে, ভিতিনিয়া, নেভেস— সবাই একে একে ফিরেছেন ব্যর্থ মনোরথে। চেলসির রক্ষণ যেন ছিল নিঃশব্দে বজ্রকঠিন।

৮৫তম মিনিটে খেলার আবহ পাল্টে যায়। পিএসজির মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস ভিএআরের চোখ ফাঁকি দিতে না পেরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। আর ম্যাচের শেষে মাঠজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে কিছুটা রূঢ় উত্তাপ। খবর আসে, কোচ লুইস এনরিকে নাকি জোয়াও পেদ্রোর মুখে হাত তুলেছিলেন। ঘটনাটি ভিন্নমাত্রা যোগ করে এই ঐতিহাসিক রাতে।

২০২৬ বিশ্বকাপের ফাইনালের ভেন্যু মেটলাইফে শুধু ফুটবলই ছিল না, ছিল রাজনীতির মঞ্চও। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনোর উপস্থিতি ছিল আলোচিত দৃশ্য। পরে তারাই পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেন ব্লুজদের হাতে।

এন্টসো মারেস্কার সুশৃঙ্খল কৌশলে এই চেলসি যেন এক নবজন্ম পাওয়া দল। মৌসুমে কনফারেন্স লিগ জয়ের পর ক্লাব বিশ্বকাপের সিংহাসন জয় করে প্রমাণ করল— তারা এখন শুধুই ইংল্যান্ডের নয়, পুরো ফুটবলবিশ্বের আস্থা ও অনুপ্রেরণার নাম।

অন্যদিকে, চার ট্রফি জিতে আসা পিএসজি হোঁচট খেলো এমন এক রাতে, যেখানে তারকারা যেন আকাশে নয়, মেঘে ঢাকা থাকলো। পালমার ও সানচেসের আলোয় তারা বিলীন হয়ে গেল।

শেষ বাঁশি যখন বাজল, তখন স্কোরবোর্ড বলছিলো ৩-০। কিন্তু এই স্কোরের পেছনে ছিল একটি রাজকীয় গল্প, শ্রেষ্ঠত্বের জয়গান আর ভবিষ্যতের বার্তা— চেলসি এখন আর কেবল ক্লাব নয়, এক মহাকাব্য!

ঢাকা/আমিনুল

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়