ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ঢাকা কলেজে একজন নেহাল স্যার ছিলেন 

রায়হান হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২১  
ঢাকা কলেজে একজন নেহাল স্যার ছিলেন 

‌‘ঢাকা কলেজ’ মানে মাত্র দুটি শব্দ নয়। গত বিংশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। ভারতীয় উপমহাদেশের আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম পথিকৃৎ। কলেজটি এখন ১৮০ বছর পার করছে। এই গৌরবময় পথচলায় বিদ্যাপীঠে এপর্যন্ত ৭১ জন অধ্যক্ষ ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই ঢাকা কলেজকে সেরা করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। 

কিন্তু বর্তমানে যে ঢাকা কলেজ দেশের সেরা আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার সম্পূর্ণ কৃতিত্বের দাবিদার সদ্য সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। করোনা সংক্রমণের শুরুতে সরকারের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে না থেকে সারাদেশের এইচএসসি শিক্ষার্থীদের প্রথম অনলাইন ক্লাসের আওতায় এনেছিলেন তার নেতৃত্বে এক ঝাঁক মেধাবী শিক্ষক।

আরও পড়ুন- বিদায়বেলাতেও ছাত্রদের কথা বললেন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ

সেই উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে গত ১১ ডিসেম্বর শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আইসিটিখাতে সেরা কলেজের সম্মাননা পেয়েছে ঢাকা কলেজ। বর্তমানে আধুনিক ঢাকা কলেজের অন্যতম রূপকার হলেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ।

কলেজের ছাত্রদের একটি আস্থার জায়গা ছিলেন তিনি। কারণ, তিনি ছাত্রদের প্রায় সব দাবি পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। একজন সফল স্বপ্নদ্রষ্টার কিছু স্বপ্ন বাস্তবায়নের কিছু দিক তুলে ধরা হলো- 

বাস উপহার

ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের একটি অন্যতম দাবি ছিল নতুন বাসের ব্যবস্থা করা। তিনি ৪টি নতুন বাসের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ফলে ছাত্রদের দীর্ঘ দিনের যাতায়াতের সমস্যার সমাধান হয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ঠিক সময়ে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারছেন।

মসজিদ দোতলায় সম্প্রসারণ করা

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল কলেজের মসজিদটি দোতলায় সম্প্রসারণ করা। ছাত্র, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লি এখানে সমবেত হতেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বরাবরই রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে নামাজ আদায় করতেন। মসজিদের দোতলা ভবন উদ্বোধন করার মাধ্যমে সেই দাবি পূরণ করেছেন ঢাকা কলেজের এ কালের সেরা অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। 

কলেজ মাঠ-২ এর সংস্কার

কলেজের ৮টি ছাত্রাবাসের জন্য একটি খেলার মাঠ ছিল। তবে সেই মাঠ ছিল অনুপযোগী। বর্ষা মৌসুমে প্রায় পানি জমে থাকত। এবং সেখানে ময়লা আবর্জনা থেকে মশা উৎপন্ন হতো। কলেজের ছাত্রাবাসে আবাসিক ছাত্রদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল এই মাঠটির সংস্কারের। অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ছাত্রদের কষ্টের কথা চিন্তা করে সেই মাঠটি সম্পূর্ণ খেলার উপযোগী করেন এবং চারদিকে আলোর ব্যবস্থা করেন। সেখানে সবসময় অন্ধকার ছিল। অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ঢাকা কলেজের সব স্থানকে অন্ধকার থেকে আলোয় আলোকিত করেছেন।

স্বাধীনতা চত্বর নির্মাণ

কলেজে প্রবেশ করতেই প্রশাসনিক ভবনের পাশে শিক্ষার্থীদের বসার জন্য স্বাধীনতা চত্বর নির্মাণ করেন ছাত্রবান্ধব অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। আগে ছাত্রদের বসার তেমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ১৮ একরের এই সুবিশাল ক্যাম্পাসে তিনি ছাত্রদের বসার জন্য মাঠের ও পুকুরের পাশে স্থায়ী ব্যবস্থা করে দেন।

এছাড়া, কলেজের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এক অনন্য নাম অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। তিনি ছাত্রদের বিশুদ্ধ পানির জন্য ঢাকা ওয়াসার নিজস্ব পানির পাম্প স্থাপন করেছেন। যাতে ছাত্রদের বিশুদ্ধ পানি পানের সমস্যা না হয়। কলেজে দীর্ঘ দিন পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা বেহাল ছিল। কোনো ঢাকনা ছিল না। তিনি সেই সমস্যাও দূর করেন। নতুন করে বাস ডিপো একাডেমিক ভবনের নিরাপত্তা বেষ্ঠনী নির্মাণ করেছেন।

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ প্রায়ই বলতেন, ‌‌'ঢাকা কলেজের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক, আবেগের সম্পর্ক। আমি যেখানেই থাকি না কেনো ঢাকা কলেজকে কখনোই ভুলতে পারব না।' ঠিক তেমনি ঢাকা কলেজের প্রায় ২৫০০০ শিক্ষার্থীও তার এই প্রেম প্রীতি ও ভালোবাসা কখনো ভুলতে পারবে না। অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ছাত্রদের মনে থাকবেন অনন্তকাল।

আরও পড়ুন- ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন অধ্যাপক নেহাল

বিদায়বেলায় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরাই এই কলেজের প্রাণ। তোমরাই কলেজের সুনাম সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেবে। তোমরা যে কাজই করবে সবার আগে বাবা-মায়ের প্রতি তোমাদের দায়বদ্ধতা, কর্তব্যের কথা চিন্তা করবে। দেশের সাধারণ মানুষের অর্থে তোমরা এখানে পড়ছো। তাই দেশের প্রতি দায়িত্বের কথাও সবসময় মাথায় রাখবে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। এর আগে ২০১৯ সালের ৫ মে তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। 

লেখক: শিক্ষার্থী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক, ঢাকা কলেজ।

/মাহি/ 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়