ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সুন্দরবন রক্ষায় করণীয়

মো. বিপ্লব আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ১৪ অক্টোবর ২০২০  
সুন্দরবন রক্ষায় করণীয়

বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো একে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে। 

সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। মোট আয়তনের ৬২ শতাংশ বাংলাদেশের অংশ, আর বাকি অংশ ভারতের। বৃহত্তর খুননা বিভাগের কয়েক লাখ মানুষ সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে। এ বন থেকে নিয়মিত আহরণ করা হয় মধু, মৌচাকের মোম, ঘর ছাওয়ার পাতা, মাছ কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, এছাড়া অনেকগুলো শিল্প যেমন নিউজ প্রিন্ট, দিয়াশলাই, হার্ডবোর্ড, নৌকা, আসবাবপত্র, সুন্দরবন থেকে আহরিত কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। 

পাশাপাশি দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও অন্যান্য  প্রাকৃতিক দুযোর্গ থেকে রক্ষা করে সুন্দরবন। এই বনে ব্যাপক প্রাণবৈচিত্র্য বিদ্যমান রয়েছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, হরিণ ভাল্লুক ইত্যাদি। এছাড়া বনজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে সুন্দরী গেওয়া, গরান, কেওড়া এবং গোলপাতা গাছ। তবে, সুন্দরবনে মানুষের অবাধ বিচরণের কারণে প্রাণী ও বনজ সম্পদ ক্রমান্বয়ে বিলুপ্তির পথে ধাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনে মানুষের প্রবেশের ফলে বন্যপ্রাণীর সঙ্গে মানুষের সংঘর্ষ, অপরিকল্পিতভাবে গাছ কাটার ফলে বনের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।  এতে দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ আজ বিপন্ন।  

পশুর, বালেশ্বের, শিবসা, খোলপটুয়ার মতো অনেক ছোট-বড়ো নদ-নদী সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে। এই নদ-নদীতে মাছ ধরা হয় ও বিভিন্ন যাত্রীবাহী নৌকা চলাচল করে থাকে। কয়েক বছর আগে ৩ লাখ ৫৮ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল নিয়ে শেলা নদীতে তেলের জাহাজ ডুবে যাওয়ার পর, কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, তা দেখার জন্য জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সেখানে ছুটে গিয়েছিল। ক্ষতি হবে না বলে সরকার বারবার বললেও পরিবেশবিদরা প্রতিবেদনে বলেছিল, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক পরিবেশ জীববৈচিত্র্যের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হবে। 

সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌযান চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করার পরামর্শ দিলেও তাতে সরকার তেমন কর্ণপাত করেনি। এদিকে সুন্দরবনের পাশে রামপাল বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে, এটি এই বনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই সরকারের পাশাপাশি আমাদের দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুন্দরবনের প্রতি সজাগ থাকতে হবে। 

অন্যদিকে সুন্দরবনের ভারতের অংশে বিধিনিষেধ রয়েছে। এই অংশে সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সুপরিকল্পিত ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ে অধিকতর কার্যক্রম রয়েছে। আমাদের সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায়ও বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। 

১. সরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি এই বনে মানুষের অবাধ প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।

২. যেসব মানুষ সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে জীবিকা নিবাহ করে, তাদের অন্যত্র কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

৩. সরকারের বিভিন্ন উন্নায়নমূলক প্রকল্পের মতো সুন্দরবন রক্ষায় প্রকল্প হাতে নিতে পারে। 

৪. সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌচলাচল নিষিদ্ধ করতে হবে।

৫. সুন্দরবনের পাশে বসবাসরত মানুষ সরিয়ে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা যেতে পারে, যাতে সুন্দরবনে মানুষের বিদ্বেষমূলক প্রভাব না পড়ে।

৬. বনের গাছ কাটা ও পশুপাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।

৭. সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে যেসব অপরাধ হয়, তা প্রতিহত করতে সরকারের প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে।

উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো যথাযথ বাস্তবায়ন করলে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বনের জীববৈচিত্র্যের প্রসারণ ঘটতে পারে। সুন্দরবন প্রকৃতির দান, তাই বন রক্ষায় সরকারের পাশাপাশি আমাদের নিজ দায়িত্বে সচেতন হতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

রাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়