ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

সব অমঙ্গল দূর করো মা দুর্গা 

পিয়াল দাস অনুপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ১৩ অক্টোবর ২০২১  
সব অমঙ্গল দূর করো মা দুর্গা 

মহামায়া, সনাতনী, ত্রিনয়নী, হিমালয় কন্যা থেকে শুরু করে যোগমায়া, চন্ডিকা, অম্বিকা, নারায়ণী, কাত্যায়নী কিংবা কখনো তিনি মহিষাসুর মর্দিনী দেবী দুর্গা। কতই তার নাম, কতই তার মহিমা তা বলে শেষ করা যাবে না।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসবের নাম শারদীয় দুর্গোৎসব। শক্তির দেবী তিনি। ইতিহাস অনুয়ায়ী তাহেরপুরের রাজা কংস নারায়ণ বা নদীয়ার রাজা ভবানন্দ মজুমদার বাংলায় প্রথম শারদীয়া বা শরৎ দুর্গোৎসবের সংগঠক।

আজ সারাবিশ্বে তিনি দেবী দুর্গা নামেই পূজিত। মন্দিরে মন্দিরে মৃৎশিল্পীর হাতের কারসাজি আর দেবীর ত্রিনয়নের অপূর্ব সৌন্দর্য মনে এক শান্তির জন্ম দেয়। মাকে কাছে পেলে যেমন সন্তান সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে মনে আনন্দ পায়, তেমনি দেবী দুর্গার মুখ দেখে অন্তরে ঠিক এমন সুখই অনুভব হয়। মা দুর্গার আগমনে পৃথিবী পূণ্যভূমি হয়ে ওঠে। দেবী দুর্গার আগমনেই হয়তো শরৎ পূর্ণতা পায়।

দেবী দুর্গা। দুর্গতি নাশ করেন বলেই তিনি দুর্গতিনাশিনী। প্রাচীন কালে মহিষাসুরের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন, তখনই দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়। অসুর বিনাশকারী দেবী পৃথিবীতে যতবারই অসুরদের অত্যাচার বেড়ে গেছে, ততবারই তিনি বিভিন্ন রূপ ধারণ করে পৃথিবীকে অসুর মুক্ত করেছেন।

দেবী দুর্গা কেবল অসুর সংহারই করেননি, তিনি সমাজে নারীদের এনে দিয়েছেন সম্মান। নারী বলে যাদের এ পুরুষ সমাজ একসময় অবহেলা করত, তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন সমাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীর প্রয়োজন কতটুকু। নারীদের করেছেন স্বাধীন।

দেবীর ত্রিশুলের আঘাতে অসুরের হৃদয় ভীত হয়েছে। দশভুজা দেবীর আগমনে সমাজ থেকে যেসব মনুষ্য অসুর আছে তাদের বিনাশ হওয়া প্রয়োজন। দুর্নীতি, অন্যায়, অবিচার, শোষন আর দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের এবার বিনাশ হওয়া প্রয়োজন। সমাজে আবার দেবী দুর্গা এসব মনুষ্য অসুরের বিনাশ ঘটিয়ে পৃথিবীকে আবার অসুর মুক্ত করবেন এটাই চাওয়া দেবীর কাছে।। মহামারি আর অসুর মুক্ত পৃথিবী নিশ্চয়ই আবার দেবীর অগণিত ভক্তের চাওয়া। তিনি সার্বজনীন। তিনি সবার দেবী। তিনি মা দুর্গা।

দেবী দুর্গা তিনি এলেই যেন বাঙালি প্রাণ ফিরে পায়। মানুষে মানুষে এত সৌহার্দ্য আর সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। প্রতিটি বাড়িতে তখন উৎসবের আমেজ। দেবীর আগমনে পৃথিবীতে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। মন্দিরে মন্দিরে দেবীর আরাধনা আর ঢাকের শব্দ পৃথিবীতে এক অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ জন্ম দেয়। তখন মনে হয় দেবী দুর্গা কোনো একক ধর্মের নয়, তিনি যেন বাঙালির মেয়ে হয়ে প্রতিটি ঘরে এসেছেন। চারদিকের উৎসবে বাঙালির বিভিন্ন ধর্মালম্বীরা উপস্থিত হয়ে যে এক আত্মিক মেলবন্ধনের পরিবেশ সৃষ্টি করে, দেখতে কি অপূর্ব লাগে! মনে হয়, মানুষে মানুষে কোনো বিভেদ নেই। রক্ত-মাংসে গড়ে ওঠা দেহের আত্মাগুলো সবই সুন্দর, সবই এক এবং অভিন্ন।

সব বিভেদ ভুলে সম্প্রীতির সম্পর্ককে এভাবে বাঁধতে এবং অসুরদের সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে দেবী দুর্গার নিকট এটাই চাওয়া। তিনি যেন পৃথিবীকে অসুর মুক্ত করে সৎ এবং ভালো মানুষের জন্য পৃথিবীকে বসবাসের উপযোগী করে দেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

কবিতা/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়