ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

করোনাকালে চাহিদা হারিয়েছে সেমাই-চিনি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৯, ১২ মে ২০২১   আপডেট: ১২:২২, ১৩ মে ২০২১
করোনাকালে চাহিদা হারিয়েছে সেমাই-চিনি

ফাইল ফটো

রমজান মাস প্রায় শেষ। আর মাত্র একদিন পরই ঈদুল ফিতর। ঈদের দিন সকালে সেমাই দিয়েই বাঙালীর যাত্রা শুরু হয়। একই সঙ্গে অতিথি অপ্যায়নেও সেমাইয়ের চাহিদা রয়েছে। 

তবে এবারের ঈদে কমেছে সেমাই-চিনির চাহিদা। করোনাকালে অতিথি অপ্যায়ন কমে গেছে বলেই সেমাই-চিনির চাহিদা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সেমাই বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

রাজধানীর শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, কাপ্তানবাজার, চকবাজার এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়। 

তারা জানান, এক সময় ঈদের ১৫ দিন আগে থেকে সেমাই-চিনি কেনার জন্য মানুষের ভিড় লেগে থাকতো। বিশেষ করে শবে কদরের আগে থেকে সেমাই এবং চিনি বিক্রির চাপ থাকতো সবচেয়ে বেশি। কিন্তু এখন সেমাইয়ের কদর নেই। করোনা আতঙ্কে মানুষ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। তাই আগের মতো আপ্যায়নও নেই। ফলে সেমাইয়ের চাহিদা অনেকটা কমে গেছে। বর্তমানে যা সেমাই বিক্রি হচ্ছে তা শুধুমাত্র পরিবার নিয়ে খাওয়ার জন্য কিনছে ক্রেতারা। ফলে সেমাই বিক্রি আগের চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত লাচ্ছা সেমাই পাওয়া যায়। এরমধ্যে বনফুল, কুলসন, প্রাণ, ওয়েল ফুড, কিশোয়ান, ড্যানিশ ও প্রিন্সসহ নানা ব্র্যান্ডের সেমাই রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করা খোলা লাচ্ছা সেমাইতো রয়েছেই।

ব্যান্ডের মধ্যে ২০০ গ্রাম লাচ্ছা সেমাই ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়। আর ৫০০ গ্রামের স্পেশাল লাচ্ছা সেমাই বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকায়। এছাড়া খোলা লাচ্ছা সেমাই ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য সেমাই প্রতিকেজি ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বনফুল অ্যান্ড কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার আমানুর রহমান আমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনার কারণে সেমাইয়ের ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। আগের চেয়ে বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে। করোনার যে পরিস্থিতিতি, তাতে মানুষ নিত্যদিনের খরচ চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে। ফলে সেমাইয়ের চাহিদা অনেক পরিবারেই নেই। এতে সেমাই বিক্রিও কমেছে।’

যাত্রাবাড়ী সরলা বেকারি নিজেদের তৈরি খোলা লাচ্ছা সেমাই বিক্রি করেন। তারা প্রতিকেজি লাচ্ছা সেমাই ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটির সামনে সারি সারি লাচ্ছা সেমাই সাজিয়ে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা তুলনামূলক অনেক কম। 
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক মো. মনির হোসেন বলেন, ‘অতীতে একদিনে ১০ মণ সেমাই বিক্রি করার রেকর্ড আছে। কিন্তু করোনাকালে বিক্রি মন্দা। বুধবার (১২ মে) সারাদিনে মাত্র এক মণ সেমাই বিক্রি হয়েছে।’

এদিকে, ব্যবসা মন্দা থাকার পরও ভেজাল সেমাইয়ে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। বাজারে ব্র্যান্ডের গুণগত মানের সেমাইয়ের চেয়ে খোলা সেমাই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, কম দামে সেমাই খোঁজেন ক্রেতারা। তাই গুণগত মান ঠিক রাখতে না পেরে ভেজালের আশ্রয় নেয় কিছু প্রতিষ্ঠান।

কাপ্তান বাজারে শরীয়তপুর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাজী আব্দুর রহিম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মানুষ অন্যান্য সব চাহিদা পূরণ করার পর সেমাই-পায়েস খায়। এমনিতে দেশে করোনা চলছে। মানুষের আয় রোজগার কম। তাতে ডাল-ভাত খাওয়াটাই কস্টের। ফলে সেমাইয়ের বাজার আগের তুলনায় মন্দা। যারা সেমাই কিনতে আসছেন, তারা আবার দামে সাশ্রয় খোঁজেন। আর এমন ক্রেতা ধরে রাখতে কিছু নামহীন প্রতিষ্ঠান গুণগত মানের দিকে খেয়াল না রেখে কম দামে ভেজাল সেমাই বাজারজাত করছে। যদিও ভ্রাম্যমাণ আদালত অনেক সেমাই কারখানাকে জরিমানা করছে। কিন্তু তাতে লাভ হচ্ছে না। আসলে সবাইকে সচেতন হওয়া জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর ঈদের আগে অন্যান্য পণ্যের চেয়ে সেমাই চিনি বেশি বিক্রি হতো। কিন্তু এবার করোনার ছোবলে সেমাই বিক্রিতে ধস নেমেছে।’

এই প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত ক্রেতা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আগে বাসায় মেহমান আসবে বলে কমপক্ষে পাঁচ কেজি সেমাই কিনতাম। এবার মাত্র দুই প্যাকেট (২০০ গ্রাম করে ৪০০ গ্রাম) সেমাই কিনেছি। এই করোনায় অতিথি আপ্যায়ন হবে না বলে সেমাই চিনিও কম কিনলাম।’

সেমাই বিক্রেতারা আশা করছেন, করোনা সংক্রমণ কমে গেলে সেমাইয়ের বাজার হারানো ঐতিহ্য খুঁজে পাবে। 

এ সম্পর্কে ওয়েল ফুডের বিক্রয় কর্মী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আসলে করোনায় সরকারের কঠোর বিধি নিষেধের মধ্যে মানুষও সীমিত চলাচল করছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে কম বের হচ্ছে। তাতে ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। বিশেষ করে সেমাই বিক্রি এবার খুবই কম হয়েছে। তবে করোনা কমে গেলে আগে যে পরিমাণ সেমাই বিক্রি হতো তা হয়তো আবারও করা যাবে।’

ঢাকা/এনএফ/সনি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়