ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৯ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

ব্যর্থ হতে হতে সফল সুবর্ণা 

মোস্তাফিজুর রহমান  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৯, ৩ নভেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:১৫, ৩ নভেম্বর ২০২০
ব্যর্থ হতে হতে সফল সুবর্ণা 

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামের মেয়ে সুবর্ণা রাণী দাশ। সংসার ও উদ্যোক্তা জীবনের পাশাপাশি পড়াশুনা করছেন টঙ্গী সরকারি কলেজে। সাত ভাইবোনের সংসারে ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে চরম সংকটে পরেন। 

২০১৫ সালে বিয়ের পর গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে শুরু হয় বিবাহিত জীবনের নতুন অধ্যায়। স্বামী সমীর দাসের উৎসাহ আর সহযোগিতায় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন সুবর্ণা। কী ব্যবসা করবেন প্রথমে ভেবে পাননি তিনি। পরে ভাবলেন, স্পেশাল কিছু রান্না পারেন এবং কাপড় ব্যবসাও ভালো বোঝেন।

সুবর্ণা রাণী দাশ বলেন, ‘বাবাকে হারিয়ে বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার ভেতর বড় হই। মনের মাঝে আগলে রেখেছিলাম মেয়ে থেকে একজন স্বাবলম্বী মানুষ হতে অর্থনৈতিক সংকট মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ও সংসারে অবদান রাখতে। চার লাখ টাকা বিনিয়োগের সামর্থ নিয়ে আমি কাজে নামি।’ 

একসময় সুবর্ণা স্বামীর চাকরির সুবাদে নোয়াখালী চলে যান। প্রথমে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে এক্সপোর্ট কোয়ালিটি গার্মেন্টস পণ্য নিয়ে ব্যবসা আরম্ভ করেন। ক্রেতাদের থেকে খুব ভালো সাড়া না পেয়ে পরবর্তী সময়ে থ্রি-পিস, শাড়ি কাপড় ও থান কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। এতে ভালো সাড়া পেয়ে যান। 

ছয় মাস পর চৌমুহনী থেকে টঙ্গীতে স্থানান্তরিত হন তিনি। আরও তিন লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন পূর্বের বুটিকস ও নতুন করে পার্লার ব্যবসায়। করোনার আগ পর্যন্ত প্রতি মাসে প্রায় বাইশ হাজার টাকার বেশি আয় হতো এ ব্যবসা থেকে। সুবর্ণা পার্লারের কাজ নিজেই করতেন। এতে প্রচুর চাহিদা ছিল ক্রেতার। 

করোনা পরিস্থিতিতে আবার নতুন করে চিন্তা করেন ব্যবসা পরিবর্তন করার। আত্বীয়স্বজন ও স্বামীর পরামর্শ পেয়ে বুটিকস এবং পার্লারের শো-রুম বন্ধ করে দেন। শো-রুম বন্ধ করে খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবসা পরিবর্তন করায় বেশ বড় একটা ক্ষতি থেকে বেঁচে যান।

সুবর্ণা ফেসবুক ব্যবসায়ী পেজ ‘সুবর্ণলতা’র মাধ্যমে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী প্যারা সন্দেশ, নারিকেল সন্দেশ ও ড্রাই ফুড নিয়ে কাজ করেন। গত ৫ মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেশি খাবার সরবরাহ করেন ২২টি জেলাতে। প্রতিনিয়ত সাধারণ ক্রেতা বাড়ছে।

সুবর্ণা রাণী দাশ বলেন, ‘সপ্তাহের যে দিনে পাইকারি বাজারে যেতে হয়, ওইদিন বেশি কষ্ট হয়। কারণ তিন বছরের একটা ছেলে আছে। তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে হতো। তাছাড়া ঘরের জন্য রান্না করে সঙ্গে প্যাকেটে করে কিছু নিতেও হতো। ওইদিন কাজ শেষ করে আসতে রাত ৮টা-৯টা বেজে যেত।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘একবার বাসে করে পাইকারি মার্কেটে যাচ্ছি, তখন আমার ছেলেটার বয়স প্রায় এক বছরের মতো হবে। বৈশাখ মাস। প্রচণ্ড গরম। ছেলেটা কিছুক্ষণ পর পর কান্নাকাটি করছে। আমার উপরে বাসের সমস্ত মানুষের বিরক্তির চোখ। পাশে বসা একজন জানতে চাইলো আমি কোথায় যাচ্ছি। তাকে আমি জানানোর পর খুব হেয়ভাবে বললো ‘আমরা তো এই বয়সেও গরমে ঘর থেকে বের হই না। আর আপনি এই ছোট বাচ্চাকে নিয়ে ব্যবসা করেন!’ 

‘পণ্য ডেলিভারির দিন কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠে ঘরের রান্নাবান্না শেষ করি। তারপর অর্ডার করা পণ্যের প্যাকেজিংয়ের কাজ করি। ছেলে ঘুম থেকে ওঠার পর সব কাজ শেষ করে দোকানে চলে যেতে হয়, দুপুরের দিকে এক ফাঁকে কুরিয়ার করতে যাই। দোকান থেকে রাত ৯-১০টার দিকে বাসায় এসে পুনরায় ঘরের কাজ করি’, বলেন তিনি। 

সুবর্ণা উঠতি উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, ‘কঠোর পরিশ্রমের ধৈর্য্য, শক্তি ও নতুন কিছু শেখার মানসিকতা না থাকলে এই রাস্তায় না নামাই ভালো। পাশাপাশি প্রথম দিকের বিশেষ যে বাঁধা আসে মেয়েদের, তা হচ্ছে অনেকে সাপোর্ট দেবে না। এসব বিষয় মাথা থেকে নিজের কাজকে প্রাধান্য দিতে হবে।’ 

লেখক: শিক্ষার্থী, ভেটেরিনারি বিভাগ, গণ বিশ্ববিদ্যালয়।  

গবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়