দেবতার তৃতীয় লিঙ্গে রূপান্তরের গল্প
শাহিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম
শাহিদুল ইসলাম : প্রকৃতির অমোঘ খেয়ালে পৃথিবীতে উভয় লিঙ্গের সন্তানের জন্ম হয়। আগে থেকে নির্ধারণ করা সম্ভব নয়, কোন কোন নারী-পুরুষের সম্মিলনে উভলিঙ্গের সন্তানের জন্ম হয়। এ ধরনের নারী বা পুরুষ কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের অধিকারী না হয়ে উভয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। এ ধরনের মানব সন্তানদের তৃতীয় লিঙ্গ বা উভলিঙ্গ বলা হয়। যে কথা বলতেই হয়, এই তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের মানব সন্তান জন্মের ক্ষেত্রে মা-বাবা যেমন দায়ী নয়, তেমনি সন্তানেরও কোনো দায় নেই।
কিন্তু দায়ী কে? জীব বিজ্ঞানীরা এই তৃতীয় বৈশিষ্ট্যের মানব সন্তান জন্মের রহস্যকে এখন পর্যন্ত উন্মোচন করতে পারেননি। পৃথিবীর প্রথম তৃতীয় লিঙ্গ কে? এই বিষয়ে গবেষণা করে গবেষকরা এখনো কোনো সদুত্তর দিতে না পারলেও গ্রিক পুরাণে এর একটি সুন্দর বর্ণনা রয়েছে।
‘হিজড়া’ বা ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ শব্দের ইংরেজি হার্মাফ্রোদাইত শব্দের উৎপত্তি গ্রিক দেবতা হার্মাফ্রোদিতাসের নাম অনুসারে। হার্মাফ্রোদিতাস ছিলেন গ্রিক পুরাণের এক আলোচিত চরিত্র। তিনি ছিলেন মায়াবী চেহারার দেবতা। তার বাবার নাম হার্মেস এবং মায়ের নাম আফ্রোদিতি। তিনি ছিলেন সৌন্দর্য, প্রেম ও যৌনতার দেবী। আর হার্মেস ছিলেন দেবদূত।
হার্মাফ্রোদিতাস ছিল তাদের অবৈধ সন্তান এবং তাদের দুজনের নাম মিলিয়ে সন্তানের নাম রেখেছিলেন। ছোটবেলায় জল-পরীরা হার্মাফ্রোদিতাসের দেখাশোনা করত। তারা থাকত ফ্রাইজিয়ার পবিত্র ইদা পর্বতের একটা গুহায়। আর এ গুহাতেই কেটে যায় হার্মাফ্রোদিতাসের শৈশব আর কৈশোর।
হার্মাফ্রোদিতাস যখন ১৫ বছরের কিশোর, তখন এক দিন বাইরে ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবলেন। কারণ এক জায়গায় দীর্ঘদিন থাকতে থাকতে বিরক্ত লাগছিল তার। পাশের লাইসিয়া ও কারিয়া শহরে ঘুরতে গেল সে। ঘুরতে ঘুরতে হালিকার্নাসাসের পাশের শহর কারিয়ার বনে এসে পৌঁছাল সে।
সেই বনে বাস করত ঝর্নাপরী সালমাসিস। সালমাসিসের ঝর্না ছিল সবুজ ঘাস, রঙিন ফুল আর পাখির কলকাকলীতে পূর্ণ স্বর্গীয় আবহে ঢাকা। সেদিন সালমাসিস ঝর্নার পাশে ফুল তুলছিল। অপূর্ব মোহনীয় কিশোর হার্মাফ্রোদিতাসকে দেখেই পরী সালমাসিস তার প্রেমে পড়ে গেল। ভালোবাসার কথা জানালো তাকে। কিন্তু কিশোর হার্মাফ্রোদিতাস কিছুইতেই রাজি হলো না।
এমনভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে রাগে দুঃখে সালমাসিস বনে চলে গেল। আসলে এটা ছিল তার একটা ভানমাত্র। অদূরেই একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে সে হার্মাফ্রোদিতাসকে দেখছিল। এদিকে, হার্মাফ্রোদিতাসের ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করল এবং পড়লও। সে জলের দিকে এগিয়ে গেল। শরীর থেকে একে একে সব কাপড় খুলে ফেলল। হার্মাফ্রোদিতাসকে দেখে সালমাসিস আর ধরে রাখতে পারল না নিজেকে। পিছু পিছু সেও ঝাঁপিয়ে পড়ল ঝর্নার জলে।
সালমাসিস চাইছিল হার্মাফ্রোদিতাসকে নিজের করে কাছে পেতে। কিন্তু হার্মাফ্রোদিতাস চাইছিল দূরে সরে যেতে। এতে সালমাসিসের বুক ভেঙে যাচ্ছিল। সে কান্নায় ভেঙে পড়ল। জিউসের কাছে চিৎকার করে প্রার্থনা করল, ‘জিউস, আমাদের চিরদিনের জন্য এক করে দাও। আমাদের দুটি শরীর মিলিয়ে দাও। জিউস কৌতুক বোধ করলেন এবং সালমাসিসের প্রার্থনা প্রতিদান দিলেন। দুজনের শরীর মিলিয়ে একটি শরীর করে দিলেন।
এভাবে হার্মাফ্রোদিতাস পুরুষ হয়েও মেয়েদের মতো হয়ে যান। তাঁর শরীরে নারী ও পুরুষ উভয়ের বৈশিষ্ট্য ফুটে ওঠে। আর সেই থেকে গ্রিক পুরাণের এই উপাখ্যান দাবি করে- তৃতীয় লিঙ্গের উৎপত্তি সম্ভবত এভাবেই হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্বাস রয়েছে, হার্মাফ্রোদিতাস হলো মানব জাতির ইতিহাসে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের মানব সন্তান।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ নভেম্বর ২০১৬/রাসেল পারভেজ
রাইজিংবিডি.কম