ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পাহাড়পুরে এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ বিহার

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৪:২৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১
পাহাড়পুরে এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ বিহার

নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তরে ৭০.৩১ একর জমির উপর অবস্থিত পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার। পাহাড়পুরের প্রাচীন নাম ‘সোমপুর’। সোমপুর মানে চাঁদের নগরী। আর মহাবিহার হচ্ছে বৃহদাকৃতির মঠ। স্থানীয় লোকজন একে সোমপুর বৌদ্ধ বিহারও বলেন।

৭৭০-৮১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে রাজা ধর্মপালের সময় এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। অষ্টম ও নবম শতাব্দিতে পাল বংশের দ্বিতীয় ও তৃতীয় রাজা ধর্মপাল এবং তার পুত্র দেবপালের পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়পুর বিহার ও মন্দির গড়ে ওঠে। ১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়। পাহাড়পুর বিহারকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধবিহার বলা যেতে পারে। আয়তনের দিক থেকে এর সঙ্গে কেবল ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা করা হয়। ঐতিহাসিক, অপূর্ব এই বিহারটি এশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ বিহার হয়ে এখনও সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।

চতুর্ভুজ আকারের এই বিহারের চারটি বাহুতে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য ১৭৭টি সারিবদ্ধ কক্ষ রয়েছে। কক্ষগুলোর সামনে টানা বারান্দা এবং পেছনে অত্যন্ত চওড়া প্রাচীর রয়েছে। উত্তর বাহুর মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে বিরাট প্রবেশ তোরণ। তোরণগুলো  আবার বাইরে থেকে দুটি ঘরের মাঝ দিয়ে বিহারের উন্মুক্ত চত্বরের সঙ্গে যুক্ত। এরকম স্থাপনা ইতিহাসের এক বিরল নিদর্শণ!

পাহাড়পুর বিহার চত্বরে রয়েছে মনোরম একটি যাদুঘর। খলিফা হারুণ আল রশীদের শাসনামলে, বিহার খননকালে মাটির নিচ থেকে ১২৫টি রৌপ্য মূদ্রা ভরা মাটির পাত্র পাওয়া যায়। সেগুলো যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এসব মূদ্রা ছাড়াও বিহার থেকে পাওয়া অনেক মূর্তি, শিলালিপি পাহাড়পুর যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত খননের ফলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এই বিহারের পূর্ব দিকে সত্যপিরের ভিটা ও মন্দিরের চারদিকে কক্ষগুলো আবিষ্কার করেন। এর মধ্যভাগে রয়েছে প্রধান বিহার। তাকে ঘিরে ১৯৮টি বাসউপযোগী কক্ষ, বিস্তৃত প্রবেশ পথ, অসংখ্য বিনোদনস্তূপ, ছোট ছোট মন্দির আর পুকুরের অবস্থান। এই স্থাপনাটি উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য ৩৫৭ ফুট প্রস্থে (পূর্ব-পশ্চিমে) ৩১৪ ফুট। মূল বিহারটি এর মধ্যস্থলে অবস্থিত। বিহারের গায়ে নানা ধরনের জীবজন্তুর মূর্তি রয়েছে। মূল ভূমি থেকে এই বিহারের উচ্চতা প্রায় ৭২ ফুট। আকর্ষণীয় স্থাপত্যশিল্প, বিশাল আকার ও আয়তন এবং ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার আজ বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত।

প্রতিদিনই বহু দেশি-বিদেশি পর্যটক ও সাধারণ মানুষের সমাগম হয় এই বিহার দেখার জন্য। বিশেষ করে ছুটির দিনে প্রচুর পর্যটক আসেন। নওগাঁ বালুডাঙা বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাসে করে পাহাড়পুর যাওয়া যায়। নওগাঁ থেকে সড়কপথে দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। আবার জয়পুর হাট থেকেও বাস বা অটোতে পাহাড়পুর যাওয়া যাবে। দূরত্ব মাত্র ১৩ কিলোমিটার। জয়পুরহাটের ট্রেনে জয়পুরহাট না গিয়ে জামালগঞ্জ স্টেশনে নেমে, ভ্যান বা অটোরিকশায় যাওয়া যাবে। জামালগঞ্জ থেকে দূরত্ব মাত্র ৫ কিলোমিটার।

তবে যারা দূর থেকে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার দেখতে যাবেন, তারা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বিহার দেখে, জয়পুরহাট বা নওগাঁতে ফিরে যেতে হবে। পাহাড়পুর এলাকায় থাকার মতো তেমন কোনো হোটেল এখনও গড়ে ওঠেনি।

ছবি: প্রতিবেদক

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়