ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণে রোজা ঢালস্বরূপ

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ১৯ এপ্রিল ২০২২   আপডেট: ১৪:২৬, ১৯ এপ্রিল ২০২২
ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণে রোজা ঢালস্বরূপ

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হলো, মানুষের মধ্যে রয়েছে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিবেক, বিচক্ষণতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। মানুষকে আল্লাহ তায়ালা ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য, সত্য-মিথ্যা নিরুপণের ক্ষমতা দিয়েছেন। নির্দেশ দিয়েছেন-তোমরা মানুষকে সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করবে। (আলে ইমরান: ১১০)

এই আয়াতে পরোক্ষভাবে প্রথমে নিজে সৎ হওয়ার এবং তারপর মানুষকে সৎ কাজের আদেশ দেওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে। এরপরও মানুষ সৎ থাকতে পারে না। জড়িয়ে পড়ে মন্দ কাজে। আর তা হয় ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার কারণে। রোজা ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। তার আগে আমরা জানব ষড়রিপু কী?

ষড়রিপু হলো:
১. কাম
২. ক্রোধ
৩. লোভ
৪. মোহ
৫. মদ
৬. মাৎসর্য

ষড় মানে ছয় আর রিপু শব্দের অর্থ হলো- কণ্টক, শত্রু, দুশমন, প্রবৃত্তি। ষড়রিপুর অর্থ ছয় চরম শত্রু। তাছাড়া রিপু শব্দটি নিযুক্তি বা ব্যাপৃত হওয়া অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই ছয় শত্রু মানুষের সুকুমারপ্রবৃত্তি চূর্ণ করে অসৎ কর্মে ব্যাপৃত করে এবং মানবজীবনের মহৎ উদ্দেশ্যেগুলো বিনষ্ট করে দেয়।

কাম অর্থ : কামনা , বিষয় বাসনা, যে কোনো রূপ ভোগ বাসনা ও সম্ভোগেচ্ছা। রিপুগুলোর মধ্যে কাম রিপুই প্রধান। বিষয় চিন্তা করতে করতে মানুষের তাতে আসক্তি জন্মে, আসক্তি হতে কামনা, অর্থাৎ বিষয় ভোগের অভিলাষ জন্মে, এই চাওয়া যখন চরম আকার ধারণ করে, ওই চরম অবস্থার নামই হচ্ছে কাম।

ক্রোধ অর্থ: রোষ বা রাগ। আগুন যেমন সবকিছু পুড়িয়ে ভষ্ম করে দেয়, ক্রোধও তদ্রূপ হানিকারক। কেননা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ক্রোধান্ধ ব্যক্তি।

লোভ অর্থ: কামনা বা লিপ্সা। কাম্য সুন্দর কোনো বস্তু পাওয়ার প্রবল বাসনা। অন্যের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রাদি অধিকার করার প্রবল আসক্তি লোভের সৃষ্টিকারক। লোভ হলো সুশৃঙ্খল সমাজের মাঝে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এক বিবেকহীন দানব। লোভের কারণেই প্রতিনিয়ত পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে অহরহ সংঘাতের সৃষ্টি হয়।

মোহ অর্থ: অজ্ঞান। মোহ দ্বারা অজ্ঞতা, অবিদ্যা, মূর্খতা, মূঢ়তা, নির্বুদ্ধিতা বা ভ্রান্তিকে বুঝানো হয়। মোহ দ্বারা অন্ধ মুগ্ধতাকেও বোঝায়। মোহমুগ্ধ ব্যক্তি মোহাচ্ছন্ন থাকায় তার হৃদয় অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। মোহান্ধ ব্যক্তি সঠিক সিদ্ধান্তে কখনই উপনীত হতে পারে না।

মদ অর্থ: গর্ব, দম্ভ বা অহঙ্কার। মদের আরেকটি অর্থ সুরা। সুরা পান করলে মানুষ মাতাল বা উন্মত্ত হয়। তদ্রূপ মদমত্ত ব্যক্তিও অহঙ্কারে উন্মত্ত থাকে। সে ধরাকে সরা জ্ঞান করে। তার মধ্যে সর্বদা উদ্ধতভাব পরিস্ফুটিত হয়। সে কখনও অন্যের ভালো-মন্দ বিবেচনা করতে পারে না। আকাশছোঁয়া তার উচ্চাকাঙ্খা পূরণ করতে গিয়ে সে তার স্বীয় পতনকে অনিবার্য করে তোলে।

মাৎসর্য অর্থ: ঈর্ষা, হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা। অপরের উন্নতি বা সৌভাগ্য দেখলে অন্তর্জালা যাদের সীমাহীন দগ্ধ করে তারাই মূলত মাৎসর্যপরায়ণ। সে সর্বদা ভাবতে থাকে ‘আমার কেন তার তুলনায় বেশি ভালো হলো না। আমার যখন হলো না, তখন অন্য কারও সেটি পাবার অধিকার নেই।’ তা বলে সে অন্যের ক্ষতি করতে থাকে।

ষড়রিপু মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে, অনুচিত ও অকল্যাণের পথে নিয়ে যায়। এগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও সংশোধন প্রয়োজন। চুরি, ডাকাতি, রাহাজানিসহ সিংহভাগ অন্যায় সংঘটিত হয় লোভের কারণে। কিন্তু জীবন থেকে যদি এই লোভ সম্পূর্ণ উৎখাত করা হয়, তাহলে মানুষ উন্নত থেকে উন্নততর সোপানে আরোহণ করতে সচেষ্ট হবে। রমজানের রোজা এগুলোকে এমনভাবে দহন করে, যাতে মানুষ এগুলোর সর্বোচ্চ সুফল লাভ করতে পারে।

আর ষড়রিপুর নিয়ন্ত্রণের রোজার ভূমিকা অপরিসীম। কারণ রোজাদার ব্যক্তিকে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হয়। কামাচার, পাপাচার ও  অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকতে হয়। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম বলেছেন, রোজা প্রকৃতই ঢালস্বরূপ। রোজা পাপাচার, কামাচার, মিথ্যা ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে বেঁচে থাকার মোক্ষম উপায়। এ প্রসঙ্গে হজরত উবাদাহ বিন সামিত (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, রোজা মানুষের জন্য ঢালস্বরূপ। যতক্ষণ পর্যন্ত না উহাকে ভঙ্গ করা হয়। (নাসায়ি ওইবনে মাজাহ)

সুতরাং ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণে রোজা ঢাল তখনই হবে যখন আমরা পূর্ণ হক আদায় করে রোজা রাখব। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যথাযথভাবে রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, মাসিক ইসলামী বার্তা

/তারা/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়