ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বন্ধু পেতে করোনার টিকাকে ব্যবহার করছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৫৫, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ০৩:৩৮, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০
বন্ধু পেতে করোনার টিকাকে ব্যবহার করছে চীন

চীনের উৎপাদিত করোনার টিকা দ্রুত পেতে যাচ্ছে ফিলিপাইন। ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দেশগুলো ওষুধ কিনতে চীনের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাচ্ছে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। চীনের একটি কোম্পানির কাছ থেকে বাংলাদেশ করোনার এক লাখ ডোজ টিকা বিনামূল্যে পাবে।

করোনার নিরাপদ টিকা ব্যাপক উৎপাদনে চীনের অবশ্য আরও কয়েক মাস সময় লাগবে। বেইজিং অবশ্য টানপোড়েনে থাকা কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত এবং আঞ্চলিক বন্ধুদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে সম্ভাব্য এই টিকাকে ব্যবহার করতে চাইছে।

উদহারণ হিসেবে বলা যায়, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে চীনের সংশয়ী সম্পর্ক বহুদিনের। গত সপ্তাহে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোকে টেলিফোনে বলেছেন, ‘ইন্দোনেশিয়ার উদ্বেগকে চীন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং টিকার প্রয়োজনে সহযোগিতা করবে।’ টিকার উন্নয়নে দুই দেশের সহযোগিতাকে ‘একটি নতুন উজ্জল চিহ্ন’ বলে মন্তব্য করেছেন শি।

করোনার টিকা সরবরাহের আশ্বাসের আগে চীন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাস্ক ও ভেন্টিলেটর পাঠিয়েছিল। এর ফলে করোনা মোকাবিলায় বৈশ্বিক নের্তৃত্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ায় যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল সেখানে চীন নিজেকে উপস্থাপন করতে কিছুটা সক্ষম হয়েছে। করোনা মোকাবিলা নিয়ে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ব্যর্থতা নিয়ে যে অভিযোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উঠেছিল সেখান থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে সক্ষম হয় বেইজিং। এছাড়া করোনা মহামারি পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় চীন যে নেতৃত্বে আসনে বসতে যাচ্ছে দরিদ্র দেশগুলোকে টিকা সরবরাহের মাধ্যমে সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে বেইজিং।

টিকার উন্নয়ন দৌঁড়েও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে আছে চীন। দেশটির চারটি টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ ধাপে আছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ ধাপে রয়েছে। অবশ্য এর মধ্যে একটি চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়াল স্থগিত ঘোষণা করেছে। মার্কিন অর্থায়নে টিকা উন্নয়নে নিয়োজিত ব্রিটিশ-সুইডিশ কোম্পানি আস্ট্রাজেনেকা গত সপ্তাহে ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার দেখা দেওয়ায় এ ঘোষণা দিয়েছে।

গত মাসে চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কিকিয়াং থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশগুলোকে টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। চীনের এই প্রস্তাব সাদরেই গ্রহণ করেছিলেন তারা। শুধু তাই নয় বৈঠকে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী চীনের এই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরেক দেশের ফিলিপাইনের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত চীন। জুলাইয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে আইনপ্রণেতাদের জানিয়েছেন তিনি চীনের কাছে টিকা সরবরাহের অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত সীমা নিয়ে তিনি আর চীনের সঙ্গে মোকাবিলায় যাবেন না বলেও জানিয়েছেন দুতের্তে। এর পরের দিনই বেইজিং ঘোষণা দেয় যে, করোনার টিকার ক্ষেত্রে তারা ম্যানিলাকে অগ্রাধিকার দেবে।

আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকেও টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছেন চীনা নেতারা। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে মার্কিন বা ইউরোপীয় প্রভাবকে খর্ব করে বহুদিন ধরেই নিজের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে বেইজিং।

চীনা টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক করোনার টিকার শেষ ধাপের ট্রায়াল চালাচ্ছে ইন্দোনিশিয়ায়। দেশটির সরকারি প্রতিষ্ঠান পিটি বায়োফার্মার সঙ্গে যৌথভাবে পাঁচ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদন করবে সিনোভ্যাক। বেইজিংয়ের এই উদারতা বা ছাড় নিয়ে অবশ্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাকার্তার রাজনীতিবিদদের একাংশ। তাদের আশঙ্কা এর মাধ্যমে চীন হয়তো ইন্দোনেশিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করবে।

 ইন্দোনেশিয়ায় চীনের পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে গবেষণাকারী ইউনিভার্সিটাস ইসলাম ইন্দোনেশিয়ার শিক্ষক মুহাম্মদ জুলফিকার রাখমাত বলেন, ‘আমাদের কি সন্দেহবাদী হওয়া উচিত নাকি কৃতজ্ঞ? আমি মনে করি দুটোই।’


নিউ ইয়র্ক টাইমস থেকে সংক্ষেপিত


 

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়