টেক দুনিয়ায় নারীর এগিয়ে চলায় অনুপ্রেরণার নাম আজমিরী
তানজিনা ইভা || রাইজিংবিডি.কম
আজমিরী রহমান
দেশে অ্যাডটেক বা অ্যাডভারটাইজিং টেকনোলজি এখনও অনেকটাই নতুন একটি খাত। এই প্রযুক্তি নির্ভর ও ডেটাভিত্তিক জগতে নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত হলেও ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে আশাব্যঞ্জক উপস্থিতি। সেই অগ্রগামীদের একজন আজমিরী রহমান। তিনি বর্তমানে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘Eskimi’-তে বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। সম্প্রতি রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্ত আলাপে তিনি তুলে ধরেছেন নিজের ক্যারিয়ারযাত্রা, চ্যালেঞ্জ, প্রাপ্তি এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা। এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে অ্যাডটেক জগতে নারীদের সম্ভাবনা ও আত্মপ্রতিষ্ঠার বাস্তব অভিজ্ঞতা। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডি ডটকমের সাংবাদিক তানজিনা ইভা।
রাইজিংবিডি: প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি রাইজিংবিডিকে সময় দেওয়ার জন্য। আমরা শুনতে চাই আপনার শুরুর গল্প। কীভাবে অ্যাডটেক জগতে পা রাখলেন?
আজমিরী রহমান: ধন্যবাদ আপনাকেও। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে স্নাতক সম্পূর্ণ করে পরবর্তীতে মার্কেটিং বিষয়ে মাস্টার্স করেছি! আসলে আমার যাত্রা শুরু হয় ডিজিটাল মিডিয়া, কনজিউমার বিহেভিয়ার এবং ডেটা সম্পর্কে আগ্রহ থেকে। শুরুটা অন্য কিছু দিয়ে হলেও দ্রুত বুঝতে পারি—প্রোগ্রামেটিক অ্যাডভারটাইজিং শুধু নতুন নয়, বরং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশক। বর্তমানে আমি Eskimi-তে Business Development Manager হিসেবে কাজ করছি, যেখানে আমি ব্র্যান্ডকে ডেটা-ড্রিভেনভাবে মানুষের সাথে কানেক্ট করাতে সাহায্য করি।
রাইজিংবিডি: বাংলাদেশে অ্যাডটেক এখনও অনেকটাই নতুন এবং নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে কম। আপনি এই সেক্টরে কীভাবে অনুপ্রাণিত হলেন?
আজমিরী রহমান: সেটাই আসলে আমাকে চ্যালেঞ্জ নিতে উৎসাহিত করেছে। প্রতিটা নতুন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম কেউ না কেউ শুরু করে। অনেক সেক্টরে নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করলেও এই সেক্টরে তুলনামুকভাবে নারীর সংখ্যা কম! আমি সেই পথচলার বিশেষ অংশ হতে চেয়েছি! অ্যাডটেক হলো ডেটা, টেকনোলজি ও ক্রিয়েটিভিটির এক অসাধারণ মিশ্রণ। আর একজন নারী হিসেবে, আমার লক্ষ্য হচ্ছে দৃশ্যমানতা তৈরি করা—যাতে অন্য নারীরাও এই সেক্টরকে চিনতে ও এগিয়ে আসতে পারেন।
রাইজিংবিডি: আপনার একটি অর্জন নিয়ে কিছু বুলন, যা আপনাকে গর্বিত করেছে?
আজমিরী রহমান: আমি বিক্রয় ডট কমের মাদার কোম্পানি- Saltside Value Award 2021 Winner হিসেবে নির্বাচিত হই!এছাড়া সেলস টার্গেট অলওয়েজ সম্পূর্ণ ফুলফিল করার একটা প্রবণতা আমার ভেতর কাজ করে! তবে শুধু সংখ্যায় নয়, আমি সবচেয়ে গর্বিত ক্লায়েন্টদের সঙ্গে যেই বিশ্বাস ও পারফরম্যান্স তৈরি করেছি, তা নিয়ে। আমি স্থানীয় ব্র্যান্ডদের প্রোগ্রামেটিক মিডিয়ার গুরুত্ব বোঝাতে পেরেছি—এবং তাদের সফল ক্যাম্পেইন তৈরি করেছি।
রাইজিংবিডি: অ্যাডটেক সেক্টরে নারীরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়?
আজমিরী রহমান: প্রথমত, অনেকেই এখনো অ্যাডটেক সম্পর্কে জানেন না। দ্বিতীয়ত, একটি পুরুষ-প্রধান সেলস বা টেক ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা তৈরি করা সহজ নয়। আত্মবিশ্বাস, নেটওয়ার্কিং এবং স্কিল ডেভেলপমেন্ট—এই তিনটা খুব দরকার। সৌভাগ্যবশত, আমি এমন কিছু মেন্টর পেয়েছি যারা আমাকে গাইড করেছেন—পুরুষ ও নারী, উভয়ই।
রাইজিংবিডি: যারা অ্যাডটেক বা ডিজিটাল মিডিয়াতে ক্যারিয়ার গড়তে চায়, বিশেষ করে নারীদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
আজমিরী রহমান: আজ থেকেই শেখা শুরু করুন। অ্যাডটেকে আসার জন্য পারফেক্ট ব্যাকগ্রাউন্ড লাগবে না—আপনার আগ্রহই সবচেয়ে বড় শক্তি। Eskimi, Google Ads, কিংবা Trade Desk এর মতো প্ল্যাটফর্মে অনেক ফ্রি কোর্স আছে। আর ভয় পাবেন না—প্রশ্ন করুন, কানেক্ট করুন, নিজেকে তৈরি করুন।
রাইজিংবিডি: এই সেক্টরে কাজ করতে গিয়ে কখনো ‘জেন্ডার বাইয়াস’ অনুভব করেছেন কি?
আজমিরী রহমান: না তেমনটা কখনও মনে হয়নি।
রাইজিংবিডি: নারীদের জন্য আপনি কি কোনো মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম বা কমিউনিটি রিকমেন্ড করবেন, যেখানে তারা সহায়তা ও গাইড পেতে পারেন?
আজমিরী রহমান: মহিলা সংস্থা, বেসিস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইটিএম) এ বিভিন্ন কোর্স থাকে সেগুলো করে নিতে পারে। আবার ফ্রি স্কলারশিপও দেওয়া হয়। এখন অনলাইনের যুগ, ঘরে বসেই প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে আপডেট করা যায়। ডিজিটাল মার্কেটিং নারী-পুরুষ নেই, সময়ের সাথে নিজেকে আপডেট করতে হবে।
রাইজিংবিডি: আপনার পরবর্তী লক্ষ্য কী? আপনি নিজের ক্যারিয়ারে কী অর্জন করতে চান?
আজমিরী রহমান: সুন্দর প্রশ্ন। আমি এমন কিছু করতে চাই, যেখান থেকে শুধু আমি উপকার পাব এমন না। আমার এমন একটি পরিকল্পনা আছে, আমার নলেজ শেয়ার করতে চাই, বিশেষ করে মেয়েদেরকে। এই সেক্টরে মেয়েদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম। তাদের নিয়ে আমি কাজ করতে চাই।
ঢাকা/ইভা