ঢাকা     শুক্রবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ২৮ ১৪৩১

ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৭, ১০ এপ্রিল ২০২৪  
ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আবার এলো খুশির ঈদুল ফিতর। সাম্য-মৈত্রী-শান্তি আর মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সওগাত নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় এই খুশির ঈদ। এটি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ দিন হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যায় মানুষ। 

যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও ব্যাপক উৎসাহ, আনন্দ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সারাদেশে মুসলমানরা ১১ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) তাদের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা পবিত্র রমজানে পুরো এক মাস রোজা পালন করে এখন জামাতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।

ঈদুল ফিতর একই সঙ্গে উৎসব ও ইবাদতের আধ্যাত্মিক স্বাদ দিয়ে যায় প্রতিটি মুমিনের মনে। ধর্মীয় মূল্যবোধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলিত করে। ঈদের আনন্দ-চেতনার ছোঁয়া মানবিকতা জাগ্রত করে।

রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ঈদ জামাতের প্রস্তুতিও ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ব্যবস্থাপনায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল সাড়ে ৮টায়।

আবহাওয়া প্রতিকূল বা অন্য কোনও অনিবার্য কারণে এ জামাত অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সকাল ৯টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদের প্রধান জামাতে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ইমাম এবং বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান মোকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

বৈরি আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠানের সকল আয়োজন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকাবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তিনি সকলকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে ঈদের প্রধান জামাতে অংশগ্রহনের আহ্বান জানিয়েছেন। ঈদের প্রধান জামাতে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার আয়তনের মূল প্যান্ডেলে একসাথে এবার ৩৫ হাজার মুসল্লি একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন, জাতীয় ঈদগাহসহ রাজধানীতে নির্বিঘ্নে চলাচল ও সুষ্ঠুভাবে ঈদ জামাত অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ৫ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি, বিচারপতিগণ, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবর্গ, মুসলিম বিশ্বের কূটনীতিকবৃন্দ জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। ঈদগাহে মহিলাদের জন্যও আলাদা নামাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বুধবার থেকে ৩ দিনের সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। সরকারি, আধা-সরকারি ভবন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি ভবন ও সশস্ত্র বাহিনীর সকল স্থাপনাসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং জাতীয় পতাকা ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত ব্যানার মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ ট্রাফিক আইল্যান্ড ও লাইট পোস্টে প্রদর্শন করা হবে। আর চাঁদরাতেই সরকারি ভবনসমূহসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসমূহে আলোকসজ্জা করা হয়।

সারাদেশে বিভাগ বা জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং বেসরকারি সংস্থাসমূহের প্রধানগণ জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রনয়ণ করে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। এ ছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার ও বেসরকারি গণমাধ্যমসমূহ যথাযথ গুরুত্ব সহকারে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও সংবাদপত্রে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে।

ঈদ উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, ছোটমনি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয় কেন্দ্র, সেইফ হোমস, ভবঘুরে কল্যাণ কেন্দ্র, দুঃস্থ কল্যাণ ও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশন যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে সারাদেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সকল শিশু পার্কে প্রবেশ এবং বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ঈদের দিন সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের বিনা টিকিটে যাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, লালবাগের কেল্লা ইত্যাদি দর্শনীয় স্থান প্রবেশ এবং তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে ৫ জামাত

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এরপর পর্যায়ক্রমে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে শেষ ঈদ জামাত।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঈদের প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমাম হিসেবে থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মো. মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন ক্বারী মো. ইসহাক।

দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুফতি মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ মো. আতাউর রহমান।

তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইমরান বিন নূরউদ্দীন। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।

চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। ইমামতি করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মো. আবু ছালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. জসিম উদ্দিন।

পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল পৌনে ১১টায়। ইমামতি করবেন মিরপুর জামেয়া আরাবিয়া আশরাফিয়া ও এতিমখানার মুহতামিম মাওলানা সৈয়দ ওয়াহীদুজ্জামান। মুকাব্বির থাকবেন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম মো. রুহুল আমিন।

৫টি জামাতে কোনও ইমাম অনুপস্থিত থাকলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষাশিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ২৭০টি ঈদ জামাত

সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে ৫টি করে মোট ২৭০টি ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হবে। উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

অন্যান্য জামাতের খবর

জাতীয় সংসদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় পবিত্র ঈদ-উল ফিতরের জামাত সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ, হুইপবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ-সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ মুসল্লিরা এই জামাতে অংশ নেবেন। জামাত সবার জন্য উন্মুক্ত। জামাতে আগ্রহী মুসল্লিদের অংশগ্রহণের জন্য সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ মসজিদুল জামি’আয় পবিত্র ঈদুল ফিতরের দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায় এবং দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৯টায়।

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতের হিসেবে এটি হবে ঈদুল ফিতরের ১৯৭তম জামাত। জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদের জামাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। মাঠে একসঙ্গে তিন লাখেরও বেশি মুসল্লি জামাতে নামাজ আদায় করে থাকেন। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে বন্দুকের গুলির শব্দে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার সংকেত দেওয়া হয়। বিকল্প ইমাম হিসেবে থাকবেন বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।

ঈদ অর্থ

‘ঈদ’ শব্দটির আরবি শব্দমূল ‘আউদ’। এর অর্থ যা ফিরে ফিরে বারবার আসে। প্রচলিত অর্থে ঈদ মানে আনন্দ বা খুশি। যেহেতু এ আনন্দ বা খুশি বছর ঘুরে আসে, এ জন্য ‘ঈদ’ বলে নামকরণ করা হয়েছে। ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ ভেঙে দেওয়া, ইফতার করা। ঈদুল ফিতর মানে সে আনন্দঘন উৎসব, যা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে। 

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি

ঈদ মানে ঘরে ফেরার উৎসব। ঈদের সময় শহর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে যান স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। এবার সড়কপথ, নৌপথ কিংবা আকাশপথে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করছেন ঘরমুখো মানুষ। ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে নেই চিরচেনা যানজট। শপিং মল ও বাজার বাদে বেশিরভাগ জায়গায় নেই মানুষের জটলা। ঢাকা যেন অন্য এক ঢাকা। ‘ফাঁকা’ ঢাকায় শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ।

ঈদ আনন্দ আর ফুর্তির নয়

ঈদ শুধু নিছক আনন্দ আর ফুর্তির নয়; এ থেকে আমাদের জীবনের জন্য শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছুই। ঈদুল ফিতর মুসলমানদের ধর্মীয় ও জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দ উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। পবিত্র রমজানের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের শেষেই আসে খুশির ঈদ। পশ্চিমাকাশে উদিত শাওয়ালের রুপালি চাঁদ আনন্দের বারতায় উদ্বেলিত করে আমাদের মন ও প্রাণ। রোজাদারের মনে এর চেয়ে খুশি ওই মুহূর্তে আর কিছুই থাকে না। শাওয়ালের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটি মুমিন মুসলমানের ঘরে আনন্দের ঢল নামে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, 'প্রত্যেক জাতিরই আনন্দ রয়েছে। আমাদের আনন্দ হলো ঈদ।'

নামাজের আগে ফিতরা দেওয়া

ঈদের আগে প্রত্যেক মুসলমান নরনারী, শিশু, এমনকি সদ্য জন্ম লাভকারী শিশুর জন্যও নির্ধারিত ফিতরা আদায় করা জরুরি। যেহেতু ফিতরার টাকা দিয়ে দুস্থ-অসহায়রা ঈদ করেন, সেহেতু ঈদের কিছুদিন আগে এ টাকা আদায় করা সবচেয়ে উত্তম। ফিতরা দেওয়া কারও ওপর কোনো অনুগ্রহ নয়। এটি আমাদের জন্য ইবাদতের অংশ। যাদের মহান আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তারা আল্লাহর রাস্তায় ও গরিব-অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন, এতে তার ধন-সম্পদ কমবে না; বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

গান দেয় পূর্ণতা

পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল, বিশেষ করে বাংলাদেশে ঈদের একটি গান অত্যন্ত জনপ্রিয়। ঈদের আগের রাত থেকে টেলিভিশন, রেডিও থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের দোকান, মার্কেট সর্বত্র বাজতে শুরু করে, ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’। এই একটি গানই ঈদুল ফিতরের জানান দিতে যথেষ্ট।

কালজয়ী গানটি কবি নজরুলের 

ঈদুল ফিতর নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত 'ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ' কালজয়ী গানটি বাঙালি মুসলমানের ঈদ উৎসবের আবশ্যকীয় অংশ। কবির শিষ্য শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদ-এর অনুরোধে ১৯৩১ সালে কবি নজরুল এই গান রচনা ও সুরারোপ করেন। গানটি লেখার চার দিন পর শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের গলায় গানটি রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করার দুই মাস পরে ঈদের ঠিক আগে আগে এই রেকর্ড প্রকাশ করা হয়। গ্রামাফোন কোম্পানির রেকর্ড প্রকাশ করে।

সবার মুখে মুখে যে গান

ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

ঈদ আনন্দের সঙ্গে ইবাদতও

ইসলামের উৎসবগুলো আনন্দের সঙ্গে ইবাদত হিসেবেও পরিগণিত। তেমনি দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর বা ঈদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আনন্দকে বিলিয়ে দিতে বেশি করে দান-খয়রাত করা। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের (হোক সে শিশু) ওপর ফিতরা আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। আর ঈদুল ফিতর নামটির তাৎপর্যও এখানেই। আসলে প্রকৃত ঈদ ভোগে নয় ত্যাগে। ত্যাগের মহিমায় নিজেকে মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিতেই ঈদ এবং এ ত্যাগই রোজার শিক্ষা। ঈদের নামাজের মাঠে আগমনকারীদের উদ্দেশে আল্লাহ বলেন, ‘বাড়ি যাও আমি তোমাদের মাফ করে দিলাম’।

ঈদের বাণী

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তারা শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করেছেন।

ঈদ মোবারক

হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে নিজের জন্য, দেশের ও বিশ্ব মুসলিমের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জীবনের সব স্তরে রমজানের শিক্ষা বাস্তবায়ন করি। ঈদের চেতনায় মানবিকতাকে জাগ্রত করে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিই সবার সঙ্গে ভেদাভেদহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়