পদ্মা সেতু খুলে দিলে মাদারীপুরে শিল্প বিপ্লব হবে
বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম
![পদ্মা সেতু খুলে দিলে মাদারীপুরে শিল্প বিপ্লব হবে পদ্মা সেতু খুলে দিলে মাদারীপুরে শিল্প বিপ্লব হবে](https://cdn.risingbd.com/media/imgAll/2022March/Untitled-1-2206090443.jpg)
মাদারীপুরের মহিষেরচরে অবস্থিত বিসিক শিল্পনগরী
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের পদ্মা সেতু ২৫ জুন উদ্বোধন করা হবে। এই সেতুকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে আনন্দে চলছে। বিশেষ করে এই সেতু উদ্বোধনের পর মাদারীপুর তথা গোটা দক্ষিণাঞ্চলে শিল্প বিপ্লব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের সংযোগ সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। মূল অংশের পিচ ঢালাই কাজও শেষ। আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সেতুর উদ্বোধন করবেন। পদ্মা সেতু চালুর মধ্যদিয়ে পুরো অঞ্চলের চেহারা বদলে যাবে। অর্থনীতি ও সামাজিক ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
ইতোমধ্যে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রচুর সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। সেতুকে ঘিরে পদ্মা পাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকার মানও পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে। হাতে নেওয়া হয়েছে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প। এতে আশান্বিত সাধারণ মানুষ।
মাদারীপুরে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্যে সরকারের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার একর জমি। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে কাজ দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। এছাড়া বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন কলকারখানা গড়ে তোলার জন্য জমি ক্রয় করছে বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিবচরের কুতুবপুরে ৭০ একর জায়াগায় দেশের প্রথম ইনফরমেশন টেকনোলজি ইনস্টিটিউট ও হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের চিঠি দিয়েছে মন্ত্রণালয়। একই ইউনিয়নে ১০৮ একর জমিতে বেনারসি পল্লী নির্মাণের কাজ চলছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নির্মাণের জন্য ১৫ একর জমি অধিগ্রহণ শেষে কাজ চলমান রয়েছে। পরিকল্পিত শহরায়নের জন্য ৭৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে শিবচরে।
এখানে দাদাভাই উপশহর নামে পরিকল্পিত শহরায়নের কাজ প্রায় শেষ পর্যায় রয়েছে। চরাঞ্চলের চরজানাজাতে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের প্রস্তাবনাও রয়েছে।
রাজধানী ঢাকা এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রী ও পণ্য পরিবহণ নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক করার লক্ষ্যে বাংলাদশে সরকাররে নিজস্ব র্অথায়নে সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে সড়ক ব্যবহার করে মেট্রোরেল নির্মাণের পরকিল্পনার রয়েছে সরকারের। এছাড়া মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায় ইকোনোমিক জোন নির্মাণে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজও চলমান রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত এলাকা ঘিরে উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান করতে যাচ্ছে সরকার। যার মনিটরিং করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। মাস্টারপ্ল্যানে থাকছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটন স্থাপনা, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ণ, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতে উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাভিত্তিক কার্যক্রম।
মাদারীপুরের ব্যবসায়ী জালাল মাহমুদ বলেন, ‘বেসরকারি উদ্যেগে বিভিন্ন কলকারখানা নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে। এই অঞ্চলে কর্মসংস্থান বাড়বে। কমবে বেকারত্ব। অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখছে এসব প্রকল্প ঘিরে। তবে আমাদের এই অঞ্চলে গ্যাসের সংযোগ নেই। গ্যাসের সংযোগ না থাকলে কলকারখানা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। তাই সরকারের কাছে আমাদের দাবি উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে যেন গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করে।’
সাবেক সিভিল সার্জন ডা. গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘আগে রোগী নিয়ে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ফেরিঘাটে বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। এখন সেই বিড়ম্বনা থাকবে না। তাই আমরা খুশি।’
মাদারীপুর বিসিক শিল্প নগরীর সহকারী মহা ব্যবস্থাপক নাজমুল হক বলেন, ‘পদ্মা সেতুকে ঘিরে চলমান প্রকল্পগুলো সম্পন্ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক চিত্র বদলে যাবে। এখানে গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানা। বাড়বে কর্মসংস্থান। বাড়বে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্র।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাদারীপুরে দুইটি বিসিক রয়েছে। আরও দুটি বিসিক শিল্প নগরী গড়ে তোলার প্রস্তবনা রয়েছে। সে মোতাবেক কাজ চলছে।’
মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড.রহিমা খাতুন বলেন, ‘পদ্মা সেতু খুলে দিলে এই অঞ্চলের ব্যপক উন্নয়ন হবে। তাঁত শিল্প টিকিয়ে রাখতে গড়ে তোলা হবে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী। এছাড়াও একটি ইকোনোকি অঞ্চল গড়ে তোলার প্রস্তাবনা দেওয়া আছে। সব কিছু ঠিক থাকলে মাদারীপুরে শিল্প বিপ্লব হবে বলেই আশা করি।’
মাসুদ
আরো পড়ুন