‘দ্বিতীয় ধাপে কমেছে করোনা সংক্রমণ’
করোনা মহামারির দ্বিতীয় ধাপে প্রতিদিন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, মারা যাচ্ছেন। শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত সারা দেশে করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪০৭ জন। মোট মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ৯৪ জন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রথম ধাপের চেয়ে দ্বিতীয় ধাপে করোনায় আক্রান্তের প্রকোপ কম। আর চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আগের তুলনায় এখন রোগীর সংখ্যা কমেছে। ভুক্তভোগীরা জানান, শরীরে করোনার লক্ষণ দেখা না দিলে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতাল যাচ্ছেন না তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের উপ-পরিচালক ডা. মো. খালেকুজ্জামান বলেন, করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যালের পুরনো বার্ন ও প্লাস্টিক ইউনিটের পুরোটাই করোনা ইউনিট করা হয়েছে। এছাড়াও করোনা রোগী ছাড়া মেডিসিন বিভাগে কোনো রোগীকে ভর্তি না করানোর নির্দেশও রয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।
উপ-পরিচালক বলেন, প্রতিদিন ল্যাবে করোনা টেস্ট করা হয় ৯৪ থেকে ১৮৮ জনের। এক সঙ্গে একবার মেশিনে ৯৪ জনের স্যাম্পল তোলা হয়। আগের তুলনায় এখন রোগীর সংখ্যা কমেছে। তবে হঠাৎ রোগীর সংখ্যা বাড়লে দিনে ২৮২ জনের টেস্টও করা হয় বলে জানান ঢাকা মেডিক্যালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আফরোজা আকবর সুইটি।
এদিকে, ল্যাব এইডের সব শাখায় গড়ে প্রতিদিন করোনা টেস্ট করা হয় ৩৫০-৪০০ জনের। গত ডিসেম্বরে করোনা রোগীর টেস্ট করা হয়েছে ১২ হাজারেরও বেশি বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক ল্যাব এইডের একজন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘করোনা টেস্টের জন্য ল্যাব এইডে জন প্রতি নেওয়া হয় ৩ হাজার ৮০০ টাকা (৩,৫০০ টেস্ট চার্জ+৩০০ কালেকশন বাবদ)। কারো বাসায় গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করলে ৪ হাজার ৫০০ টাকা, বিদেশগামীদের জন্য ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়।’ ল্যাব এইড হাসপাতালের জিএম (সেলস) ইফতেখার আহমেদ বলেন, ল্যাব এইড হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য বেড আছে ৩৭টি। গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ২২-২৫ জন।
মডার্ন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. সানজানা বলেন, এখানে (আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল) ৭৮টি করোনা বেডের মধ্যে গড়ে ৬০-৭০ জন রোগী ভর্তি আছেন। বর্তমানে করোনা রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। করোনা টেস্টের চার্জ নেওয়া হয় জনপ্রতি ৩ হাজার ৫০০ টাকা। বাসায় গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করলে ৪ হাজার ৫০০ আর বিদেশগামীদের জন্য ৩ হাজার টাকা নেওয়া হয়।
বিআরবি হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মুহাম্মদ মুতাসীম বিল্লাহ বলেন, এই হাসপাতালে (বিআরবি হাসপাতাল) করোনা রোগীদের জন্য চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে এখানে গড়ে ২০ জন রোগীর করোনা টেস্ট করা হয়। চার্জ নেওয়া হয় ৪ হাজার টাকা (৩ হাজার ৫০০+কালেকশন বাবদ ৫০০)। হোম সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই। বিদেশগামীদের জন্য ৩ হাজার টাকা। ডেঙ্গু রোগীর টেস্ট খুব কম হয়।
স্কয়ার হাসপাতালের কাস্টমার কেয়ার ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, স্কয়ার হাসপাতালের করোনা রোগীদের বেড রয়েছে ১০০টি। গড়ে রোগী থাকে ৬০-৭০ জন। করোনা টেস্টের চার্জ নেওয়া হয় জনপ্রতি ৩ হাজার ৫৫০ টাকা। বাসায় গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করলে ৪ হাজার ৫০০ আর বিদেশগামীদের জন্য ৩ হাজার ৫০ টাকা। ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা খুবই কম।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে জানা গেছে, করোনার কারণে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা কমে গেছে। করোনার লক্ষণ দেখা না গেলে ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতাল যাচ্ছেন না অনেকেই। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, করোনা ছাড়া অন্য কোনো রোগ নিয়ে তারা তেমন ভাবছেন না। এখন তারা বেশি টেনশন করছেন করোনা নিয়ে। কোনো দুর্ঘটনা বা হঠাৎ শরীর বেশি খারাপ না হলে তারা ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
ধানমন্ডির রেনেসাঁ হাসপাতালের ম্যানেজার (মার্কেটিং) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, করোনা রোগীদের টেস্ট বা চিকিৎসা না হলেও ডেঙ্গু রোগীদের টেস্ট এবং চিকিৎসা দুটোই হয় এই হাসপাতালে। গত বছরে ডেঙ্গুর সময় ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা আমরা দিয়েছি। এ বছর সেই তুলনায় ডেঙ্গু রোগী নেই।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. মনজুর রহমার (গালিব) বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয় এপ্রিল থেকে। কিন্তু ডেঙ্গুর পিক সিজন হচ্ছে আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই দুই মাস। অথচ সেই সময়টা মানুষজন করোনা নিয়ে এতটাই আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন, ডেঙ্গুকে তারা আমলেই আনেননি। ফলে গত কয়েক মাসে তেমন করে ডেঙ্গু রোগীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
বক্ষব্যধি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এফ.এম. সিদ্দিকী বলেন, শীতের সময় মানুষ বেশি আক্রান্ত হয় সর্দি, কাশি, ঠান্ডা, অ্যালার্জি এবং শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমায়। অথচ শীতের মাঝামাঝি সময় চলছে এখন। তারপরও এসব রোগের লক্ষণ নিয়ে তেমন রোগীদের হাসপাতালে আসতে দেখা যাচ্ছে না। হয়তো করোনার ভয়ে এসব রোগকে পাত্তা দিচ্ছেন না। আবার শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার সমস্যা নিয়ে যারাই আসছেন, তাদের বেশিরভাগই করোনা পজিটিভ আসছে।
মেসবাহ/সাইফ
আরো পড়ুন