ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

বিএনপির ভোটারদের দিকে তাকিয়ে বরিশালের মেয়র প্রার্থীরা

জে. খান স্বপন, বরিশাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৩, ৯ জুন ২০২৩  
বিএনপির ভোটারদের দিকে তাকিয়ে বরিশালের মেয়র প্রার্থীরা

চাঁদমারি বঙ্গবন্ধু কলোনিতে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর পরিদর্শনে যান আ.লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত

দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত কোনো সিটি করপোরেশন নির্বাচনেই অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না তারা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এই সিটি নির্বাচনে দেশের অন্যতম বড় বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভোট কোন প্রার্থীদের দিকে যাবে। কেননা বরিশালের প্রায় সব নির্বাচনেই এই দলটির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। 

বরিলাশ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ, জাতীয় পাটি ও ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থীরা এই দলটির ভোটারদের দিকে তাকিয়ে আছেন। এমনকি বিএনপি থেকে সদ্য বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপমও বিএনপির ভোট প্রত্যাশা করছেন।

সূত্র মতে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট প্রদান পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে, মাত্র ৫৮ বর্গ কিলোমিটারের এলাকাটি বিএনপি’র ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ২০০৩ সাল থেকেই প্রতিটি নির্বাচনে বিএনপি এখানে প্রভাব বিস্তার করে আসছে।

ভোট পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০৩ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে বিএনপির মজিবুর রহমান সরোয়ার ৪২ হাজার ৬২১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগের এনায়েত পীর পেয়েছিলেন ৩২ হাজার ২৬৫ ভোট। শুধু তাই নয়, ওই নির্বাচনে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল পেয়েছিলেন ২০ হাজার ২৪৮ ভোট। এবাদুর রহমান চাঁন পেয়েছিলেন ১৩ হাজার ৮৫৬ ভোট। বিএনপির তিন নেতার প্রাপ্ত সম্মিলিত ভোট ছিল ৭৬ হাজার ৭২৫। ফলে আওয়ামী লীগের দ্বিগুণেরও বেশি ভোট দেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। 

২০০৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত শওকত হোসেন হিরণ মাত্র ৫৮৪ ভোটের ব্যবধানে বিজীয় হন। তিনি পেয়েছিলেন ৪৬ হাজার ৭৯৬ ভোট। কিন্তু ওই নির্বাচনে বিএনপি’র তিন প্রার্থী (সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, আহসান হাবিব কামাল ও এবাদুর রহমান চান) পান ৯২ হাজার ২৫৪ ভোট। 

২০১৩ বরিশাল এই সিটি করপোরেশনে মেয়র বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আহসান হাবিব কামাল ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শওকত হোসেন হিরণ পেয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৭৪১ ভোট। সর্বশেষ, ২০১৮ সালে নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ১ লাখ ৯ হাজার ৮০৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন। ওই নির্বাচনে বিএনপি’র মজিবুর রহমান সরোয়ার পেয়েছিলেন ১৩ হাজার ৪১ ভোট। এই নির্বাচনকে এক পক্ষের জাল ভোটের নির্বাচন বলে দাবি করেছিল বিএনপি।

চাঁদমারি বঙ্গবন্ধু কলোনিতে আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘর পরিদর্শনে মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম

সবমিলিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন বিএনপি’র ভোট ব্যাংক বলে পরিচিতি লাভ করেছে। তাই আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের পঞ্চম পরিষদের নির্বাচনে বিএনপি’র পক্ষ থেকে মেয়র পদে নির্বাচনে কেউ অংশ না নেওয়ায় নেতাকর্মীদের ভোট কার পক্ষে যাবে তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। 

বরিশাল মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মীর জাহিদুল কবির বলেন, ‘এই সরকারে অধীনে বিএনপি কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী দেওয়া হয়নি। এমনকি বিএনপির নেতাকর্মী হয়ে যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। সেখানে ভোট চুরির বক্স নামের পরিচিত ইভিএম-এ ভোট দিতে বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কেন্দ্রে যাবে না।’

এদিকে, বিএনপি থেকে ভোটে অংশ বা ভোট দিতে না যাওয়ার এমন সিদ্ধান্ত হলেও ব্যক্তি পছন্দের কাউন্সিলর প্রার্থীর জন্য ভোট কেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট দেবেন এমন ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সংখ্যা অনেক। নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি কর্মী মো. আবু তাহের মিয়া জানান, কেন্দ্র থেকে নির্দেশ রয়েছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্রে যাবে না। কিন্তু আমারতো নিজ ওয়ার্ডের উন্নয়নের দিক বিবেচনা করে স্থানীয় কাউন্সিলর পদে একজন ভালো মানুষকে ভোট দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে এবার ইভিএম-এ ভোট দিতে গেলে তিনটি (মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর) পদে ভোট দিতে হবে। তাই ভোট যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য নিজের পছন্দে কাউন্সিলর প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আসবো। বাকি দুটি ভোট ইচ্ছা মতো যাকে ইচ্ছা তাকে দেব।  

বরিশাল নগরীর আমতলা মোটে গণসংযোগ করেন জাপা প্রার্থী তাপস

আবু তাহেরর মতো নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি কর্মী সুরুজ মোল্লা, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি কর্মী আনোয়ার হোসেন, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি কর্মী আবু বক্কর এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি কর্মী মো. সাইফুল ইসলামসহ অসংখ্য বিএনপি কর্মীরও একই মন্তব্য। তবে এসব কর্মীদের ভোট কোনো মেয়র প্রার্থীর পক্ষে পড়তে পারে তা তারা নিজেরাও নিশ্চিত নন।  

বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও প্রয়াত বিএনপি নেতা মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপম শতভাগ বিএনপি’র ভোট পাবেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, আমি ও আমার পরিবার জাতীয়তাবাদী আদর্শের সৈনিক। আমার বাবা বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে মেয়র হয়েছিলেন। তাই বিনএপি নেতা কর্মীরা কেন্দ্রে গেলে অবশ্যই আমাকে টেবিল ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। 

বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রে যাবেন এবং হাত পাখার পক্ষেই ভোট দেবেন এমনটাই আশা করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর বরিশাল সিটি নির্বাচনে মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির মতো ইসলামী আন্দোলনও সংগ্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই যুক্তিতে তারা (বিএনপি কর্মী-সমর্থক) আমাকে ভোট দেবেন। কারণ তাদের কোনো প্রার্থী নেই, তারা নৌকায় কখনই ভোট দেবে না। তাই তারা অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাকে ভোট দেবেন। 

জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। কিন্তু তাদের অনেক ভোট রয়েছে।  ওই দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জাতীয় পার্টিকে ভোট দেবেন এটাই আমার আশা। কারণ জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে কোন দুনীতি, সন্ত্রাস নেই। তাই আমরা বিএনপি ভোটাদের ভোট আশা করতেই পারি। 

এদিকে বিএনপি’র ভোট নৌকায়ই পড়বে দাবি করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, বরিশালের উন্নয়নের জন্য হলেও বিএনপি আমাকে ভোট দেবে। কারণ আমি নির্বাচিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীতায় বরিশালকে আরো ঢেলে সাজাবো। নিজ এলাকার উন্নয়ন সবাই চাই। এই বিশ্বাস থেকে বিএনপির ভোটাররা অবশ্যই আমাকে ভোট দেবেন।’

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়