ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

কবে ফিরবো ক্যাম্পাসে

হাবিবুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৯, ৫ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
কবে ফিরবো ক্যাম্পাসে

বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা। যেখানে প্রতিনিয়ত লালিত হয় হাজারো ক্যাম্পাসিয়ানদের স্বপ্ন। আর মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি আনন্দময় মুহূর্ত হলো ক্যাম্পাসে কাটানো মুহূর্তগুলো। এই অবাধ স্বাধীনতাময় ক্যাম্পাস জীবনের আড্ডা থেকে অর্জন করা যায় অনেক কিছু।

কিন্তু বিশ্বব্যাপী চলছে করোনার মহা আতঙ্ক। ফলে, ক্যাম্পাসিয়ানরা আজ গৃহবন্দি দিনযাপন করছে। আজ এই গৃহবন্দীতেও তারা প্রতিনিয়ত চিরচেনা স্ব-স্ব ক্যাম্পাসকে মিস করছে। কয়েকজন ক্যাম্পাসিয়ানের অনুভূতি তুলে ধরেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান।

এবিএস ফরহাদ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

পঞ্চাশ একরের ভালোবাসা। লালমাটি আর সবুজ অরণ্যের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে ছোট বড় বেশ কয়টি ভবন। নীল আকাশ থেকে পাখির চোখে দেখলে মনে হবে সবুজের মাঝে সাদা বক দাঁড়িয়ে আছে  কয়েকটা। নেই চোখে পড়ার মতো বড়সড় অবকাঠামো। তবু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন ঢেলে সাজিয়েছে ক্যাম্পাসকে। মাত্র ৫০ একরের ছোট্ট একটি ক্যাম্পাস, এটা যেন লালমাটির সবুজ রাজ্য। পুরোটাজুড়ে আমার ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় পরিপূর্ণ।

প্রথম দেখায় প্রেমে পড়েছিলাম। মনে হয়েছে বড় অট্টালিকা নয় বাবুই পাখির মতো কুঁড়েঘরটিই আমার জন্য। তারপরে শুরু হয় পথচলা। লাল, নীল বাসের সাথে প্রেম। আর এই প্রেমের রসদ জোগায় কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ এবং পরিপূর্ণতা দেয় কাঁঠাল তলা, বাবুই চত্বর, মুক্তমঞ্চ, সানসেট ভ্যালি, শহীদ মিনার আর অপরূপ সৌন্দর্যের আপন মহিমা। ছোট কুড়েঁঘরেও সৃষ্টি হয় হাজারো স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখায় নতুন পৃথিবী গড়ার।

লালমাটির ক্যাম্পাস ছেড়েছি বহুদিন। ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, টার্ম পেপার, স্যার-ম্যামদের বকুনি থেকে ছুটি চেয়েছিলাম। কিন্তু করোনা সেই ছুটিকে করে তুলেছে বিরক্তিকর। ৫০ একরের ভালোবাসা ছেড়ে এতদূরে থাকতে থাকতে যেন দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এ বুঝি শেষ হয়ে যাচ্ছি। এর ধুলোবালি আমাকে আপন করে নিয়েছে, সেখান থেকে দূরে থাকতে না পারাটাই স্বাভাবিক।

লালমাটির ক্যাম্পাসে ফিরলে ফিরে পাব নিঃশ্বাস। এই গন্তব্যহীন ছুটির পরিসমাপ্তি ঘটুক, হারিয়ে যেতে চাই লালমাটির সবুজ অরণ্যে। তত দিন ভালোবাসায় পূর্ণ থাকুক পঞ্চাশ একরের ভালোবাসার কুঁড়েঘর।

শফিকুর রহমান শাকিল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

করোনা আন্তর্জাতিক বিপর্যয়।  করোনার কারণে গোটা পৃথিবী থমকে গেছে। প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে সংক্রমণও। করোনার কারণে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এই অবস্থার অবসান কবে হবে তা কেউই জানে না। দীর্ঘ দিন ধরে ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকায় আর দশজনের মতো আমিও মোটে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছি না।

শাটল, ঝুপড়ি, ডিপার্টমেন্ট, খেলার মাঠ সবকিছুই মিস করছি। মিস করছি প্রাণপ্রিয় বন্ধু-বান্ধবদের, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের। মনে হচ্ছে যেন অনেক বছর ক্যাম্পাসে যাই না। আগে যে টাইমে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতাম, মাঠে খেলতে যেতাম; সেই টাইমে এখন ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। পড়াশোনারও অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেলো। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় চলে যাচ্ছে। এই সময় তো আর ফিরে পাবো না। ক্যাম্পাস জীবনের কটা দিনই বা আর পাবো! করোনা সবকিছু ওলটপালট করে দিলো! পৃথিবী কখন সুস্থ হবে এই প্রতীক্ষায় রইলাম।

ইমরান হুসাইন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

গ্রীষ্মকালে যখন চারদিকে প্রচুর রৌদ্রতাপ বিরাজ করে, তখন প্রত্যেকে এক পশলা বৃষ্টির আশা করে। যেনো প্রকৃতি আবার তার নিজের সতেজ রূপ ফিরে পায়। কিন্তু তাই বলে এটা নয় যে এক পশলা বৃষ্টির পরিবর্তে সেই বৃষ্টিই কালরূপ ধারণ করে প্রকৃতিকে ভাসিয়ে দেবে। তেমনি ছাত্রজীবনে পড়াশোনা, ক্যাম্পাস, টিউশন ও আড্ডাবাজির মধ্যে ২-৪ দিনের ছুটি পাওয়া মানেই প্রিয়জনদের কাছে ছুটে যাওয়া। ঠিক সেভাবেই বাড়িতে এসেছিলাম। সাথে সাথেই দেশে আঘাত হানলো করোনার ভয়াল থাবা। সবাইকে সুরক্ষা ও নিরাপদ রাখার জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ হলো ১৫ দিনের জন্য। কিন্ত সেই ১৫ দিন রূপান্তরিত হয়েছে ৪ মাস।

প্রতিদিনেই বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা, সাথে মৃত্যুর মিছিল। চিরচেনা সেই বিদ্যাপীঠ আর ভালোবাসায় রাঙানো কাছের মানুষগুলোকে দেখি না অনেক দিন। কিন্তু আজ ঘরে বসে এই সোনালী অতীত মনে করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই আমাদের। প্রতিক্ষণেই একটা ভয় হৃদয়কে কুড়ে খায়। প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে আবার সবাইকে পাবো কি-না! আবার সেই রঙিন, উৎসব মুখর দিন ফিরে পাবো কি-না। বাড়িতে এইভাবে আর কত দিন থাকা যায়।

পরিবারের ছোটখাটো কাজ, আর সময় কাটানোর জন্য একটু বই পড়া, ফেসবুক। তবুও সুদিনের অপেক্ষায় দিন গুনছি। এই কামনা করি সারাক্ষণ, পৃথিবী দ্রুত সুস্থ হোক। সবাই ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক।

জাফরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রিয় ক্যাম্পাস বিচ্ছেদের আজ ১২৩তম দিন। এইরকম দীর্ঘসময় প্রিয় ঢাবি ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান আর কখনও হয়নি। অবশ্য কি আর করার, বাস্তবতা মেনে নিতেই হবে। তাই বলে প্রিয় ক্যাম্পাসের স্মৃতি মনে পড়বে না, তা কি হয়? অনেক স্মৃতিই এখনও চোখে জ্বল জ্বল করে ভাসছে।

প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠে হল থেকে দৌঁড়ে গিয়ে ক্লাসে উপস্থিত হওয়া, ক্লাসের ফাঁকে বন্ধুদের নিয়ে ঐতিহাসিক বটতলায় বসে আড্ডা দেওয়া, বাদামওয়ালা মামাদের থেকে বাদাম কিনে বন্ধুরা মিলে শেয়ার করে আড্ডা দিতে দিতে খাওয়া, কখনও বা অপরাজেয় বাংলায় বসে ছবি ওঠানো, মাঝে মাঝে ডাকসু ক্যাফেটেরিয়াতে গিয়ে এক টাকার চা খেতে খেতে গ্রুপ স্টাডি করা, সমাজ বিজ্ঞান চত্ত্বরের গোল পুকুরের পাড়ে বসে বন্ধুদের নিয়ে খুনসুটিতে মেতে ওঠা, বিকালে টিএসসির সবুজ ঘাসে বসে দলবদ্ধ গান করা, কখনও বা কার্জন হলে দলবদ্ধভাবে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় মেতে ওঠা, প্রেম চত্বরে বসে বন্ধুদের প্রেমের মজার মজার গল্প শোনা, কতই না স্মৃতি বুকে গেঁথে বসেছে।

লেখক: শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ (২য় বর্ষ), কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।

কুবি/শরীফ/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়