ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শেকৃবির নতুন উপাচার্য: যেভাবে দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা 

ফরহাদ আলম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০  
শেকৃবির নতুন উপাচার্য: যেভাবে দেখছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা 

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য, উপ-উপাচার্য এবং কোষাধ্যক্ষের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দীর্ঘ এক মাস যাবৎ অভিভাবকহীন প্রশাসন। ফলে, ভোগান্তির শিকার হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম। গত রোববার (২০ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব নীলিমা আফরোজ স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়।

রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়ায় শেকৃবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সেই প্রতিক্রিয়াগুলো সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফরহাদ আলম। 

শেকৃবি বাঁধন ইউনিটের সভাপতি নিলয় জামান বলেন, শুধু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকই উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কারণ, তারা আমাদের পড়ান, আমাদের সুবিধা-অসুবিধা সবকিছুতেই পাশে থাকেন। আশা করছি অতিদ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ্য নেতৃত্বসম্পন্ন একজন অধ্যাপককে আমরা উপাচার্য হিসেবে দেখতে পাবো। বাকি শূন্য পদগুলোতেও আশানুরূপ যোগ্য কাউকে পাবো।

শেকৃবি ছাত্রলীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ছাব্বির হোসেন বলেন, সাংগঠনিকভাবেই বলা আছে, উপাচার্যের অবর্তমানে রেজিস্ট্রার উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে। আবার যেহেতু গেজেট হয়েছে এটা মেনে নিতেই হবে। যোগ্যতার তুলনায় কম ফলাফল কিংবা কারও আত্মীয়কে যদি বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে মেনে নিতে কারও আপত্তি না থাকে, তবে এ জায়গায় আপত্তি কোথায়?  উপাচার্য যেহেতু মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন, সেহেতু তিনি যা করবেন তাই। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতি সাধনে সর্বাত্মক ভূমিকা রাখবে এমন কোনো অধ্যাপককে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই।

শেকৃবি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, একটি টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের পদ দেওয়াটা দুঃখজনক। উনাকে রুটিন ওয়ার্ক পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজ ভালো চলবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত, তাই বয়োজ্যেষ্ঠ কোনো অভিজ্ঞ শিক্ষককে নিয়োগ দিলে ভালো হতো।’

শেকৃবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাকিব খান বলেন, রেজিস্ট্রারকে উপাচার্যের রুটিন দায়িত্ব দেওয়ার এমন নজির ইতিপূর্বে দেশের আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখিনি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রতিবাদের ঝড় উঠছে। এতে বিব্রতবোধ করছেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শেকৃবির সিনিয়র কোনো শিক্ষককে তীব্র প্রতিবাদ ব্যক্ত করতে দেখিনি। উপাচার্য বিহীন একটি বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই ভালোভাবে পরিচালিত হতে পারে না। তাই কালক্ষেপণ না করে কর্তৃপক্ষের উচিৎ শীঘ্রই যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া। শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা তাকেই চাই, যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন। এবার এমন প্রশাসন আসুক, যাদের মাধ্যমে আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন ঘটবে।

শেকৃবি ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম মাসুদুর রহমান মিঠু বলেন, মূলত উপাচার্য পদে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো যোগ্য শিক্ষক থাকে। কিন্তু বর্তমানে তিনি সীমিত সময়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকেই দায়িত্ব পেয়েছেন, আপাততঃ সেটাই মেনে নিতে হবে। তবে আশা করি যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের উন্নয়নে কাজ করবে এমন উপাচার্য আশা করি।

শেকৃবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে সাংবাদিকদের জানান, রুটিন ভিসি শুধু বেতনের জন্য সাইন করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। তারপর রেজিস্ট্রারকে এ রকম দায়িত্ব প্রদান করায় শিক্ষকরাও বিব্রত। সংকট নিরসনে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ তিনটি পদে স্থায়ীভাবে (চার বছর মেয়াদে) নিয়োগ প্রদান করা জরুরি। 

এ সময় তারা আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলা রক্ষার্থে শেকৃবিতে কর্মরতদের মধ্য থেকে এসব পদে নিয়োগ দেওয়া উচিৎ। 

রুটিন ভিসি ও রেজিস্ট্রার শেখ রেজাউল করিম বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, বেতন ভাতার কাগজে সাইন করা ও দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নিতে আমাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। কোনো নীতিমালা প্রণয়ন আমার কাজ না।

শেকৃবি/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়